খুলে দেয়া হলো আয়া সোফিয়া

খুলে দেয়া হলো আয়া সোফিয়া

তুরস্কের ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক আয়া সোফিয়া মসজিদ

 

পবিত্র জুমার নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে ৮৬ বছর পর ২৪ জুলাই শুক্রবার আবার মসজিদ হিসেবে যাত্রা শুরু করল তুরস্কের ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক আয়া সোফিয়া। এ দিন সকাল থেকেই আয়া সোফিয়া অভিমুখে মানুষের ঢল নামে। ঐতিহাসিক এই মসজিদের বাইরে ও রাস্তায় হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান আদায় করেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে এ মসজিদে নামাজের জায়গা পেতে রাতেই মানুষের জমায়েতের ছবি ভাইরাল হয়। ১৯৩৪ সালের পর এই প্রথম আয়া সোফিয়ায় নামাজ  আদায় করা হলো। কামাল আতাতুর্কের শাসনামলে একটি ডিক্রীর মাধ্যমে ঐতিহাসিক এই মসজিদটি জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়। প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরনো এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি  ইউনেস্কোর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসাবে স্বীকৃত। তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েব এরদোগান বলেছেন, মসজিদ হিসাবে আয়া সোফিয়া নতুন করে যাত্রা শুরু করলেও এটি সকল ধর্মাবলম্বীদের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, জুমার নমাজের আগেই মসজিদটিতে উপস্থিত হন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েব এরদোগান। মসজিদে প্রবেশ করে তিনি পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করেন। এ সময় তিনি সূরা আল ফাতিহা ও সূরা আল-বাকারা থেকে কয়েকটি আয়াত তিলাওয়াত করেন। এরপর মসজিদের চারটি মিনার থেকে চারজন মুয়াজ্জিন আজান দেন। পরে উপস্থিত লোকেরা জুমার নামাজ  শুরু করেন।

দেশী-বিদেশী পর্যটকদের জন্য তুরস্কের সর্বাধিক দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে আয়া সোফিয়া অন্যতম। ১৯৮৫ সালে জাদুঘর হিসেবে স্থাপনাটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, নামাজ আদায় উপলক্ষে শুক্রবার আয়া সোফিয়ায় অনেকেই ভিড় জমান। ইস্তাম্বুলের গভর্নর আলী ইয়েলিকায়ায় বৃহস্পতিবার স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘জুমার সালাত আদায়ে সবাই বেশ রোমাঞ্চিত।

ইস্তাম্বুলে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি টানা ৯১৬ বছর চার্চ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে ১৪৫৩ সালে ওসমানি সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মাদ বাইজেন্টাইন সম্রাটের দখল থেকে কনস্টান্টিনোপল বা বর্তমান ইস্তাম্বুল জয় করে নেয়ার পর খ্রিষ্টান যাজকদের থেকে নিজস্ব অর্থে স্থাপনাটি কিনে নেন এবং মসজিদ হিসেবে এটিকে ওয়াকফ করেন। তখন থেকে প্রায় পাঁচ শ’ বছর ধরে মসজিদ হিসেবেই পরিচিত ছিল এটি। এরপর ১৯৩৫ সালে ধর্মনিরপেক্ষ তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা কামাল পাশা এটিকে জাদুঘর ঘোষণা করেন। সেই থেকে ৮৬ বছর ধরে এটি জাদুঘর হিসেবে পরিচিত ছিল।

শুক্রবার আয়া সোফিয়ার ভেতরে প্রায় এক হাজার মানুষ নামাজ আদায় করেন। আয়া সোফিয়ার বাইরে আরো অনেক মানুষকে মাদুর পেতে নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে। গত ১০ জুলাই তুর্কি আদালতের রায়ে ১৯৩৪ সালের তৎকালীন মন্ত্রী পরিষদের জাদুঘরে রূপান্তরিত করার আদেশটি রহিত করার পর এটিকে আবার মসজিদ হিসেবে চালু করতে সকল বাধা অপসারিত হয়। এরপর ১৬ জুলাই তুরস্কের ধর্মবিষয়ক অধিদফতর এটি মসজিদে রূপান্তরিত হওয়ার পরে আয়া সোফিয়া পরিচালনার জন্য সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাথে একটি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এ চুক্তির অধীনে দেশটির সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয় আয়া সোফিয়ার সংস্কার ও সংরক্ষণের কাজ তদারকি করবে এবং ধর্মবিষয়ক অধিদফতর ধর্মীয় সেবা তদারকি করবে। তুরস্কের আদালত তার রায়ে উল্লেখ করেন যে ওয়াকফকৃত কোন সম্পদ ডিক্রী জারির মাধ্যমে ভিন্ন স্থাপনা হিসাবে ব্যবহারের কোন সুযোগ নেই। ওসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ নিজস্ব সম্পত্তি হিসাবে ক্রয় করে সেটিকে মসজিদ করেন। ওয়াকফ করা এই সম্পদ ভিন্ন কোন কাজে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত ছিলো সম্পূর্ণ বেআইনী। পাশ্চাত্যের কেউ কেউ আয়া সোফিয়ার মসজিদ হিসাবে পুনরায় চালুর সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করলেও নিরপেক্ষ বিশ্লেষকরা বলছেন, গির্জার সম্পত্তি ক্রয় করে তা মসজিদ হিসাবে চালুর দৃষ্টান্ত আরো বহু রয়েছে।