যুদ্ধ ছাড়াই বিধ্বস্ত হচ্ছে ভারতের জঙ্গিবিমানগুলো

যুদ্ধ ছাড়াই বিধ্বস্ত হচ্ছে ভারতের জঙ্গিবিমানগুলো

সংগৃহীত

কোনোরকম যুদ্ধ অভিযান ছাড়াই আকাশে ওড়ার সময় বিদ্ধস্ত হয়ে পড়ছে ভারতীয় যুদ্ধবিমানগুলো। চলতি বছরেরই পৃথক ১০টি ঘটনায় অন্তত ১১ যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে এক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। এসব দুর্ঘটনায় পাইলটসহ কমপক্ষে ২২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ওই দুর্ঘটনাগুলো ও ক্ষয়ক্ষতির হিসাব দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি ২০১৯ সালকে ভারতীয় বিমান বাহিনীর জন্য একটি রক্তাক্ত বছর আখ্যা দিয়েছে।

পুরো বছরজুড়েই নিয়মিত বিরতি দিয়ে বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে ভারতে। গত ৮ আগস্ট রাতে সুখোই এসইউ এমকেআই যুদ্ধবিমানটি টহলরত অবস্থায় বিধ্বস্ত হয়। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের আসাম রাজ্যের তেজপুরে।

বিভিন্ন ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, আকাশে ওড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে বিধ্বস্ত হয়ে তেজপুরের একটি ধান ক্ষেতে গিয়ে পড়ে বিমানটির ধ্বংসাবশেষ। এর দুই পাইলট সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও একজন এতোটাই আহত হয়েছেন যে ভবিষ্যতে আর বিমান চালাতে পারবেন না তিনি।

গত ৩ জুন ১৩ জন আরোহীসহ নিখোঁজ হয়ে যায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর এএন-৩২ পরিবহন বিমান। কয়েক দিন তল্লাশি অভিযান চালানোর বিধ্বস্ত বিমানটি উদ্ধার করা হয়। চীন সীমান্তবর্তী আসামের জোরহাটের মেচুকা বিমানক্ষেত্রে যাওয়ার পথে এটি বিধ্বস্ত হয়।

চলতি বছরের মার্চ মাসে দুটো 'মিগ' যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয় ভারতীয় বিমানবাহিনীর। পাখির সঙ্গে ধাক্কা লেগে গত ৮ মার্চ একটি মিগ-২১ ভূপাতিত হয় রাজস্থানের বিকানারে। একই মাসের শেষ দিনে যোধপুরে বিধ্বস্ত হয় মিগ-২৭। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সেটি বিধ্বস্ত হয় বলে জানায় ভারতীয় বিমানবাহিনী সূত্র।

ভারতীয় বিমানবাহিনীর সবচেয়ে ভয়াবহ সময়টি ছিল ফেব্রুয়ারি মাস। এ মাসে ছয়টি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনা হজম করতে হয়েছে তাদের। সময়টি ছিল বালাকোট সীমান্তে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে টানটান উত্তেজনার।

১ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের সময় বিধ্বস্ত হয় ভারতীয় বিমান বাহিনীর মান-উন্নত মিরেজ ২০০০। এ ঘটনায় দুই পাইলট নিহত হন।

১২ ফেব্রুয়ারি কোনো কারণ ছাড়াই রাজস্থানের জয়সালমারে বিধ্বস্ত হয় মিগ-২৭। তবে ভাগ্যগুণে পাইলট বেঁচে ফেরেন।

১৯ ফেব্রুয়ারি ব্যাঙ্গালুরের ইয়েলাহানকা বিমান ঘাঁটির কাছে বিধ্বস্ত হয় ভারতীয় বিমান কসরত (অ্যাক্রোবেটিক) দল সূর্য কিরণের দুটি বিমান। এয়ার ইন্ডিয়া শোর মাত্র একদিন আগে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একজন পাইলটের মৃত্যু হয়।

একই মাসের ২৭ ফেব্রুয়ারি মিগ-২১ ও এমআই-১৭ভি৫ হেলিকপ্টার হারায় ভারত। অবশ্য এ দুটি ঘটনা যান্ত্রিক ত্রুটি বা অন্য কোনো কারণে ঘটেনি।

পাকিস্তান বিমান বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে ভারতীয় মিগ-২১ কে ভূপাতিত করে পাকিস্তান। যদিও দুটি ভারতীয় মিগ ভুপাতিত করার দাবি পাকিস্তান করলেও ভারত থেকে তা একটি বলে জানানো হয়। পাকিস্তান সীমান্তে ভূপাতিত মিগ-২১’এর পাইলট অভিনন্দনকে আটক করতে সক্ষম হয় পাকিস্তান। পরে ৫৮ ঘণ্টা কারাগারে রাখার পর তাকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করে পাক সরকার।

একই দিনে নিজেদের ভুলেই বিধ্বস্ত হয় ভারতীয় বিমান বাহিনীর এমআই-১৭ভি৫ হেলিকপ্টার। বালাকোট সীমান্ত থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে ভারতের আকাশে এ ঘটনা ঘটে। ভারতীয় বিমান প্রতিরক্ষা বিভাগ থেকে ওই হামলা চালানো হয় বলে খবর। এ ঘটনায় ছয় সেনা সদস্য এবং ভূমিতে এক বেসামরিক নাগরিকসহ মোট সাতজন প্রাণ হারান।

মূলত, জানুয়ারি মাস থেকেই ভারতীয় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটেছে। ২৮ জানুয়ারি উত্তর প্রদেশের কুশিনগরে তাদের জাগুয়ার বিমান আকাশে ওড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে বিধ্বস্ত হয়। গোরখাপুর বিমান ঘাঁটি থেকে প্রশিক্ষণের জন্য আকাশে উড়েছিল বিমানটি।

কারিগরি ত্রুটির কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানায় ভারতীয় বিমান বাহিনী সূত্র।