আগামীকাল পাবনা-৪ আসনে উপনির্বাচন, নিয়োজিত থাকবে ৮ প্লাটুন বিজিবি

আগামীকাল পাবনা-৪ আসনে উপনির্বাচন, নিয়োজিত থাকবে ৮ প্লাটুন বিজিবি

ফাইল ছবি।

আগামীকাল (শনিবার) পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনের উপনির্বাচন। সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন। স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে সুষ্ঠভাবে ভোটগ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে পাবনা জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার আব্দুল লতিফ শেখ জানিয়েছেন। এদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলবে ভোটগ্রহণ। নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে।

জেলার ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত পাবনা-৪ আসন। এ আসনে দু’টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন রয়েছে। মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮১ হাজার ১১২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯১ হাজার ৬৯৭ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৮৯ হাজার ৪১৫ জন। ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১২৯টি। 

ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা রয়েছে ১২৯টি। এসব ভোট কেন্দ্রে ২,৩০১ জন প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। আইশৃংখলা বাহিনীর মধ্যে ৮ প্লাটুন বিজিবি নিয়োজিত থাকবে। মোট ১৮ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।
 
উপ-নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব এবং জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিম।

এ উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস।

ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব এবং লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন জাপা প্রার্থী মো. রেজাউল করিম।

রিটার্নিং অফিসার ও পাবনা জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার আব্দুল লতিফ শেখ আরো জানান, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্নের লক্ষ্যে ভোট কেন্দ্রগুলোতে এবং ভ্রাম্যমাণভাবে বিপুলসংখ্যক আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।

বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে আসনটি বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের দখলে রয়েছে। প্রায়ত সাবেক ভূমিমন্ত্রী মরহুম শামসুর রহমান শরীফ ডিলু এই আসন থেকে ৫ বার এমপি নির্বাচিত হয়। ১৯৯৬ সাল থেকে আসনটি হাতছাড়া বিএনপির। এবার সেই আসনটি পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে নেমেছে দলটি। এদিকে বরাবরের মতো আসনটি নিজেদের দখলে রাখতে একাট্টা আওয়ামীলীগ। 

অতীত বিশ্লেষণ জানা গেছে, ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৬টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে আওয়ামীলীগ ৫ বার এবং বিএনপি ১ বার বিজয় লাভ করেছে। এই আসন থেকে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম সরদার ’৯০ এর গণআন্দোলনের তুখর ছাত্রনেতা আওয়ামীলীগ প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবকে পরাজিত করেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর কাছে বিএনপি প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম সরদার পরাজিত হন। তবে এই নির্বাচনে হাবিবুর রহমান হাবিব আওয়ামীলীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। পরে তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন। এই নির্বাচন থেকেই পরপর ৫ বার এমপি নির্বাচিত হন শামসুর রহমান শরীফ ডিলু। 

২০০১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু বিএনপি প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম সরদারকে পরাজিত করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন শামসুর রহমান শরীফ ডিলু। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর কাছে বিএনপি প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব পরাজিত হন।

উপ-নির্বাচরে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতা দখলে বিশ্বাসী নয়। ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। আমি ছাড়াও আরও দুটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তারা শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনী সব কাজ করছে, তাদের কোনো ধরনের বাধা নেই। তিনি বলেন, এ আসনের মানুষ আমাকে ভালোবেসে তাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে প্রয়াত সাবেক মন্ত্রী যেসব উন্নয়নমূলক কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছিলেন, তার অসমাপ্ত কাজগুলো বাস্তবায়নসহ সরকারের উন্নয়নমুখী কাজ করতে চাই।

বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এই এলাকার মানুষ বিএনপি সমর্থক। এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি নিশ্চয় জয়লাভ করবে। তিনি বলেন, সরকারকে বলতে চাই, এই আসানটি নেওয়ার জন্য বিতর্কিত হবেন না।

করোনা পরিস্থিতিতে উপনির্বাচনে কি ধরনের স্বাস্থ্য বিধি মানার বিষয়ে ঈশ্বরদীত ও আটঘরিয়ার নির্বাচন অফিসার রায়হান কুদ্দুস ও সিরাজুল ইসলাম জানান, প্রতিটা বুথের সামনে হাত ধোয়ার জন্য সাবান পানি ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার থাকবে। এছাড়া যারা ভোট গ্রহণ করবে তাদের হ্যান্ড গ্লাপ্স, মাস্ক ও মাথায় ক্যাপ পরার নির্দেশনা রয়েছে। ভোটারদের অবশ্যয় মাস্ক পরতে হবে এবং ভোটের লাইনে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াতে হবে। 

পাবনা সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখ জানান জানান, পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। পর্যাপ্ত পরিমান আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবে। সাথে থাকবে ৮ প্লাটুন বিজিবি। ১৮ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। 

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২ এপ্রিল পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক ভূমীমন্ত্রী শামসুর রহমান শরিফ ডিলু মারা গেলে পরবর্তীতে আসনটি শূণ্য ঘোষণার পর উপ-নির্বাচনের তফশীল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।