ইট দিয়েই চলছে পিচ ঢালাই সড়কের সংস্করণ,মোংলা-খুলনা মহাসড়কটি যেন মরন ফাঁদ!

ইট দিয়েই চলছে পিচ ঢালাই সড়কের সংস্করণ,মোংলা-খুলনা মহাসড়কটি যেন মরন ফাঁদ!

ছবি: ইট দিয়েই চলছে পিচ ঢালাই সড়কের সংস্করণ

মোহন এ. আর. রাজ, মোংলা প্রতিনিধিঃ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল মোংলা। সুন্দরবনের কোল ঘেঁষা এ অঞ্চলেই রয়েছে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর (মোংলা বন্দর)। পাশাপাশি বন্দরকে কেন্দ্র করেই এ অঞ্চলে সরকার কর্তৃক গড়ে তোলা হয়েছে দেশের বৃহৎ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা)। এছাড়াও মোংলা বন্দর এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিল্প-প্রতিষ্ঠান।

মোংলা বন্দর ও শিল্পাঞ্চলের ভিতর দিয়ে যাওয়া মোংলা-খুলনা মহাসড়কটি সংস্কারের ৫ বছর যেতে না যেতেই ৮-১০ কিলোমিটার সড়ক বেহালদশায় পরিণত হয়েছে। শুকনা মৌশুমে প্রচন্ড ধুলাবালী আবার বর্ষায় হাটু কাঁদা-পানি ও খানাখন্দ। প্রায় তিন বছর ধরে দুর্ঘটনার ঝুকি নিয়ে চলাচল করছে সকল ধরনের যানবাহন, প্রতিনিয়ত চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় পথচারীদের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মোংলা-খুলনা ৪৫ কিলোমটিার মহাসড়কের মধ্যে বন্দর এলাকা থেকে শুরু করে প্রায় ৮-১০ কিলোমিটার রাস্তাই ভাঙ্গা ও খানা-খন্দে ভরা। তবে বর্তমানে যানবাহন চলাচল উপযোগী রাখার জন্য ইট-বালু দিয়েই চলছে পিচ ঢালাই এ মহাসড়কটির সংস্করণ।

যার চিত্র দেখলে বোঝার কোন উপায় নেই যে, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়ক। মোংলা বন্দর থেকে শুরু হওয়া গুরুত্বপুর্ন এ সড়কটি ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়গঞ্জসহ দেশের সকল বিভাগ ও জেলা শহরের সাথে যোগাযোগ বহন করে থাকে। এখান থেকেই দুরপাল্লার বাস দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিদিনই যাওয়া-আসা করে।

বন্দর ও বন্দর সংলগ্ন বিভিন্ন শিল্প-প্রতিষ্ঠানের ব্যাবসায়ীক মালামাল পরিবহন করা হয় এ সড়ক দিয়ে। প্রচন্ড ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন শত শত পরিবহন চালকরা মালামাল বোঝাই যানবাহন নিয়ে এ পথে চলাচল করে থাকে।

 

জাতীয় এ সড়কটির (এন-৭) বন্দর এলাকায় প্রায় শতাধিক শিল্প-প্রতিষ্ঠান থাকায় রাস্তার দু’পাশে মালামাল বহনকারী লড়ি-ট্রাকসহ যানবাহন রাখার কারনে সাধারণ মানুষের চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সর্বশেষ ২০১৩ সালের শেষের দিকে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যায় এ সড়কটি বন্দর এরিয়ায় সংস্কার করা হয়।

 কিন্ত ৫ বছর যেতে না যেতেই আবার ভেঙ্গে যায় সড়কটি। বিশেষ করে মোংলা বন্দর থেকে দিগরাজ ও বেইলী ব্রিজ পর্যন্ত এই ৮-১০ কিলোমিটার রাস্তার অধিকাংশ এলাকাই ভাঁংঙ্গাচোরা আর গর্তে ভরা। কোনো কোনো স্থান ডেবে এমনভাবে উঁচু-নিচু হয়ে যার ফলে একটু বৃষ্টি হলেই বড় বড় গর্তে পানি জমে কাদা হয়ে যায়।

ফলশ্রুতিতে যানবাহন ও সাধারণ মানুষদের চলাফেরা করার সময় প্রায়শই দুর্ঘটনার মুখে পতিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

প্রতি বছর মোটা অংকের টাকা খরচ করে সামান্য সংস্কার করা হলে তা তমন কোন কাজে আসছে না। একদিকে মোংলা বন্দরের বিভিন্ন পণ্য নিয়ে প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে শত শত ভারী যানবাহন চলাচল করছে।

 অন্যদিকে, ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে শিল্প-প্রতিষ্ঠানের যানবাহন চলাচল করার কারনেই এই সড়কটি সংস্কারের পরেও টিকছে না বলে দাবী বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের। তাই এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে সড়কটি ৬ লেনে উন্নীত করতে একটি প্রস্তাবনা পাশ করা হয়েছে যা অল্পদিনের মধ্যেই কাজ শুরু করা হবে বলে জানান বন্দর কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দ্বিগরাজ বাজারের ব্যাবসায়ী আবুবকর সিদ্দিক তুহিন ও ওমর ফারুক জানায়, ধারন ক্ষমতার অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে বড় বড় যানবাহন চলাচল করার কারনেই সড়কটি দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।

 যার ফলে একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তার মধ্যে পানি জমে যায় এবং বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। এছাড়া রাস্তার উভয় পাশে প্রতিনিয়তই শত শত ট্রাক পার্কিং করে রাখার ফলে পথচারীদের চলাচলে সমস্যায় পড়তে হয়। এভাবে ঝুকির মধ্য দিয়েই বন্দর ব্যাবহারকারীদের পণ্যদ্রব্যাদি আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে, প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘনা ও প্রান হানির ঘটনা, নষ্ট হচ্ছে চলাচলকারী যানবাহন।

এ বিষয়ে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের - পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ গিয়াস উদ্দিন (উপ-সচিব) বলেন, মোংলা-খুলনা সড়কটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক (এন-৭)। এই সড়কের দ্বিগরাজ ও বেলাই ব্রিজ পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত।

সড়কের এই এলাকা নিচু হওয়ায় এবং দুই লেনের এই রাস্তা দিয়ে শিল্প এলাকার ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই ভারী যানবাহন চলাচল করায় এই মহাসড়কের প্রায় ৮-১০ কিলোমিটার এলাকা প্রতি নিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং দিনদিন তা বেড়েই যাচ্ছে। তবে এ সড়কটি ৬ লেনে প্রশস্ত করার জন্য একটি বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ, যার কাজ শুরু হলে জাতীয় এ সড়কটির আর কোন সমস্যা থাকবেনা বলে জানায় বন্দরের এ কর্মকর্তা।