মিয়ানমারে ১৯ বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড

মিয়ানমারে ১৯ বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড

মিয়ানমারে ১৯ বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা দেশটিতে হত্যার দায়ে ১৯ বিক্ষোভকারীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। শুক্রবার সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত মাওয়াদ্দি টিভিতে প্রচারিত খবরে এই তথ্য জানানো হয়।সামরিক অভ্যুত্থানের পর বিক্ষোভ মোকাবেলায় মিয়ানমারে এটিই প্রথম মৃত্যুদণ্ডের আদেশ।

খবরে বলা হয়, গত ২৭ মার্চ দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনের উত্তর ওকালাপা ডিস্ট্রিক্টে সেনাবাহিনীর এক ক্যাপ্টেনের সহযোগীকে হত্যার দায়ে সামরিক আদালতে এই ১৯ ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। দণ্ডিতদের মধ্যে ১৭ জন বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।

অন্যদিকে মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলীয় শহর বাগোতে শুক্রবার রাত থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর দমন অভিযানে অন্তত ৬০ জন নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রেডিও ফ্রি এশিয়ার (আরএফএ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

বাগোর বিভিন্ন সড়কে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের তৈরি ব্যারিকেড সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ভাঙতে এলে সংঘর্ষে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ ও সৈন্যরা বৃষ্টির মতো বাগোর সড়কে গুলি ও গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। নিহতদের লাশ তারা স্থানীয় প্যাগোডা ও স্কুল মাঠে জড়ো করে রাখে।এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, 'আমাদের এলাকার লোকজন জানত ওরা আসবে এবং এর জন্য রাতভর অপেক্ষা করছিল।'

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরএফএকে তিনি বলেন, 'সৈন্যরা ভারী অস্ত্র ব্যবহার করেছে। এমনকি আমরা মর্টার শেলও পেয়েছি। মেশিনগান থেকে প্রচুর গুলি করা হয়েছে। তাজা গুলির পাশাপাশি সৈন্যরা গ্রেনেড লাঞ্চার ব্যবহার করছিল বলা হচ্ছে।'নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আরএফএর প্রতিবেদনে জানানো হয়, অভ্যুত্থানের পর থেকে সেনা শাসনবিরোধী বিক্ষোভে শুক্রবার পর্যন্ত অন্তত ছয় শ' ৫০ জন নিহত হয়েছেন।

অপরদিকে মিয়ানমারের অবস্থা পর্যবেক্ষণকারী থাইল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস (এএপিপি) তাদের শুক্রবারের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শুক্রবার পর্যন্ত সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে অন্তত ৬১৮ জন নিহত হয়েছেন।

সংস্থাটি আরো জানায়, বিক্ষোভ সংশ্লিষ্টতায় সামরিক জান্তার হাতে দুই হাজার নয় শ' ৩১ জন বন্দী রয়েছে। এছাড়া গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে আরো পাঁচ শ' ২০ জনের নামে।

১ ফেব্রুয়ারি তাতমাদাও নামে পরিচিত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থান ঘটায় এবং প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিসহ রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করে। সাথে সাথে দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিতর্কের জেরে এই অভ্যুত্থান ঘটায় সামরিক বাহিনী।সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরেই বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা অং সান সু চিসহ বন্দী রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির পাশাপাশি সামরিক শাসন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছেন।

সূত্র : রয়টার্স ও রেডিও ফ্রি এশিয়া