ত্বকের সংক্রমণ রুখতে মানতেই হবে এই সব নিয়ম

ত্বকের সংক্রমণ রুখতে মানতেই হবে এই সব নিয়ম

ত্বক বাঁচাতে মেনে চলুন কিছু নিয়ম। ফাইল ছবি।

শরৎকালের শুরু থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। প্রবল বৃষ্টিতে করোনাভাইরাস ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে, নাকি দাপট বাড়বে— তাই নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলুক। কিন্তু বর্ষণমুখর দিনে ত্বকের যত্ন না নিলে ছত্রাকের সংক্রমণ সহ নানা সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষ করে, অফিসে বা কাজের প্রয়োজনে বাইরে গেলে বৃষ্টিতে ভিজতে হয়। তার সঙ্গে রাস্তার জমা পানি জুতা ভিজে যায়। আবার বৃষ্টি ভেজা পোশাকের সঙ্গে ঘাম মিলেমিশে ত্বকে বিশেষ করে বাহুমূল, বা কুঁচকির মতো শরীরের ভাঁজে ছত্রাকের বংশ বৃদ্ধির আদর্শ পরিবেশ তৈরি হয়। ছত্রাক ঘটিত ত্বকের সমস্যা বেড়ে যায়।

ঘাড়ে, কোমরে, কুঁচকিতে, বাহুমূলে বা মাথায় আংটির মতো উঁচু ছোট বড় লাল দাগ, সঙ্গে প্রচণ্ড চুলকানি— এই রিং ওয়ার্ম বা দাদই ত্বকের সব থেকে পরিচিত ছত্রাক ঘটিত অসুখ। আবার অনেকেই খুব সমস্যায় পড়েছেন পায়ের সংক্রমণ নিয়ে।

রাস্তা ঘাটে ময়লা পানি ডিঙ্গিয়ে জুতা ভিজিয়ে হাঁটাচলা করতেই হয়। পায়ে পানি বসে আঙুলের ফাঁকে ও পায়ের তলায় ত্বকে হাজাসহ অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যায়, বললেন ত্বক বিশেষজ্ঞ পিয়ালি চট্টোপাধ্যায়। এক্ষেত্রে বাড়িতে ফিরে বা অফিসে গিয়ে পা ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। বাড়িতে ফিরে পা ধুয়ে নিয়ে গরম পানিতে কিছুক্ষণ পা ডুবিয়ে রাখতে পারলে পায়ের সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক কমে বললেন পিয়ালি। তবে শুধু পা নয়, অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করে এবং ভাল করে হাত শুকনো না করে নিলে হাতের আঙুলের ফাঁকেও হাজাসহ অন্য সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

ইস্ট-সহ অন্য় ছত্রাকের সংক্রমণে হাত পায়ের আঙুলের ফাঁকে যে সমস্যা হয়,  সাধারণ ভাবে তাকে হাজা বলা হলেও ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে  'টিনিয়া মেনাম' বা 'টিনিয়া পেডিস'। ইস্টের কারণে ইন্টারট্রিগো নামক ত্বকের রোগ হতে পারে শরীরের ফাঁকে ফাঁকে। এ ছাড়া মাথায় ছত্রাকের সংক্রমণ 'টিনিয়া ক্যাপাটাইটিস' হলে আঁশের মতো ছাল ওঠে ও চুল পড়ে যায়, নখে ছত্রাক সংক্রমণ 'টিনিয়া আনগুইয়াম'-এ সবুজাভ কাল ছোপ পড়ে নখ ভঙ্গুর হয়ে যায়।

অনেকেই বর্ষায় চুল ঝরে পড়ার সমস্যা নিয়ে আসেন। মাথার তালুতে কোনও সংক্রমণ থাকলে চুল ঝরে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। ছত্রাক ঘটিত সমস্যা ছাড়াও অনেক সময়ে ব্যাকটিরিয়া আর ছত্রাকের যৌথ আক্রমণে ত্বকের সমস্যা জটিল হয়ে ওঠে।

পিয়ালি চট্টোপাধ্যায় জানালেন, বেশির ভাগ মানুষ ত্বকের সংক্রমণকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না। হাতে পায়ে বা শরীরের কোথাও কোনও র‍্যাশ হলে ওভার দ্য কাউন্টার স্টেরয়েড ক্রিম, পাউডার কিংবা ভেষজ মলম কিংবা ক্রিম কিনে লাগান। এর ফলে ত্বকের সমস্যা জটিল হয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ে।

অনেকে আবার দাদ, হাজা, চুলকানির বহুল প্রচারিত মলম লাগিয়ে সমস্যা জটিলতর করে তোলেন। এঁদের  জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ, ত্বকের সমস্যাকে গুরুত্ব না দিলে তা ক্রনিক হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, একই সঙ্গে ভোগান্তিও বাড়ে। তাই ত্বক ভাল রাখতে পরিচ্ছন্নতা মেনে চলার পাশাপাশি যে কোনও সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

করোনার ভয়ে অনেকেই চেম্বারে যেতে চাইছেন না এখন। তাঁরা অনলাইনে বা টেলিফোনে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। বিশেষ করে যাঁদের ডায়াবিটিস আছে, তাঁদের ত্বক সংক্রমণের ঝুঁকি তুলনামূলক ভাবে বেশি। ছোটখাটো ত্বকের সমস্যাও অনেক সময় বড় আকার নিতে পারে, সাবধান করলেন চিকিৎসক। ডায়াবিটিস থাকলে বা শুষ্ক ত্বক হলে বাড়তি যত্ন নেওয়া উচিত।  

ত্বক বিশেষজ্ঞ শেখর হালদার জানালেন শুষ্ক  ত্বকে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। মুলত যাঁদের একজিমার প্রবণতা আছে, তাঁদের আর্দ্র আবহাওয়ায় সমস্যা বেড়ে যায়। শুষ্ক ত্বকে কিছু মাইক্রো ক্র্যাক থাকতে পারে। আর্দ্র আবহাওয়ায় ও ময়লা জলের সংস্পর্শে সেখানে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। সেখান থেকে শরীরের অন্যান্য অংশে তা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

রাস্তার জমা ময়লা পানি মাড়িয়ে বাড়ি ফেরার পর দ্রুত ভাল সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিলে একদিকে ত্বকের সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে। সুতরাং, সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে নেওয়াই ত্বক বাঁচানোর সেরা উপায়। বৃষ্টির দিনে  বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় পায়ে বেরিয়ার ক্রিম লাগিয়ে গেলে সংক্রমণের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায় বলে জানালেন শেখরবাবু। বেরিয়ার ক্রিম না থাকলে পেট্রোলিয়াম জেলি বা ভাল ময়েশ্চারাইজার লাগালেও চলবে।

ত্বক সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার পাশাপাশি ত্বককে শুষ্ক হতে দিলে চলবে না। আর যে কোনও সমস্যায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই ওষুধ ব্যবহার করা উচিত বলে শেখর হালদারের পরামর্শ। বর্ষার দিনে ছোটদের  মধ্যেও ছত্রাকের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। তবে এই অতিমারির কালে পার্কে বা মাঠে খেলা বন্ধ হওয়ায় এবারে কিছুটা কম সমস্যা দেখা যাচ্ছে। ত্বক পরিচ্ছন্ন রাখতে দিনে দু’বার স্নান করুন, সুতির পোশাক পরুন ও সুষম খাবার খান, শরীর ও মন দুইই পরিচ্ছন্ন থাকলে ত্বক থাকবে ঝকঝকে।