নারীদের জরায়ুতে নিরীহ টিউমার - মায়োমা

নারীদের জরায়ুতে নিরীহ  টিউমার  - মায়োমা

ছবি : সংগৃহীত

 

মায়োমা বা ফাইব্রয়েড - এটা  জরায়ু বা বাচ্চাদানিতে হয়। এটা ৩৫থেকে ৪০ বছরের নারীদের  বেশি  হয়। তবে সববয়সীদের কমবেশি হতে পারে। এই টিউমার ইউটারিয়ান মাসল, ও ফাইব্রাস টিসু  দিয়ে তৈরি  হয়।  সেজন্য কিছুটা শক্ত ও ফার্ম   তাদের  অবস্থান।    ফাইব্রোয়েড ৯৮.৯%  টিউমার  আর নিরীহ বা বেনাইন, ক্যানসার হয় মাত্র ০,১ %

 কাদের  বেশি হয় এই টিউমার!? 

যে সব নারীর বাচ্চা হয়না অথবা একটা দুইটা বাচ্চা অথবা যাদের শরীরে  এস্ট্রোজেন হরমোনের আধিক্যতা লক্ষ্য  করা যায়,।  

তারা কি কি উপসর্গ নিয়ে  আসে?

  অনেক সময় কোন উপসর্গই থাকেনা, রোগীও বুঝতে  পারেনা, হঠাৎ  অন্য অসুখের জন্য আল্ট্রাসোনো করতে ধরা পড়ে যায়।

--পেটে চাকা অথবা টিউমার  নিয়ে আসতে পারে।

-- মাসিকের সময় অতিরিক্ত  রক্তস্রাব নিয়ে আসতে পারে !

-- তলপেটে  ব্যাথা নিয়ে আসতে পারে।

-- মাসিকের সময় ব্যাথা নিয়ে আসতে পারে। স্বাভাবিক  সময় ব্যাথা থাকার কথা  নয়।

 - স্পটিং বা অল্প  অল্প রক্তশ্রাব সারা মাস এমন সমস্যা নিয়েও আসতে পারে।

 

 কত রকম টাইপ বা  কত ভাগে বিভক্ত ?

 -- যেমন সাব মিউকাস,  জরায়ুর  একদম ভেতরের লেয়ারে  হয়

-- ইন্ট্রা মিউরাল বা মাংসের ভিতরে হয়

-- সাব সেরাস বা একদম উপরের আবরণের নিচে হয়। 

 

  সনাক্ত  করা হয় কিভাবে ?

রোগীর  ইতিহাস,  রোগীকে   পরীক্ষা নীরিক্ষা  করে। শেষে আলট্রাসাউন্ড করে

এই টিউমার  কি কি সমসা করতে পারে?

এই টিউমার বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন ভাবে সমস্যা করে থাকে। যেমন গর্ভকালীন অবস্থায়, একরকম, আবার  প্রসবকালে অন্যরকম সমস্যা করে থেকে। 

কেস নং ১ - গর্ভ কালীন  একটি কেস রিপোর্ট। 

আমি তখন ঢাকা মেডিকেলের  সিএ। একটি রোগী ভর্তি  হয়েছে, প্রথম বাচ্চা পেটে, সাথে জরায়ুতে টিউমার।। রোগীটা কয়েক দিন হলো ভর্তি হয়েছে। বিয়ে হয়েছে ৮/১০ বছর,  এতদিন বাচ্চা আসে নাই, হয়তো এই টিউমারের  জন্য বাচ্চা হয়নাই। স্যার প্রতিদিন রাউন্ড এর সময় দেখে রেখে দেয়। তখনো মাস পুরা হয়নাই, তাই, স্যার হয়তো আরো কয়েকদিন  রেখে দেখতে চেয়েছিলেন। শনিবার সকালে রাউন্ড  দিতে যেয়ে দেখি  বাচ্চার  হার্ট বিট অনেক কম  তার জন্য

তাড়াতাড়ি সিজার করবো বলে, রেডি করলাম। দেখি বাচ্চাটা ততক্ষনে মারা গেছে পেটের মধ্যে।  এই টিউমারের জন্য, তার মানে এই টিউমারের  কারনে বাচ্চা পেটে মারা যায়, বা যেতে পারে।

 কেস নং ২ - প্রসব পরবর্তী একটি কেস রিপোর্ট। 

 তখন আমি সিনিয়র  কনসাল্টেন্ট সরোওয়ার্দী হাসপাতালে।  ইউনিটে এক রোগী ভর্তিহয়েছিল, ফাইব্রয়েড সাথে প্রসব বেদনা নিয়ে রোগী টা সিজার হয়েছে  দিনের বেলায়! মধ্যেরাতে তার সেই রকম রক্তক্ষরন শুরু  হয়েছে, তারপর সবাইকে ডাকতে  ডাকতে রোগী  খারাপ হয়ে গেছে অবশেষে  রোগীর মৃত্যু।  তার মানে এই টিউমারে প্রসব পরর্বর্তী  পোস্ট  পার্টাম হেমোরেজ হয় বা হতে পারে।।  মানে প্রসব পরবর্তী  রক্তক্ষরন।

 

 সমস্যা গুলো কি কি 

 

-- বন্ধ্যাত্ব বা বাচ্চা না হওয়া

-- বার বার এবোরশন বা বাচ্চা নষ্ট  হয়ে যাওয়া

-- অবাত্তি বাচ্চা প্রসব করা, মানে সময় হওয়ার আগে প্রসব করা।

-- প্রসবের সময়  বাধাপ্রাপ্ত হওয়া

-- প্রসবের সময় বেশি বেশি রক্ত যাওয়া।

- প্রসবের পরে ইনফেকশন  হওয়া।

- সাব ইনভলুশন না হওয়ার, জরায়ু  সংকুচিত  না হওয়া

-- গর্ভকালীন  সময়, মায়োমাতে   রক্তচলাচল  বন্ধ  হয়ে প্রচন্ড পেট ব্যাথাকরা  তখন ভুল করেও ডেলিভারির  ব্যাবস্থা করা যাবেনা। ঐ ব্যাথাটা টিউমার ব্লাড সাপ্লাই  না পেয়ে  গলে পচে ব্যাথা হয়। তখন মেডিকেল  চিকিৎসা  দিতে হবে রোগী কে হাসপাতালে  ভর্তি  করে। ব্যাথা কমে গেলে

বাচ্চা পোক্ত  হলে তখন তাকে সিজারিয়ান  ডেলিভারি  করতে হবে, কারন স্বাভাবিক  ডেলিভারি 

তার জন্য  সমস্যা হতে পারে।  

তাকে ভুলেও সিজারিয়ানের সময় টিউমার অপারেশন করা যাবেনা, করতে গেলে এত ব্লিডিং

হতে পারে যে রোগী  ওটির টেবিলেই মারা যেতে পারে। তাই তিনমাস পরে মায়োমেকটোমি

মানে টিউমার  ফেলে দিয়ে জরায়ু  রেখে দেওয়াকে মায়োমেকটমি বলা হয়। অথবা  হিসট্রেলকটমি - জরায়ু  ফেলে দেওয়া  যেতে পারে।

-- পেটের মধ্য বাচ্চা মারা যাওয়া

 - প্রসবের পরে রক্ত যাওয়া  (পি পি এইচ্)

-- ০.১ % এর ক্ষেত্রে ক্যানসার হওয়া

 

 চিকিৎসা  কি?

মেডিকেল  চিকিৎসা, ক্ষনস্থায়ী।

সার্জিকাল চিকিৎসা 

 জরায়ু  রেখে টিউমার ফেলা, মায়োমেকটমি; জরায়ু  সহকারে ফেলা দেওয়াকে বলে হিসট্রেকটমি সার্জিক্যাল চিকিৎসা আসল ও চিরস্থায়ী  চিকিৎসা। 

 

অধ্যাপক ডা. শামছুন নাহার : আদ্-দ্বীন উইমেন্স মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা