শিক্ষা নিয়ে হেলাফেলা নয়

শিক্ষা নিয়ে হেলাফেলা নয়

আবু জাফর

শিক্ষা-সংস্কৃতি হল যে কোন জাতির প্রাণ। জাতির মেরুদণ্ড এই শিক্ষা-সংস্কৃতিতে বহুবার আঘাত এসেছে কিন্তু কখনো তার প্রায়শ্চিত্ত হয়নি। একটি উন্নত মননশীল জাতি বিনির্মাণে দরকার মজবুত শিক্ষাগত অবকাঠামো। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে না সাজানো পর্যন্ত কোন জাতির উন্নয়নের চিন্তা করাটা বোকামি ।

পিএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল নিয়ে সারাদেশে কানাঘুষা হচ্ছে। শিক্ষা বিভাগের এই সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী কিনা তা সময়ই বলে দিবে। তবে আমরা সবাই জানি, এখন অফিস-আদালত খোলা, গার্মেন্টস- ফ্যাক্টরি খোলা, হাট-বাজারে চলে দেদারসে কেনা বেচা। এ স্থান গুলোতে কি পরীক্ষার্থীরা যাতায়ত করে না, ধরলাম তারা যাতায়াত করেন না, তো তাদের পরিবারের লোকজনও কি এ সমস্ত স্থানে যাওয়া-আশা করেন না? হ্যাঁ অবশ্যই করেন। তাহলে কি করে শুধু মাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা পরীক্ষা বন্ধ রাখলেই শিক্ষার্থীদের নিরাপদে রাখা যাবে এটা ভাবার বিষয়!

এবার পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষার আয়োজন হচ্ছে না। পঞ্চম শ্রেণীর অপেক্ষমাণ রেজিস্ট্রেশন করা পরীক্ষার্থীদের শুধু পাসের সার্টিফিকেট দেয়া হবে। তবে সেসব সার্টিফিকেটে কোনো জিপিএ বা গ্রেড পয়েন্ট উল্লেখ থাকবে না। তবে সার্টিফিকেটে উত্তীর্ণ লেখা থাকবে।

আর জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর যোগ করে তার অর্ধেক নম্বর এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে যদি কারো একটিতে মোট নম্বর কম হয়, তাহলে তাদের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে এবং যাদের দুটোতেই জিপিএ-৫ আছে তাদের এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ দেয়া হতে পারে। যারা এক অথবা দুই বিষয়ে ফেল করে পুনরায় পরীক্ষা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তাদের সবাইকে অটোপাস করানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। হাজার শিক্ষার্থীর জীবনের মোড় ঘুরে যায় এই এইচএসসি পরীক্ষায়। সে তখন নিজেকে চিনতে শুরু করে, নিজের জীবনের পেশা কি হবে এটা নিয়ে ভাবতে শুরু করে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই এ চিন্তা-ভাবনা গুলো জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার সময় আসার কথা না। তাই সে পরীক্ষাগুলো তত গুরুত্ব দিয়েও দেন না।

জেএসসি ও এসএসসিতে যারা জিপিএ-৫ পেয়েছে তাদের এইচএসসিতেও একই রেজাল্ট দেয়া হবে। আর যারা এক অথবা দুই বিষয়ে ফেল করে পুনরায় পরীক্ষা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তাদের ওই বিষয়গুলোতে পাস করিয়ে মোট জিপিএ দিয়ে রেজাল্ট প্রকাশ করা হবে। তবে আশার কথা হলো যে আন্তঃশিক্ষা সমন্বয়ক বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, এগুলো শুধুই পরিকল্পনা। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই।

আজকের এই শিক্ষার্থীদের শিকড় গেঁড়ে আছে ১৯৫২, ১৯৫৪, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৭১, ১৯৯০ এর মুক্ত স্বাধীন এক সম্প্রদায়ের নিকট। তারা কোন ভয়ে ভীত হয় নি। তাদের মেধার যোগ্য প্রমাণ দিয়েই পাড় পেয়েছিল সমস্ত দুর্যোগ-দুঃসময়। কিন্তু অনেকেই মনে করেন, দশকের পর দশক ডজন খানেক শিক্ষানীতিতেও একটি যুগোপযোগী শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষানীতির অভাব পূরন হয়নি।

একমুখী শিক্ষানীতি প্রণয়ন, শিক্ষাব্যয়-শিক্ষা উপকরণের মূল্য হ্রাস, আবাসিক-পরিবহন-বৃত্তি-গবেষণা ইত্যাদি সুবিধা বৃদ্ধি না করতে পারলে শিক্ষার যে উপকারী ফল পাবার কথা ছিল তা পেতে ব্যর্থ হবে গোটা জাতি। তাই এখনই শ্রেষ্ঠ সময় এগুলোকে ঢেলে সাজানোর। আশা করি টেকনিক্যাল টিম এমন একটি সিদ্ধান্ত জাতিকে দিবেন যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রোল মডেল হয়ে থাকবে।

 

আবু জাফর

শিক্ষার্থী,

বাংলা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়