যুবক তার জীবনসঙ্গিনী কে মূল্যায়ন করুক।

যুবক তার জীবনসঙ্গিনী কে মূল্যায়ন করুক।

ছবিঃ আবু জাফর

আসগর একজন দ্বীনদার ছেলে। বড় অফিসার হলেও বিবাহ করতে ভুল করেননি, এক দ্বীনদার মেয়েকে সে বিবাহ করল। কিন্তু বছর দুয়েক যেতে না যেতেই সে ও তার স্ত্রীর মাঝে ফাটল ধরল। কারন একটাই আসগর অফিসের ব্যস্ততায় তার স্ত্রীকে সময় দিতে পারত না, আর স্ত্রীর আনন্দ বেদনার কথা গুলো শোনার সময় হত না, তাই তার কথা মন দিয়ে শোনে এমন একজনের সাথে হারাম সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল ও শেষমেশ তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেল। ( নাউজুবিল্লাহ)

আল্লাহ সোবহানাহু তায়াল মানব জাতিকে জোড়ার- জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। এর অর্থই হচ্ছে প্রতি জোড়ায় থাকা একজন আরেকজনের পরিপূরক। তাই একজন যুবকের দ্বীনদার জীবন-যাপনের জন্য দ্বীনদারী মেয়ে বিবাহ যেমন আবশ্যক ঠিক তেমনি বিবাহিত স্ত্রীর হকগুলো আদায়ও গুরুত্বপূর্ণ। একজন যুবকের দ্বীন-ধর্ম, উন্নতি-অবনতির ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বড় প্রভাব থাকে স্ত্রীর। যুগে-যুগে যত মহাপুরুষ-মহাসাধক দুনিয়াকে আলোয় উদ্ভাসিত করেছিল তাদের পিছনে অবশ্যই একজন নেককার স্ত্রীর অবদান ছিল।

তবে মানবজাতির পিছনে লেগে থাকা শয়তানের প্ররোচনা চলমান। আজকাল দেখা যাচ্ছে সারাদিন দ্বীনদারির পরিচয় দিয়ে বেলাশেষে ঘরে এসে যুবকের তুলকালাম বেঁধে যায় নিজ স্ত্রীর সাথে, ছোট খাটো অপরাধ নিয়ে বেঁধে যায় অশান্তির আগুন। নিজ স্ত্রীর কাছেই সে হয়ে যায় বড্ড হিংস্র এক মানুষ। আর এ ব্যাপারে নবী (স.) বলেছেন "পূর্ণ ঈমানদার সেই ব্যক্তি যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর। আর তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।”[তিরমিযীঃ ১১৬২; হাদীস সহীহ, সিলসিলাহ ছহীহাহঃ ২৮৪]। নবী ( স.) সারাজীবনে কখোন নিজ বিবিগনের সাথে অকারণে রাগ, কটু কথা, এমনকি কষ্টকর কিছুই বলেননি।

করোনাকালীন এ দিনগুলো তে বহু যুবক হারিয়েছে তার চাকরি নতুবা কমেছে তার সেলারি তাতে এতদিনের চলা লাইফাস্টাইলে স্বভাবতই পরিবর্তন এসেছে। আর এর প্রভাব পড়ছে গোটা পরিবারে, দেখা গেছে নানা ঝামেলায় যুবক অল্প কথাতেই রেগে উঠছে। সারাদিন চোখে শুধু স্ত্রীর অপরাধ চোখে পড়ছে! আর তাতেই ঘটছে বিপত্তি, নিজ স্বামী থেকে ভালো ব্যবহার না পেয়ে সে হয়ত চোখ দিচ্ছে পরপুরুষের দিকে। স্বাভাবিক ভাবেই নারীগন ঘরের কাজ বেশি করেন তাই তাকে দিনের অনেক সময় কাজে কাজেই কেটে যায়। তারপরেও দিন শেষে যদি কটু কথা শুনেন তখন আগুনে ঘি ঠালার মতই তার হৃদয়টা জ্বলে উঠে। আল্লাহর নবী (স.) এমন কটু কথা কথায় প্রতি বলেন, মুমিন কোনদিন বিদ্রুপকারী হতে পারে না। (তিরমিজি শরীফ)

স্বামী যখন স্ত্রীর ভালোবাসা ও আবেগের মূল্যায়ন না করে, তার হৃদয়ের তৃষ্ণা না মেটায়,স্বভাবতই সে পরপুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হবে। সুভাষী কাউকে কাছে পাওয়ার কামনা অন্তরে লালন করবে। (আসতাগফিরুল্লাহ) কিন্তু স্ত্রী যে পুরুষের অর্ধাঙ্গিনী তার জীবনসঙ্গীনী তা বেমালুম ভুলে থাকে বহু যুবক। ভুলে গেলে চলবেনা সমাজ-সভ্যতা বিনির্মানে পুরুষের যেমন ভুমিকা আছে তেমনি নারীর ভূমিকাও কম নয়। আল্লাহ তায়ালা যুবককে দিয়েছেন সুগঠিত দেহসৌষ্ঠব আর নারীকে দান করেছেন সুগভীর আবেগ-অনুভব।

তাই নারীর সঙ্গে আচার ব্যবহারের দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। গভীর ভালোবাসা দিয়ে তার অন্তর জয় করার এবং হৃদয়ের বন্ধ দরজা খোলার চাবিকাঠি হাতে নিতে হবে। আর মনীষীগন বলেন নারী-মন জয়ের সে চাবিকাঠি হল আবেগ-অনুভূতির মাধ্যমে তাকে সিক্ত করা! চলুন সীরাতে ময়দানে একটু ঘুরে আসি দেখি আল্লাহ নবী ( স.) এ সময়গুলো কিভাবে কাটিয়েছেন। নবীজি (স.) নারীদের প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। নারীর আবেগ ও ভালোবাসার মূল্যায়ন করতে বলেছেন। যে স্ত্রীর সাথে রেগে যায় এবং দুর্ব্যবহার করে, তাকে কঠোর নিন্দা করেছে। বিদায় হজ্জের ভাষনে সোয়া লক্ষ সাহাবীর সামনে তিনি ঘোষনা করেন, " শোন হে লোক সকল! তোমরা নারীদের সঙ্গে সদাচরণ করবে। তোমরা নারীদের সঙ্গে সদাচরণ করবে"। ( তিরমিজি শরীফ.৩৮৩০)

দু জাহানের শ্রেষ্ঠ মাখলুক নবী( স.) বহুদিন বাড়ি গিয়ে শুকনো রুটি ছাড়া কিছুই পাননি। তবুও তিনি তো কোনদিন তার স্ত্রীদের সাথে রেগে বলেন নি, আমাকে আগে বললে না কেন? আমি কি কিছু আনতে পারতাম না? আসলে নবী ( স.) মানবমুক্তির মহাদিশারি, একজন স্বামী হিসেবে তার চলন-বলন কর্মগুলোর মাঝেই নিহিত আছে দুনিয়ার সমস্ত যুবকের বৈবাহিক জিবনের মুক্তির পথ। নবী ( স.) এর বিবিদের দেয়া হক গুলো যুব সমাজ আদায় করলেই সমাজ-সংস্কৃতি থেকে চিরতরে বিদায় নিবে সমস্ত অশান্তি বেড়াজাল। তার অনুসৃত পথই হোক আমাদের পথ, তার চরিত্রই হোক আমাদের চরিত্র, স্ত্রীদের মূল্যয়ন করে নবীর সুন্নত আদায় করে সুখী জীবনই হোক আমাদের কাম্য।

আবু জাফর

 শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়