জিয়া পরিষদ থেকে বেরিয়ে গেলেন ইবির ১৭ শিক্ষক

জিয়া পরিষদ থেকে বেরিয়ে গেলেন ইবির ১৭ শিক্ষক

ফাইল ছবি।

অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) জিয়া পরিষদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ জন শিক্ষক। রবিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন পদত্যাগকারী শিক্ষকরা।

জিয়া পরিষদের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করে তারা পদত্যাগ করেছেন বলে জানান তাঁরা। বিজ্ঞপ্তিতে তাঁরা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন যাবত জিয়া পরিষদ ইবি শাখা চরম অনিয়ম, অগণতান্ত্রিক চর্চা, স্বেচ্ছাচারিতা এবং কতিপয় ব্যক্তির স্বার্থে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যা জিয়া পরিষদের আদর্শ ও উদ্দেশ্যের পুরোপুরি বিপরীত। বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠনটির বাস্তবিক পক্ষে দৃশ্যত কার্যকর কোন ভূমিকা নেই। বরং প্রকারান্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দূর্নীতিগ্রস্থ প্রশাসনেরই একটি অংশে পরিণত হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি থাকাকালীন শিক্ষক সমিতি কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়েরী প্রকাশিত হয়, যেখানে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নাম বাদ দেয়া হয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এটিকে রেফারেন্স হিসেবে নিয়ে পরবর্তীতে ধারাবাহিকভাবে প্রতিষ্ঠাতার নাম বাদ দিয়ে ডায়েরী প্রকাশ করছেন। জিয়া পরিষদ এক্ষেত্রে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নাম জিয়া পরিষদের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়নি। ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস,  বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদৎ বার্ষিকী পালনের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে জিয়া পরিষদ নূন্যতম কোন কর্মসূচি গ্রহণের উদ্যোগ নেয়নি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার প্রতিবাদ করার ক্ষেত্রে কার্যকর কোন পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।

এ ছাড়াও জিয়া পরিষদ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কার্যকরি কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কয়েকজনের ইচ্ছা অনুযায়ী সংগঠনটি পরিচালিত হয়ে আসছে এবং তা সাধারণ সদস্যদের মধ্যে চরম ক্ষোভ, অসোন্তষ এবং অনাস্থার জন্ম দিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এসব অসন্তোষ থেকে জিয়া পরিষদের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করে তাঁরা পদত্যাগ করেছেন বলে জানান।

পদত্যাগ করা শিক্ষকরা হলেন, লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান, ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক  ড. এ. এস. এম. শরফরাজ নেওয়াজ, লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সেলিম, একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জুলফিকার হোসেন, ড. মুন্সী মর্তুজা আলী, ড.বেগম রোকসানা মিলি, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড.কাজী মোস্তফা আরীফ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক  ড.এম. এম. শরিফুল বারী, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক  ড. মো:  মিনহাজ উল হক,

আল- হাদীস এন্ড ইসলামিক ষ্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড.আবুল হুসাইন মোঃ নুরুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুর রহমান, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আ.ও.ম. আছাদুজ্জামান, আল-ফিকহ এন্ড লিগাল ষ্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ারুল ওহাব, লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এস. এম. শফিকুল আলম, ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান ও ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক দিলসাদ সুরমা।

এরআগে গত ৭ সেপ্টেম্বর জিয়া পরিষদের বাইরে গিয়ে সাদা দল গঠনের ঘোষণা দেন শিক্ষকদের এই অংশটি। লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমানকে আহবায়ক ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস এম শরফরাজ নেওয়াজকে সদস্য সচিব করে সাদা দলের কমিটি দেওয়া হয়। স্বাক্ষরবিহীন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন বিভাগের ২৬ জন শিক্ষককে তালিকাভূক্ত করে ওই কমিটি প্রকাশ করা হয়। তবে সম্মতি ছাড়াই কমিটিতে নাম দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন কয়েকজন শিক্ষক।

এ বিষয়ে লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান বলেন, আমরা আমাদের অভিযোগগুলো বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছি। অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারীতার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপি ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সম্পর্কিত বিভিন্ন কাজে জিয়া পরিষদের ইতিবাচিক কোনো ভূমিকা না থাকায় আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সাদা দল গঠন সম্পর্কে তিনি বলেন, সাদা দল গঠনের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নাই। সাদা দল ডানপন্থী শিক্ষকদের একটি প্লাটফর্ম।

জিয়া পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসাইন বলেন, দেশ ও দলের ক্রান্তিলগ্নে তাঁদের এমন সিদ্ধান্ত খুবই নিন্দনীয়। মূলত দলের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যেই তাঁরা এমনটা করেছেন। পদত্যাগকারীদের অনেকেই এর আগেও দলে ভাঙ্গন সৃষ্টি করেছেন। মূলত আওয়ামীপন্থীদের সাথে মিলে সুবিধা ভোগ করার জন্যই তারা দল থেকে বেরিয়ে নতুন দল সৃষ্টি করেছেন। কমিটির মেয়াদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা গত নভেম্বরে দায়িত্ব পেয়েছি। তাই মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রশ্নই উঠেনা। তাঁদের সবগুলো অভিযোগই ভিত্তিহীন ও অযৌক্তিক।