রেফারেন্স না খুজে দক্ষ হন

রেফারেন্স না খুজে দক্ষ হন

ইমতিয়াজ আহমেদ

বাংলাদেশে একটি অন্যতম সমস্যা হলো বেকারত্ব। আর বর্তমানে চলমান করোনা মহামারীতে এ সমস্যা আরো প্রকট হয়েছে। যে হারে প্রতিবছর শিক্ষাজীবন শেষ করছে সে হারে সরকারী চাকুরীতে প্রবেশ করানো সম্ভবপর হচ্ছে। তাই মোট জনশক্তির সিংহভাগই প্রাইভেট খাতে তাদের কর্মসংস্থান করছে। প্রাইভেট খাতে রয়েছে বিভিন্ন শিল্প কারখানা, এনজিও, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নানা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।

প্রাইভেট খাতে চাকুরীর জন্যও অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। প্রায়ই একটা কথা শোনা যায় প্রাইভেট খাতে রেফারেন্স ছাড়া নাকি চাকুরী হয় না। এটা হয়তো কিছুটা ঠিক, বেশির ভাগই ঠিক নয়। প্রাইভেট চাকুরী পাবার জন্য শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতায় যথেষ্ট নয়। এর জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি অতিরিক্ত কিছু দক্ষতা প্রয়োজন। আর যেটি বর্তমান সময়ে খুবই অভাব।

 

এখনকার চাকুরিদাতারা এমন কর্মীর খোঁজ করেন যিনি নমনীয় হবেন অর্থাৎ তাকে যে কাজে দেওয়া হবে সে কাজ যথাযথভাবে করবেন। তাঁকে ক্রমাগত শেখার মানসিকতা থাকতে হবে। নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে জানা এবং দ্রুত সে প্রযুক্তিগুলো তাদের দক্ষতার সঙ্গে প্রয়োগ করতে সক্ষম হবেন এমন কর্মীই চান তাঁর। এ ধরনের কর্মী বাছাই করার ক্ষেত্রে তাই অনেক প্রতিষ্ঠান এখন অটোমেটেড সফটওয়্যার বা বট ব্যবহার করছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে কর্মীর নির্দিষ্ট বিষয়ে জ্ঞান বা নির্দিষ্ট সফটওয়্যারে দক্ষতা আর গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে না। এর চাইতে বরং কর্মীর সফটস্কিল বিশেষ বিবেচনায় ধরা হচ্ছে। এই সফট স্কিল হচ্ছে- কম্পিউটার ব্যবহারের দক্ষতা, ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা, যোগাযোগের দক্ষতা (Communication Skills), ভার্বাল কমিউনিকেশন, রাইটিং স্কিল্স যেকোনো সমস্যা সমাধানে দক্ষতা, কার্যকর যোগাযোগ দক্ষতা আর নেতৃত্বগুণ।

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন সেন্টার অন এডুকেশনের পরিচালক অ্যান্থনি কার্নাভেল বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে সব সময় একই জিনিস ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বারবার করার চেয়ে মানুষের দায়িত্ব আরও বেশি থাকে। কাজে নতুন মূল্য যোগ করে এমন কাজ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

 

বর্তমান সময়ে লেখাপড়া শেষ করে রেফারেন্স খুজতে থাকে। কোথায় কোন মামা, কাকা, খালু চাকুরী করে। কিন্তু প্রাত্যহিক জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতায় তার নাই, আর সে তা অর্জন করার কোন পদক্ষেপ নেয় না। শুধু মুখে মুখে বলে বেড়ায় একটা রেফারেন্স থাকলে হয়তো একটা চাকুরী হয়ে যেত। খুজতে খুজতে হয়তো কাছের কিংবা দুরসম্পর্কের একজন আত্মীয় পেয়ে গেল, সে হয়তো কোম্পানীতে ভালো একটা চাকুরী করে। তার সাথে যোগাযোগ করে একটা সিভি দেওয়া হলো। তিনিও সিভিটি নিয়ে রেখে দিলেন। তার কোম্পানীতে কোন সুযোগ তৈরি হলে সাবমিট করলেন। আর আপনিও সেই আশায় বসে থাকলেন। সেই আত্মীয় কবে ডাকবে, তবেই চাকুরীটা হবে।

 

হয়তোবা আপনাকে কোথাও পাঠানো হলো ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য। আপনি ইন্টারভিউতে ভালো ভাবে কথাও বলতে পারলেন না। এরপর আপনার কম্পিউটার ব্যবহারে দক্ষতা জানার জন্য কম্পিউটার টেস্ট দিতে বলা হলো, কিন্তু আপনি প্রথমেই বললেন আপনি কম্পিউটারের অফিস এপ্লিকেশন সম্পর্কে জানেন না। অনেক আগে কোর্স করেছিলেন তা ভুলে গেছেন। সেখানে আপনি কি বলবেন আর যার রেফারেন্স দিয়ে এসেছেন তার মান সম্মানটা কোথায় রাখলেন।

 

এক একটা কর্মী কোম্পানীর একটা ইটের মতো। প্রতিটি কর্মীর উপর কোম্পানী বা এনজিও’র উন্নতি নির্ভর করে। রেফারেন্স দিয়ে চাকুরী হলো, কিন্তু আপনার উপর অর্পিত দায়িত্বটুকু ঠিকঠাক মত পালন না করলে তো চাকুরী থাকবে না। তাহলে রেফারেন্স দিয়ে কি লাভ। আমরা মূলত বই নির্ভ শিক্ষায় শিক্ষিত। এই শিক্ষিত আমার মত আরো অনেকই আছে। কোম্পানীতে কি সবার চাকুরী হওয়া সম্ভব। শিক্ষার পাশাপাশি যাদের অন্যান্য দক্ষতা রয়েছে তাদেরই খুব সহজেই একটা চাকুরী হয়ে যায়।

 

এখন থেকে রেফারেন্স খোজা বাদ দিয়ে একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি চাকুরী ক্ষেত্রে সহায়ক এমন কিছু দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করুন। দক্ষ হলে চাকুরী পেতে আর রেফারেন্স প্রয়োজন হবে না।

 

লেখক: এইচআর এক্সিকিউটিভ, আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন

http://emtious.blogspot.com

http://www.facebook.com/emtious