রাজ্জাক বিভ্রাট

রাজ্জাক বিভ্রাট

ফাইল ফটো

আমাদের চিত্রশিল্পে অবদানের জন্য জয়নুল আবেদিনের পর যার নাম নিতে হয়, তিনি এস এম সুলতান (১৯২৩-১৯৯৪)। লোকটা গ্রাম থেকে উঠে আসায় শহুরে শিল্পীরা সুলতানের শিল্পকর্মের ব্যাপক পরিচিতি ও মূল্যায়নের পথে একটা অদৃশ্য প্রতিবন্ধকতা তৈরীর চেষ্টা করতে থাকেন। নীরব উপেক্ষার মাধ্যমে সুলতানের শিল্পকর্মকে সর্বসাধারনের সচেতন মনোযোগ থেকে আড়াল করে রাখাই ছিল এদের অভিপ্রায়।

 আর্ট এস্টাবলিশমেন্টের লোকদের এই নীরব ষড়যন্ত্র ভন্ডুল করে সুলতানকে জনসমক্ষে প্রকাশমান করে তুলেতে এগিয়ে এলেন আহমেদ ছফা (১৯৪৩-২০০১)। তিনি সুলতানের চিত্রকর্মের ওপর “বাংলার চিত্র-ঐতিহ্য এবং সুলতানের সাধনা” শিরোনামে পঞ্চাশ পৃষ্ঠার একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখে “মূলভ’মি” নামাঙ্কিত সাময়িকীতে প্রকাশ করলেন। তারপর প্রবন্ধটা পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করে সেটি যাচাইয়ের জন্য প্রফেসর আবদুর রাজ্জাককে (১৯১৪-১৯৯৯) এক কপি দিলেন। প্রফেসর রাজ্জাক বিরক্ত হবেন ভেবে আহমেদ ছফা পুস্তিকা বিষয়ে তাঁকে কোন তাগাদা দেন নাই এবং তাঁর সাথে অনেকদিন যোগাযোগও রাখেন নাই।

এক সকাল বেলা আহমেদ ছফা ঘুমিয়ে আছেন। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে শুনলেন কে একজন দরজায় টোকা দিচ্ছে। চোখে-মুখে ঘুম নিয়েই তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কে? জবাব পেলেন, আমি আবদুর রাজ্জাক।

বজলুর ক্যান্টিনের যে ছেলেটা সকালের নাসতা খাওয়ার জন্য আহমেদ ছফাকে জাগিয়ে দিত তার নামও আব্দুর রাজ্জাক। তিনি ভাবলেন ক্যান্টিন বয় আব্দুর রাজ্জাক তাকে নাসতা খাওয়ার জন্য ডাকতে এসেছে। ঘুমের ঘোরেই তিনি বলে বসলেন, রাজ্জাক মিয়া এখন যাও, পরে গিয়ে নাসতা খাবো। ওপার থেকে জবাব পাওয়া গেল, পরে আইলে নাসতা নাও পাইতে পারেন।

ক্যান্টিন বয় রাজ্জাকের বাড়ি বরিশাল। আওয়াজটি বরিশালের বলে মনে হল না আহমেদ ছফার। তিনি  উঠে দরজা খুললেন। দেখলেন, প্রফেসর রাজ্জাক সেই পুস্তিকা হাতে দাঁড়িয়ে আছেন।