ডেঙ্গু মোকাবিলায় করণীয়

ডেঙ্গু মোকাবিলায় করণীয়

ফাইল ছবি

ডেঙ্গু মোকাবিলায় করণীয়
ডা. মুহাম্মদ আব্দুস সবুর

দেশে চলমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগ থেকে আতংকে পরিণত হয়েছে। বিশেষত ঢাকার সবাই এখন এ রোগে আতংকগ্রস্ত। জ্বর হলেই ডেঙ্গু কি না তা পরীক্ষা করতে হাসপাতালে ছুটছে মানুষ। তুলনামূলকভাবে ডেঙ্গু নতুন রোগ হলেও এবারই প্রথম হচ্ছে তা নয়। আগেও মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে এবং তা মোকাবিলাও করা হয়েছে। তবে এবার ডেঙ্গুর বিস্তৃতি ব্যাপক এবং ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাও বেশি। ইতোমধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে বেসরকারি হিসাবে মারা গেছে  ৯০  জনের মতো এবং এখন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়েছে। রাজধানীর বাইরেও ছড়িয়ে পড়ছে। 

ডেঙ্গু মহামারির পুরো বিষয়টি বিশ্লেষণ করলে ব্যবস্থাপনার ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। ডেঙ্গু রোগের বিস্তারকে আমাদের দুর্যোগ হিসাবে বিবেচনা করতে হবে। সাধারণত যে কোন দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা দু’ভাবে কাজ করি। একটি হলো দুর্যোগে যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদেরকে তাৎক্ষণিক ভাবে সহায়তা প্রদান করা। এ ক্ষেত্রে ডেঙ্গু আক্তান্ত রোগীর চিকিৎসা সেবা দেয়ার মাধ্যমে তাদের আরোগ্য লাভের ব্যবস্থা করা এবং যতটা পারা যায় রোগী মুত্যুর হার কমিয়ে আনা। 

দ্বিতীয়ত, নতুন করে যাতে আর কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত না হয়- সে ব্যবস্থা করা। দুটি ক্ষেত্রে যে ভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া উচিত তা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। সুচিন্তিত পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুিট বাতিল করা হয়েছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে প্রায় দুই সপ্তাহ যাবত। এ সময়ের মধ্যে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী যারা আছেন তারা সবাই ক্লান্ত-শ্রান্ত। যে কারনে হাসপাতালগুলোতে রোগীরা যেভাবে সেবা পাওয়ার আশা করছেন তা পাচেছন না। অপরদিকে পরিশ্রান্ত ডাক্তাররা যথাযথভাবে সেবা দিতে পারছেন না। একসাথে অসংখ্য রোগি আসার কারনে দেখা যাচ্ছে অনেক হাসপাতালে এক ধরনের বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে। 

ডেঙ্গুর এই দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য অধিক লোকবল প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় লোকবল একজন স্বাস্থ্যকর্মী বা একজন ডাক্তারকে ২৪ ঘন্টা কাজ না করে অন্যভাবে জোগান দেয়া যেতে পারে। যেমন ঢাকায় সরকারের নিয়ন্ত্রনাধীন যে মেডিকেল কলেজগুলো আছে যেমন ঢাকা মেডিকেল কলেজ, সোহরাওয়ার্দি মেডিকেল কলেজ, মিডফোর্ট মেডিকেল কলেজ। এ কলেজগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করে প্রভাষকদেরকে ডেঙ্গু মোকাবেলায় কাজে লাগানো যেতে পারে। ১৯৮৮ সালে আমরা ঢাকার বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক বিজ্ঞান (নিপসম) নামক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে এর ডাক্তারগণকে কাজে লাগিয়েছিলাম। 

মেডিকেল কলেজগুলো সাময়িক বন্ধ করে প্রভাষকদের কাজে লাগানোর পরও যদি আরো লোকবল লাগে তাহলে মেডিকেলের সিনিয়র স্টুডেন্টদের কাজে লাগানো যেতে পারে। তাছাড়াও নার্সিং কলেজগুলোর সিনিয়র স্টুডেন্টদেরকেও এ কাজে লাগানো যেতে পারে। 

এরপর নতুন করে যাতে আর কেউ ডেঙ্গুতে আক্তান্ত না হন সেজন্য সচেতনতামূলক কর্মসূচী নেয়া দরকার। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীদের কাজে লাগানো যেতে পারে। পাড়ায় মহল্লায় শিক্ষার্থী ও মহল্লাবাসীর সম্মিলিত প্রয়াসে এডিস মশার প্রজনন কেন্দ্রগুলো চিহ্নিত করা যেতে পারে। যেমন ছোট ছোট বদ্ধ পানির পাত্র পরিস্কার ও সার্বিক পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য সম্মিলিতভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন অভিযান চালানো যেতে পারে। 

ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে নতুন আরেক ধরনের সংকট দেখা যাচ্ছে । তা হলো ডেঙ্গু জ্বর পরীক্ষার কিট সংকট। আসলে জ্বর হলেই যে তা ডেঙ্গু হবে তা  কিন্তু নয়। এছাড়া  জ্বর হলেই পরদিন তা পরীক্ষা করলেই ডেঙ্গু ধরা পড়বে তাও নয়। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষা করতে হবে। ডাক্তার বললেই কেবল ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষা করানো উচিত। জ্বর হওয়া মাত্রই অনেকে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষা করেছেন অথচ তার ডেঙ্গু হয়নি। 
এ ধরনের প্রবনতার  কারনে নানাস্থানে ডেঙ্গু জ্বর নির্ণয়ক কিটের সংকট দেখা দিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগির পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না বা দেরি হচ্ছে। অথচ সামান্য জ্বরের কারনে পরীক্ষা করতে গিয়ে কিট শেষ হয়ে যাচ্ছে। 
যারা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সমন্বয় দরকার।  নতুন করে যাতে কেউ আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত না হয় সে জন্য সম্মিলিভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দিতে হবে। যাতে এডিস মশার প্রজনন স্থান ধ্বংস করা যায়। পরিকল্পিতভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রনের উদ্যেগ নিলে মহামারি রোধ করা সম্ভব হবে এবং আতংক দুর করা যাবে।