কাবাঘরের অজানা তথ্য

কাবাঘরের অজানা তথ্য

ছবিঃ কাবাঘর

মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন যে, ‘তারা যেন ইবাদত করে এই গৃহের পালনকর্তার।’  পবিত্র কাবাঘর পৃথিবীর সকল বিশ্বাসী মুসলমানের কাছে পবিত্র এক ঘর। যা কাবা বা বায়তুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর ঘর হিসাবেই সুপরিচিত। পৃথিবীর সকল মানুষের কাছেই এই পবিত্র গৃহ একটি আরাধ্য। এর প্রতি সকল মানবের দুর্নিবার আকর্ষণ চিরন্তন। সৃষ্টির আদিকাল থেকেই এই মহাপবিত্র গৃহ শান্তি অন্বেষীদের কাছে বিশেষ আশ্রয়স্থল। পবিত্র কাবা গৃহের ছাদ কাঠের তিনটি পিলারের ওপর দন্ডায়মান। প্রতিটি খুঁটির ব্যাসার্ধ ৪৪ সে. মি.। কাবা শরিফের কালো কাপড়ের  আবরণ যা গিলাফ নামে সুপরিচিত। প্রতি বছর ৯ জিলহজে পরিবর্তন করা হয়।  কাবাশরিফের সোনালি বর্ণের চাবিটি মক্কার বনি শায়বা গোত্রের কাছে রক্ষিত। রাসূলে করিম (সা.) কাবাঘরের চাবিটি শায়বা গোত্রের কাছে রেখে যান। যা কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত ওই গোত্রের হাতে থাকবে। গিলাফ লাগানোর পূর্বে পবিত্র কাবা শরিফ জমজমের পানি দ্বারা ধৌত করা হয় এবং কাবার দেওয়ালে দামি আতর লাগানো হয়।  জমিনে জান্নাতের ঘর হলো কাবা শরিফ।  কাবাগৃহের একটিমাত্র দরোজা এর কোন লেলো জানালা নেই। কাবাগৃহের মেঝে এবং ওয়াল মার্বেল পাথর বাল্লা খচিত। ভেতরে কোনো বিদ্যুৎ নেই। কাবার গøাসের ছাদের ওপর দিয়েই চন্দ্র-সূর্যের আলো দ্বারা আলোকিত। কাবাঘরের ভেতরটা  অতিশয় চমৎকার। যার বর্ণনা করা সম্ভব নয়। সুবহানাল্লাহ! দরজার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ১০৪ সে. মি.। প্রস্থের ছাদে একটি ভেন্টিলেটর আছে। যা দিয়ে বায়তুল মামুর এবং চন্দ্র-সূর্যের আলো প্রবেশ করে। আল্লাহ ক্ষমা করুন আমাকে, আমাদের সকল মুমিন-মুসলমানকে। হে আল্লাহ সমস্ত বিশ্ব মুসলিমকে তাওয়াফে বায়তুল্লাহর তাওফিক দিন।।  রওজাতুন নবী (স) জিয়ারত করার তাওফিক দান করুন।  কাবাঘরের ভেতর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার সময় এই কাচটি খোলা হয়। দেওয়ালসমূহ গ্রিন ভেলভেট কাপড়ের গিলাফ দিয়ে মোড়ানো।

বিভিন্ন রেওয়ায়েত থেকে প্রমাণিত আছে যে, হযরত ইব্রাহিম (আ:) কে সিরিয়া থেকে হিজরত করিয়ে পবিত্র মক্কাতে আনা হয়েছিলো। মাকানাল বাইত, শব্দে ইঙ্গিত রয়েছে যে, পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ ইব্রাহিম (আ:) এর আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল। নির্ভরযোগ্য বর্ণনাতে বলা হয়েছে যে, বাইতুল্লাহ এর প্রথম নির্মাণ আদম (আ:) পৃথিবীতে আসার পূর্বে অথবা সাথে সাথে হয়েছিলো। হযরত আদম (আ:) এবং তৎপরবর্তী নবী ও রাসূলগণ পবিত্র বাইতুল্লাহ কাবাঘর তাওয়াফ করতেন। হযরত নূহ (আ:) এর জামানাতে তুফানে পৃথিবী ধ্বংসের সময় বাইতুল্লাহের প্রাচীর তুলে নেয়া হয়েছিলো। কোন বর্ণনাতে আছে যে, হযরত নূহ (আ:) এর জামানায় তুফানে পৃথিবী ধ্বংসের সময় পবিত্র বাইতুল্লাহ সাময়িকভাবে জবলে আবু কুরাইশে ছিলো। তবে পবিত্র বাইতুল্লাহ এর ভিত্তি ও বর্তমানে যেখানে ছিলো, সেখানেই বিদ্যমান ছিল। (সূত্র : তাফছিরে মাআরিফুল কোরআন)।

পবিত্র কাবাগৃহের বাইরের বিবরণ; মুলতাজিম এটি পবিত্র কাবা শরীফের দরজা এবং হাজরে আছওয়াদ পাথরের মধ্যবর্তী দেয়াল, যেখান থেকে আল্লাহর মেহমান হাজীগণ তাওয়াফ শুরু করেন! মাক্কামে ইব্রাহিম (আ:) এবং আল হাতিমের মধ্যবর্তী পবিত্র কাবার দরজা! এরপর ইরক কর্ণার, আল মিজাব, ছাম কর্ণার, ইয়েমেন কর্ণার, এরপর হাজরে আছওয়াদ বা কালো পাথর। হাজরে আছওয়াদ কালো পাথরটি বহু বছর আগে কিছু কুচক্রী মহল ছিনতাই করে নিয়ে যায়, পরে আবার ফেরত দেয়। তখন ঐ পাথরটি সাত টুকরো অবস্থায় কুচক্রীরা ফেরত দেয়! হাজরে আছওয়াদ এর মাঝখানে খেজুরের বিচির মত সাদা এক টুকরা পাথর দৃশ্যমান! হাজরে আছওয়াদ পাথর বø্যাক স্টোনটি ভিত্তিপ্রস্তরকালীন সময়ে হোয়াইট স্টোন ছিলো! হাজরে আবওয়াইজ ছিলো। মানবজাতির কালো রঙের গোনাহ পাথরটি চুষতে চুষতে সাদা পাথর কালো হয়ে যায়!

বাইতুল্লাহ এবং তাওয়াফকারীদের জন্য আল্লাহপাক আল কোরআনে ঘোষণা করেন যে, যখন আমি ইব্রাহিমকে বাইতুল্লাহর স্থান ঠিক করে দিয়ে বলেছিলাম যে, আমি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না এবং আমার গৃহকে পবিত্র রাখো তাওয়াফকারীদের জন্য, নামাজে দন্ডায়মানদের জন্য এবং রুকু সিজদাহকারীদের জন্য এবং মানুষের মধ্যে হজের জন্য ঘোষণা প্রচার করো! তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সর্বপ্রকার বাহন ও উটের পিঠে সওয়ারী হয়ে আসবে দূর-দুরান্ত থেকে! (সুরায়ে হজ্ব-২৬, ২৭)

রাসূল করীম (সা:) বলেন যে, হাজরে আছওয়াদ পাথর, হাজরে আবইয়াজ হয়ে যখন বেহেশত থেকে অবতীর্ণ হয়েছিলো, সেটা ছিলো দুধের চেয়ে ও ধবধবে সাদা তারপর আদম সন্তানগনের পাপ মুছতে মুছতে সেই সাদা পাথরটি কালো রং হয়ে গেছে (তিরমিজি শরীফ)।

রাসূল (সা:) বলেন যে, হাশরের মাঠে আল্লাহপাক হাজরে আছওয়াদকে এমন অবস্থায় তুলবেন যে, তাঁর দুটি চোখ থাকবে, সে দেখবে এবং তাঁর মুখ হবে সে কথা বলবে, সে তাঁর মুখ দিয়ে ঐ সমস্ত লোকদের ব্যাপারে সাক্ষী দিবে, যারা ঈমান, ইখলাছ ও দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে হাজরে আছওয়াদ পাথর চুমু খেয়েছে। রাসূল (সা:) বলেন, আছওয়াদ পাথর এবং মাক্কামে ইব্রাহিম দুইটাই জান্নাতের ইয়াকুত পাথর! ঐ পাথরগুলোতে কাফির, মুশরিকরা যদি স্পর্শ না করতো, তাহলে যে কোন কঠিন রোগী তাতে স্পর্শ করলে আরোগ্য লাভ করতো। (তিরমিজি)

মাওলানা এম এ করিম ইবনে মছব্বির