নব্য, আদি, অভিবাসী ঝামেলায় পশ্চিমবঙ্গে ভোট কমবে বিজেপির?

নব্য, আদি, অভিবাসী ঝামেলায় পশ্চিমবঙ্গে ভোট কমবে বিজেপির?

নব্য, আদি, অভিবাসী ঝামেলায় পশ্চিমবঙ্গে ভোট কমবে বিজেপির?

আমরা আদি ও নব্য বিজেপির অনেক কথা প্রচুর শুনেছি। কিন্তু মালদহে পা দিয়ে ‘অভিবাসী বিজেপি’ শব্দটা প্রথম শুনি। আদি অর্থ যারা গোড়া থেকেই বিজেপি করছেন। তাদের অনেকেই সঙ্ঘ পরিবারের প্রশিক্ষণ পাওয়া ও নিয়মিত শাখায় গিয়েছেন। নব্য মানে তৃণমূল, কংগ্রেস, সিপিএম থেকে যারা বিজেপিতে এসেছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ পদ পাচ্ছেন বা প্রার্থী হচ্ছেন।

আর অভিবাসী হলো, যারা পশ্চিমবঙ্গের বাইরে থাকেন, ভোট এলে প্রার্থী হয়। ইংরেজবাজারের প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীকে দলের নেতা-কর্মীদের একাংশ বলছেন, তিনি অভিবাসী বিজেপি। অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি প্রার্থী হলে মালদহে আসেন। লোকসভা ভোটে প্রার্থী হয়েছিলেন। হেরে আর মালদহে আসেননি।

এবার প্রার্থী হিসেবে তার নাম ইংরেজবাজারে আছে। নাম ঘোষণার এক সপ্তাহ পরেও তিনি এখনো আসেননি বা আসতে পারেননি। কারণ, তাকে প্রার্থী করা নিয়ে প্রবল প্রতিবাদ হচ্ছে সেখানে। পশ্চিমবঙ্গের অনেক জেলাতেই নতুনদের প্রার্থী করা নিয়ে গোলমাল কম হচ্ছে না।

প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, দলের পদ ছাড়া, দল ছেড়ে দেয়া, বিজেপি অফিস ভাঙচুর, রাস্তায় টায়ার পোড়ানো সবকিছুই হয়েছে এলাকগুলোয়।

দমদমে একসময়ে দু’বার লোকসভা নির্বাচনে জিতেছিলেন পরলোকগত বিজেপি নেতা তপন সিকদার। তার ওই এলাকায় ভালো প্রভাব ছিল। তার ভাইপো সৌরভ বিজেপি করেন। কিন্তু তিনি প্রার্থী হতে পারেননি। ক্ষোভে তিনি দলের সব পদ ছেড়ে দিয়েছেন। কয়েকজন নেতা তো দলই ছেড়ে দেয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।

মালদহে বিজেপিতে আদি, নব্য, অভিবাসীদের বিরোধ তীব্র হয়েছে। এই ঝামেলার জেরে শ্রীরূপা ইংরেজবাজারে পৌঁছাতে পারেননি বলে দলের নেতাদের একাংশ জানিয়েছেন। বিজেপি সেখানে দেয়াল দখল করে পদ্মফুল রেখেছে, কিন্তু শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীর নামে দেয়াল লিখন হয়নি বললেই চলে। বিজেপির জেলা সভাপতি গোবিন্দ মণ্ডল বলেছেন, মালদহে কিছু জায়গায় গোলমাল হয়েছে এটা ঠিক। তবে এখন আর হচ্ছে না। এই গোলমাল বিজেপির সংস্কৃতির সাথে যায় না। কর্মীরাও তা বুঝতে পেরেছেন।

শ্রীরূপা কেন আসেননি? এ বিষয়ে গোবিন্দ মণ্ডল বলেছেন, তিনি যথাসময়ে আসবেন। বিজেপি কর্মীরা তাকে সবরকম সাহায্য করবে। কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আদি বিজেপির এক নেতা জানিয়েছেন, ওটা মানা যাচ্ছে না। যারা প্রথম থেকে বিজেপি করছেন, তারা মার খেয়ে, যাবতীয় অত্যাচার সহ্য করে দল করবেন, আর প্রার্থী হওয়ার বেলায় নব্য বা অভিবাসী নেতারা প্রাধান্য পাবেন, এটা হয় না। প্রার্থী বদল না হলে বিজেপির একাংশ অন্যদিকে ভোট দিতে পারেন, সেই হুমকিও তারা দিচ্ছেন।

বিজেপি নেতা মানবেন্দ্র চক্রবর্তী জানিয়েছেন, যেভাবে প্রার্থী দেয়া হয়েছে, তা মেনে নেয়া যায় না। এর ফলে বিজেপির ভোট কমার সম্ভাবনা আছে।

বোঝা যাচ্ছে, ক্ষোভ-বিক্ষোভ যথেষ্ট। এর জন্য ভোট কম হবে বলে বিজেপি নেতারাই মনে করছেন। এটা নিয়েও দুই রকম তত্ত্ব আছে। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, ক্ষোভ-বিক্ষোভ হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা মিটে যায়। ভোটে তার প্রভাব পড়ে না। লোকসভা নির্বাচনই তার প্রমাণ। তখনও প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ ছিল। কিন্তু তার প্রভাব ভোটে পড়েনি। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, লোকসভা ও বিধানসভার হিসাব আলাদা। বিধানসভায় একটু জনপ্রিয় নেতা অনেক হিসাব বদলে দিতে পারেন। আর বিজেপি হলো কর্মীনির্ভর দল। সেখানে কর্মীরা বসে গেলে, দল বিপাকে পড়তে বাধ্য।আর এই ছবিটা শুধু মালদহে নয়, পশ্চিমবঙ্গের অনেক জেলাতেই দেখা যাচ্ছে।

সূত্র : ডয়চে ভেলে