কিছু বলতে পারিনি আমিও

কিছু বলতে পারিনি আমিও

মুনজুরুল ইসলাম নাহিদ

 

ঈদে ঘুরতে বেরিয়েছি,

ফাঁকা প্রায় রাজধানীর পথে ছুটে চলেছি বাসে।

গাড়িতে চেপে বসতেই ছোট এক ছেলেকে দেখলাম ভাড়া চাইছে সবার থেকে।

সবার নতুন পোশাকের মাঝে 

ওর জামাটি একটু বেমানান।

 

ভাড়ার সাথে অধিকন্তু বাড়িয়ে চাওয়াতে

অনেকটা শোরগোল বেধে গেল।

ভাড়া নিতে আসা ছোট ছেলেটিকে

কতজন কতভাবে আঘাত করল,

দেখাল কত যুক্তি,

আইনের কথা বলতেও বাকি রাখলনা অনেকে।

ছেলেটি তবু অনুনয়ের সাথে চেয়েই গেল।

 

ওর চোখে তাকিয়ে পড়ে ফেললাম কিছু কথা;

শত চেষ্টা করেও যে কথাগুলো বলতে পারেনি সে।

ক্ষুব্ধ চোখ থেকে যেন কিছু প্রশ্ন ঠিকরে পড়ছে-

ঈদ কি শুধুই তোমাদের জন্য?

আমাদের কি উপভোগের অধিকার নেই?

কিছু টাকার জন্যই তো

আজকের দিনেও পথে বেরিয়েছি।

একটু বাড়িয়ে দিতে তোমাদের এত কষ্ট কেন?

যদি আমরা না বেরোতাম তোমাদের কেমন হতো?

 

ওর শেষ প্রশ্নটি আমার ভাবনায় খুব লেগেছে।

আমার ভাবনা ছেলেটির মুখ নিসৃত

অনুনয় শব্দ থেকে চলে গেছে আরো গভীরে,

কন্ঠ পেরিয়ে শব্দ সৃষ্টির উৎসে।

শুনতে পেলাম আরো কিছু কথা

যেগুলো লুকিয়ে রেখেছিল অন্তরালে।

 

ঈদে মাকে একটি নতুন শাড়ি কিনে দেওয়ার স্বপ্ন

এবার পুরণ করেছে সে।

গত কয়েকদিনের জমানো টাকা দিয়েও

তা কেনা যাচ্ছিল না;

তাই মালিকের থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে

শাড়িটি তুলে দিয়েছিল মায়ের হাতে।

সে টাকা পরিশোধ করতেই আজ পথে আসা।

 

কথাগুলো শুনতে শুনতেই কখন যেন স্তব্ধ হয়ে গেছি।

ছেদ পড়ল তার ডাকেই 'ভাই ভাড়াটা দেন'।

মুখ তুলে শুধুই তাকিয়ে ছিলাম,

কিছু বলতে পারিনি আমিও।

 

সবাই কেন সে ভাষা পড়তে পারেনা?

কেন এই বিভেদ?

উদাস বদনে ভাবছিলাম এসবই।

হঠাৎ বাঁশির শব্দে বাইরে তাকালাম

দেখতে পেলাম নীল ড্রেস পরা ট্রাফিক পুলিশটি

সরু লাঠি নিয়ে ফুকছে সে বাঁশি।

 

আমার দৃষ্টি তার বস্ত্র, মাংস ভেদ করে

পৌঁছে গেল ভিতরে,

দিব্যকর্ণে শুনতে পেলাম তার হৃদয়ের কথামালা।

'বাবা তুমি এবারো কেন এলেনা?'

ছোট মেয়েটির এই প্রশ্নটি এখনো বাজছে সেখানে।

বাশিঁর প্রতিটি ফুৎকারে নিজেই খুঁজে চলেছে তার জবাব।

 

অনেক কিছু খুঁজে পেলেও

মেয়েকে বুঝাতে পারেনি সে।

মেয়ের কান্না আর স্ত্রীর অভিমানী কথাগুলো

সবাইকে জানাতে চাইছে বাশিঁর শব্দে।

কিন্তু সেই শব্দের ভিতরের কথা বুঝতে পারেনি অনেকে।

 

গাড়ি সামনে আসতেই থামিয়ে দিল লাঠি দিয়ে,

অনেকেই ঝাঁঝালো কন্ঠে ক্ষোভ ঝাড়ল তার প্রতি।

আমার ইচ্ছে হচ্ছিল সবাইকে কিছু কথা বলি

কিন্তু কিছু বলতে পারিনি আমিও।

 

মুনজুরুল ইসলাম নাহিদ  : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।