বৃষ্টির সময় আমাদের করণীয়

বৃষ্টির সময় আমাদের করণীয়

বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল হয়।

বৃষ্টি আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ অবতীর্ণ হয়। আপনি এককভাবে সাময়িক ক্ষতির সম্মুখীন হলেও আপনি কি জানেন যে, বৃহৎ জনগোষ্ঠী ও অন্যান্য সৃষ্টিকুল এর দ্বারা অবশ্যই উপকৃত হয়েছে? আপনি আপনার ক্ষুদ্র স্বার্থকে বড় করে দেখলেন আর বৃহৎ সৃষ্টিকুলের স্বার্থকে তুচ্ছ জ্ঞান করলেন।

পৃথিবীতে আপনার চেয়ে বড় স্বার্থবাদী আর কেউ নন। আল্লাহ তায়ালাই এ বৃষ্টি দান করেছেন এবং কোনো না কোনো প্রয়োজনকে সামনে রেখেই তা দান করেছেন। আল্লাহ অনর্থক কোনো কিছু করেন না।

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতা বিরাটভাবে বৃষ্টির সাথে নির্ভরশীল করে দিয়েছেন। আল্লাহর হাতে রয়েছে এর পুরো যোগসূত্র। যেখানে যখন যতটুকু চান বর্ষণ করান এবং যখন চান থামিয়ে দেন। কেউ একটুও জানে নাÑ কোথায় কখন কতটুকু বৃষ্টি হবে এবং কোন ভূখণ্ড তা থেকে বঞ্চিত হবে অথবা কোন ভূখণ্ডে বৃষ্টি উল্টো ক্ষতিকর প্রমাণিত হবে। বৃষ্টির কী উপকারিতা তা নিম্নের আয়াত থেকে আমরা শিখতে পারি।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তিনিই আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন। তারপর তার সাহায্যে সব ধরনের উদ্ভিদ উৎপাদন করেছেন। এরপর তা থেকে সবুজ শ্যামল ক্ষেত ও বৃক্ষ সৃষ্টি করেছেন। তারপর তা থেকে ঘন সন্নিবিষ্ট শস্যদানা উৎপাদন করেছেন। আর খেজুর গাছের মাথা থেকে খেজুরের কাঁদির পর কাঁদি সৃষ্টি করেছেন, যা বোঝার ভারে নুয়ে পড়ে। আর সজ্জিত করেছেন আঙ্গুর, জয়তুন ও ডালিমের বাগান। এসবের ফলগুলো পরস্পরের সাথে সাদৃশ্যও রাখে আবার প্রত্যেকে পৃথক বৈশিষ্ট্যেরও অধিকারী। এ গাছ যখন ফলবান হয় তখন এর ফল ধরা ও ফল পাকার অবস্থাটি একটু গভীর দৃষ্টিতে নিরীক্ষণ করো এসব জিনিসের মধ্যে ঈমানদারদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সূরা আনয়াম : ৯৯)

আয়াতটির শেষের দিকে বলা হয়েছে, ‘এসব জিনিসের মধ্যে ঈমানদারদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ সুতরাং কোনো মুমিন বৃষ্টিকে ঝামেলা সৃষ্টির কারণ বানাতে পারে না। বরং বৃষ্টির সময় রাসূলুল্লাহ সা:-এর কিছু সুন্নাহ নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
প্রথমত : বৃষ্টির সময় প্রথম কাজ কল্যাণের দোয়া পড়া। ‘আল্লাহুম্মা ছায়্যিবান নাফিআন’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! বৃষ্টিকে আমাদের জন্য উপকারী করে দিন। (সুনানে নাসায়ি) আপনার আন্তরিক দোয়ার কারণে আসন্ন বৃষ্টিপাতের যেকোনো সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে আল্লাহ রক্ষা করবেন এবং ক্ষতির পরিবর্তে তা উপকার নিয়ে আসবে।

দ্বিতীয়ত : বৃষ্টিতে কিছুক্ষণ দাঁড়ানো। বৃষ্টির উপকার পাওয়ার জন্য আপনার পোশাকে কিছু বৃষ্টির ফোঁটাতে বিজিয়ে দেয়ার চেষ্টা করুন। আনাস বিন মালেক রা: বর্ণনা করেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সা:-এর সাথে ছিলাম। তখন আমাদের ওপর বৃষ্টি শুরু হলো। রাসূলুল্লাহ সা: তাঁর পোশাকের কিছু অংশ উন্মোচন করলেন যাতে তাঁর গায়ে বৃষ্টি পড়ে। আমরা যখন আরজ করলাম তিনি কেন এমনটি করলেন, তখন তিনি জবাব দিলেন ‘কারণ এটি মহান রবের পক্ষ থেকে এসেছে।’ (মুসলিম)

তৃতীয়ত : বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল হয়। দোয়া কবুলের অনেক সময়ের মধ্যে বৃষ্টির সময়টি অন্যতম। সুতরাং এই সময় দোয়া করার সুযোগটি হাতছাড়া করবেন না। নবী সা: বলেন, দু’টি সময় দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না। আজানের পরে দোয়া এবং বৃষ্টির সময় দোয়া।’ (আল হাকিম, হাদিসটি সহিহ)

চতুর্থত : তীব্র বৃষ্টির সময় নিজেকে রক্ষার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া বাঞ্ছনীয়। ‘আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা অলা আলাইনা’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ আমাদের চার পাশে দাও আমাদের ওপরে নয়।’ (বুখারি)

পঞ্চম : সূরা রা’দ-এর ১৩ নম্বর আয়াত তিলাওয়াত করা। নবী সা: যখন বজ্রের শব্দ শুনতে পেতেন তখন তিনি কথা বলা ছেড়ে দিতেন এবং এই আয়াতটি তিলাওয়াত করতেন : যার অর্থ: “মেঘের গর্জন তাঁর প্রশংসাসহকারে পবিত্রতা বর্ণনা করে এবং ফেরেশতারা তাঁর ভয়ে কম্পিত হয়ে তাঁর তাসবিহ করে।’ (সূরা রা’দ : ১৩)

মেঘের গর্জন এ কথা প্রকাশ করে যে, যে আল্লাহ এ বায়ু পরিচালিত করেছেন, বাষ্প উঠিয়েছেন, ঘন মেঘরাশি একত্র করেছেন, এ বিদ্যুৎকে বৃষ্টির মাধ্যম বানিয়েছেন এবং এভাবে পৃথিবীর জন্য পানির ব্যবস্থা করেছেন তিনি যাবতীয় ভুল-ত্রুটি-অভাবমুক্ত, তিনি জ্ঞান ও শক্তির দিক দিয়ে পূর্ণতার অধিকারী। তাঁর গুণাবলি সব ধরনের আবিলতা থেকে মুক্ত এবং নিজের প্রভুত্বের ক্ষেত্রে তাঁর কোনো অংশীদার নেই। পশুর মতো নির্বোধ শ্রবণশক্তির অধিকারীরা তো এ মেঘের মধ্যে শুধু গর্জনই শুনতে পায় কিন্তু বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন সজাগ শ্রবণশক্তির অধিকারীরা মেঘের গর্জনে তাওহিদের গুরুগম্ভীর বাণী শুনে থাকে এবং উপরের চারটি আমল গ্রহণ করে।

ষষ্ঠতম : বৃষ্টির জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা। বৃষ্টি থামার পর এই দোয়া পড়া : ‘মুথিরনা বিফাদলিল্লাহ ওয়া রাহমাতিহি’ অর্থাৎ ‘আমরা আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা থেকে বৃষ্টি পেয়েছি।’ জায়েদ ইবনে খালিদ আল জুহানি রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, আল্লাহ বলেছেন, আমার বান্দাদের মধ্যে এমনও আছে, যারা আমার প্রতি বিশ্বাস নিয়ে এবং আমার প্রতি অবিশ্বাস নিয়ে জেগে ওঠে। যে বলেছিল যে আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণার কারণে আমাদের বৃষ্টিপাত হয়েছে, সে আমার প্রতি বিশ্বাসী এবং যে নক্ষত্রে বিশ্বাসী সে বলে নক্ষত্রের উত্থানের কারণে আমাদের বৃষ্টিপাত হয়েছে। সে আমার প্রতি অবিশ্বাস করেছে এবং তারকাদের প্রতি বিশ্বাস করেছে।’ (বুখারি : ৮১০)

সুতরাং আসুন, আল্লাহকে ভয় করি, বৃষ্টি যেন আল্লাহর রহমত হিসেবে আমাদের ওপর বর্ষিত হয় সেই দোয়া করি। বিশেষত রাসূলুল্লাহ সা: যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন সেভাবে যেন আমল করি।

জাফর আহমাদ : নিবন্ধকার ও ইসলামী গবেষক।