করোনা থেকে দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার আশঙ্কা

করোনা থেকে দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার আশঙ্কা

সিডিসি বলছে, ঘন ঘন হাত ধোয়া, জনসম্মুখে মাস্ক পরা ও অন্যদের থেকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা দরকার।

করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতায় পড়তে পারেন বলে সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)। তাদের পরিচালিত এক জরিপের ফলে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। জরিপে দেখা যায়, করোনা শনাক্তের দুই থেকে তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও আক্রান্তদের ৩৫ শতাংশ স্বাভাবিক সুস্থতায় ফিরতে পারেননি।

গত ১৫ এপ্রিল থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত করোনা পজিটিভ ২৯২ জনের ওপর জরিপটি পরিচালনা করে সিডিসি। এই সময়ের মধ্যে তারা বহির্বিভাগের রোগী হিসেবে চিকিৎসা নিয়েছেন। মূলত করোনা শনাক্ত হওয়ার ১৪ থেকে ২১ দিনে মধ্যে তাদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। গত শুক্রবার সিডিসির রোগ এবং মৃত্যুহারবিষয়ক এক সপ্তাহিক প্রতিবেদনে এ ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

জরিপে অংশ নেয়া ৯৪ শতাংশ রোগী বলেছেন, তারা যখন পরীক্ষা করাতে যান তখন তাদের অন্তত একটি উপসর্গ ছিল। তারা বলেন, সিডিসির তালিকাভূক্ত ১৭টি উপসর্গের মধ্যে গড়ে সাতটি তাদের মধ্যে ছিল। সবচেয়ে সাধারণ অভিযোগ ছিল শারীরিক ক্লান্তি, এরপর ছিল কাশি এবং মাথা ব্যথা।

যাদের উপসর্গগুলো দীর্ঘমেয়াদে ছিল; তাদের ৪৩ শতাংশের কাশি, ৩৫ শতাংশের ক্লান্তি এবং ২৯ শতাংশের শ্বাসকষ্ট ছিল বলে জানান। করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ হওয়ার মধ্যবর্তী সময় ১৬তম দিনে তাদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়।

জরিপে অংশ নেয়া ৬৫ শতাংশ বলেছেন, কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়ার ৫ থেকে ১২ দিনের মধ্যে তারা স্বাভাবিক সুস্থতায় ফিরেছেন। পরীক্ষায় করোনা শনাক্তের কয়েক সপ্তাহ পর কেউ অসুস্থ বোধ করছেন কিনা-এটির ক্ষেত্রে বয়স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

৫০ এবং তদুর্ধ্ব বয়সীদের ৪৭ শতাংশ বলেছেন, শনাক্তের কয়েক সপ্তাহ পরও তাদের উপসর্গ ছিল। অন্যদিকে, ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের ২৬ শতাংশেরও উপসর্গ ছিল বলে জানান। ৩৫ থেকে ৩৯ বছর বয়সীদের ৩২ শতাংশ বলেছেন, তারা পুরোপুরি সুস্থতা ফিরে পাননি।

যাদের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা আছে, তাদের সম্ভবত লক্ষণগুলো দীর্ঘস্থায়ী ছিল। কিন্তু ১৮ থেকে ৩৪ বছরের বয়সী যুবকের ৫ জনের মধ্যে ১ জনের কোনো দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা ছিল না, কিন্তু তারা পুরোপুরি সুস্থ হয়নি।

যাদের দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক সমস্যা আছে, তাদের উপসর্গগুলো সম্ভবত দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল। কিন্তু ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী ৫ যুবকের মধ্যে একজনের কোনো দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা ছিল না। কিন্তু তারা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি বলে জানিয়েছেন।

আগের গবেষণাগুলোতে দেখা যায়, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের সুস্থ হতে সময় লাগতে পারে। ইতালিতে এক জরিপে দেখা গেছে, অসুস্থ হওয়ার দু’মাস পরও ৮৭ শতাংশের বেশিরভাগ রোগীর কমপক্ষে একটি উপসর্গ রয়েছে এবং অর্ধেকের বেশি রোগী বলেছেন, তাদের এখনো তিনটি কিংবা ততোধিক উপসর্গ আছে।

বেশ কিছু চিকিৎসক উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, উপসর্গগুলো বছরের পর বছর ধরে থাকতে পারে। কিছু রোগী হয়তো কখনই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন না। দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পরিমাপের জন্য গবেষণা চলছে এবং যাদের দীর্ঘস্থায়ী কোভিড-১৯ উপসর্গ রয়েছে তাদের সহায়তার জন্য কিছু ক্লিনিক কর্মসূচি শুরু করেছে।

যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তাদের সহায়তার জন্য যুক্তরাজ্যের একটি ক্লিনিক দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি বিশেষজ্ঞ, ডায়েটিসিয়ান এবং একজন মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু তারা এখন দেখছেন রোগটির মৃদু উপসর্গ নিয়েও রোগীরা সহায়তার জন্য আসছেন।

উদাহরণস্বরুপ, যুক্তরাজ্যের একটি ক্লিনিক দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তিরোগ বিশেষজ্ঞ, পথ্যবিশারদ, একজন মনোবিজ্ঞানী এনেছে যারা হাঁসপাতালে চিকিৎসাধীন তাদের সহায়তার জন্য । কিন্তু তারা এখন মৃদু উপসর্গ নিয়েও সহায়তার জন্য আসছে তাদেরকেও পরামর্শ দিচ্ছে। কিছু ব্যক্তি কয়েক মাস ধরে উপসর্গ রয়েছে বলে জানান।

সিডিসির নতুন গবেষণার গবেষকদের মতে, জনস্বাস্থ্য নেতাদের সাধারণ জনগণকে মনে করিয়ে দেয়া প্রয়োজন যে-রোগটির মৃদু ধরনে আক্রান্ত হলেও তরুণ, স্বাস্থ্যবানদেরও উপসর্গ কয়েক সপ্তাহ থাকতে পারে।

সিডিসি বলছে, কোভিড-১৯ এর বিস্তারের গতি ধীর করার জন্য মানুষকে সতর্কতা অবলম্বন এবং ঘন ঘন হাত ধোয়া, জনসম্মুখে মাস্ক পরা ও অন্যদের থেকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা দরকার। সূত্র: সিএনএন