কুরআনের ধারাবাহিক তাফসীর (সূরা আল বাকারাহ # ২০৬ - ২১০ আয়াত)

কুরআনের ধারাবাহিক তাফসীর (সূরা আল বাকারাহ # ২০৬ - ২১০ আয়াত)

কুরআনের ধারাবাহিক তাফসীর। নিজস্ব ছবি

তাফসীর হলো আল-কুরআনের আয়াতসমূহের অন্তর্নিহিত শিক্ষা, বিধান ও উদ্দেশ্যের বিশদ ব্যাখ্যা। এর মাধ্যমে মুমিনরা আল্লাহর হেদায়েতের আলোতে জীবনকে সাজাতে সক্ষম হয়। মহান রব আমাদেরকে কুরআন বুঝে সে অনুযায়ী চলার সৌভাগ্য দিন।

*** গত সংখ্যায় প্রকাশিতের পর... 

সূরা আল বাকারাহ

২০৬ - ২১০ আয়াত

Bismillah

وَإِذَا قِيلَ لَهُ ٱتَّقِ ٱللَّهَ أَخَذَتْهُ ٱلْعِزَّةُ بِٱلْإِثْمِ ۚ فَحَسْبُهُ جَهَنَّمُ ۚ وَلَبِئْسَ ٱلْمِهَادُ ﴿٢٠٦﴾

২০৬ ) আর যখন তাকে বলা হয়, আল্লাহকে ভয় করো তখন তার আত্মাভিমান তাকে পাপের পথে প্রতিষ্ঠিত করে দেয়, এই ধরনের লোকের জন্য জাহান্নামই যথেষ্ট এবং সেটি নিকৃষ্টতম আবাস।

وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْرِي نَفْسَهُ ٱبْتِغَآءَ مَرْضَاتِ ٱللَّهِ ۗ وَٱٱللَّهُ رَءُوفٌۢ بِٱلْعِبَادِ ﴿٢٠٧﴾

২০৭ ) অন্যদিকে মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অভিযানে যে নিজের প্রাণ সমর্পণ করে। এই ধরনের বান্দার ওপর আল্লাহ‌ অত্যন্ত স্নেহশীল ও মেহেরবান।

يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا ٱدْخُلُوا فِي ٱلسِّلْمِ كَآفَّةًۭ وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَٰتِ ٱلشَّيْطَـٰنِ ۚ إِنَّهُۥ لَكُمْ عَدُوٌّۭ مُّبِينٌۭ ﴿٢٠٨﴾

২০৮ ) হে ঈমানদারগণ! তোমরা পুরোপুরি ইসলামে প্রবেশ করো ২২৬এবং শয়তানের অনুসারী হয়ো না, কেননা সে তোমাদের সুস্পষ্ট দুশমন।

فَإِن زَلَلْتُم مِّنۢ بَعْدِ مَا جَآءَتْكُمُ ٱلْبَيِّنَـٰتُ فَٱعْلَمُوٓا أَنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌۭ حَكِيمٌۭ ﴿٢٠٩﴾

২০৯ ) তোমাদের কাছে যে সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন হিদায়াত এসে গেছে তা লাভ করার পরও যদি তোমাদের পদস্খলন ঘটে তাহলে ভালোভাবে জেনে রাখো আল্লাহ‌ মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। ২২৭  

هَلْ يَنظُرُونَ إِلَّآ أَن يَأْتِيَهُمُ ٱللَّهُ فِي ظُلَلٍۢ مِّنَ ٱلْغَمَـٰمِ وَٱلْمَلَـٰٓئِكَةُ وَقُضِىَ ٱلْأَمْرُ ۚ وَإِلَى ٱللَّهِ تُرْجَعُ ٱلْأُمُورُ ﴿٢١٠﴾

২১০ ) (এই সমস্ত উপদেশ ও হিদায়াতের পরও যদি লোকেরা সোজা পথে না চলে, তাহলে) তারা কি এখন এই অপেক্ষায় বসে আছে যে, আল্লাহ‌ মেঘমালার ছায়া দিয়ে ফেরেশতাদের বিপুল জমায়েত সঙ্গে নিয়ে নিজেই সামনে এসে যাবেন এবং তখন সবকিছুর মীমাংসা হয়ে যাবে? ২২৮   সমস্ত ব্যাপার তো শেষ পর্যন্ত আল্লাহরই সামনে উপস্থাপিত হবে।

Islamic Image 1 Islamic Image 2 Islamic Image 3
"إِنَّ اللَّهَ مَعَ الَّذِينَ اتَّقَوْا وَالَّذِينَ هُم مُّحْسِنُونَ"
— নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের সাথেই আছেন, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে ও সৎকর্ম করে।
(সূরা নাহল ১৬:১২৮)

*** টিকা নির্দেশিকাঃ

২২৬.

অর্থাৎ কোন প্রকার ব্যতিক্রম ও সংরক্ষন ছাড়াই, কিছু অংশকে বাদ না দিয়ে এবং কিছু অংশকে সংরক্ষিত না রেখে জীবনের সমগ্র পরিসরটাই ইসলামের আওতাধীন করো। তোমাদের চিন্তা-ভাবনা, আদর্শ, মতবাদ, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা, আচরণ, ব্যবহারিক জীবন, লেনদেন এবং তোমাদের সমগ্র প্রচেষ্টা ও কর্মের পরিসরকে পুরোপুরি ইসলামের কর্তৃত্বাধীনে আনো। তোমাদের জীবনের কিছু অংশে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলবে আর কিছু অংশকে ইসলামী অনুশাসনের বাইরে রাখবে, এমনটি যেন না হয়।

২২৭ .

অর্থাৎ তিনি প্রচণ্ড শক্তির অধিকারী এবং তিনি জানেন কিভাবে অপরাধীদের শাস্তি দিতে হয়।

২২৮.

এখানে উল্লেখিত শব্দগুলো যথেষ্ট চিন্তার খোরাক যোগায়। এর ফলে একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্য সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ দুনিয়ায় মানুষের পরীক্ষা কেবলমাত্র একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে চলছে। সত্যকে না দেখে সে তাকে মানতে প্রস্তুত কি না? আর মেনে নেয়ার পরও তার মধ্যে সত্যকে অমান্য করার ক্ষমতা ও সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও স্বেচ্ছায় তার আনুগত্য করার মতো নৈতিক শক্তি তার আছে কি না? কাজেই মহান আল্লাহ‌ নবী প্রেরণ, আসমানী কিতাব অবতরণ এমন কি মুজিযাসমূহের ক্ষেত্রেও বুদ্ধি-বিবেকের পরীক্ষা ও নৈতিক শক্তি যাচাই করার ব্যবস্থা রেখেছেন। কখনো তিনি সত্যকে এমনভাবে আবরণমুক্ত করে দেননি যার ফলে মানুষের পক্ষে তাকে মেনে নেয়া ছাড়া আর কোন উপায়ই থাকেনি। কেননা এরপর তো আর পরীক্ষার কোন অর্থই থাকে না এবং পরীক্ষায় সাফল্য ও ব্যর্থতা অর্থহীন হয়ে পড়ে। তাই এখানে বলা হচ্ছে, সেই সময়ের অপেক্ষায় থেকো না যখন আল্লাহ‌ ও তাঁর রাজ্যের কর্মচারী ফেরেশতাগণ সামনে এসে যাবেন। কারণ তখন তো সমস্ত ব্যাপারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। ঈমান আনা ও আনুগত্যের শির অবনত করার মূল্য ও মর্যাদা ততক্ষণই দেয়া হবে যতক্ষণ প্রকৃত সত্য মানুষের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হবে না কিন্তু মানুষ শুধুমাত্র যুক্তি-প্রমাণের মাধ্যমে তাকে গ্রহণ করে নিজের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেবে এবং নিছক সত্য উপলব্ধির মাধ্যমে তার আনুগত্য করে নিজের নৈতিক শক্তির প্রমাণ দেবে। অন্যথায় যখন প্রকৃত সত্য সকল প্রকার আবরণ মুক্ত হয়ে সামনে এসে দাঁড়াবে, মানুষ চর্মচক্ষে আল্লাহকে দেখবে, তাঁর মহাপ্রতাপ ও পরাক্রমের সিংহাসনে সমাসীন, সীমাহীন এ বিশ্ব সংসারের বিশাল রাজত্ব তাঁর নির্দেশে পরিচালিত হতে দেখবে, ফেরেশতাদের দেখবে আকাশ ও পৃথিবীর ব্যবস্থাপনায় প্রতি মুহূর্তে সক্রিয় এবং মানুষের এ সত্তাকে আল্লাহর প্রচণ্ড শক্তির বাঁধনে একান্ত অসহায় দেখতে পাবে-এসব কিছু চর্মচক্ষে প্রত্যক্ষ করার পর যদি কেউ ঈমান আনে ও সত্যকে মেনে চলতে উদ্যত হয় তাহলে তার এ ঈমান আনার ও সত্যকে মেনে চলার আকাংখার কোন দামই নেই। সে সময় কোন পাক্কা কাফের ও নিকৃষ্টতম অপরাধীও অস্বীকার ও নাফরমানি করার সাহস করবে না। আবরণ উন্মোচন করার মুহূর্ত আসার আগে ঈমান আনার ও আনুগত্য করার সুযোগ রয়েছে। আর যখন সে মুহূর্তটি এসে যায় তখন আর পরীক্ষাও নেই, সুযোগও নেই। বরং তখন চূড়ান্ত মীমাংসা ও ফায়সালার সময়।

*** চলমান ***

- সংগৃহিত