মহান মে দিবস যেন বন্দি অপ্রতিরোধ্য মহামারীতে

মহান মে দিবস যেন বন্দি অপ্রতিরোধ্য মহামারীতে

মহান মে দিবস যেন বন্দি অপ্রতিরোধ্য মহামারীতে

সাদিদ আব্দুল হক-

মহান "মে দিবস"। ১৮৯০ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এর আগের বছর ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই এটি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হয়। প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোতে শ্রমজীবী মানুষের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের প্রতি সম্মান জানিয়ে ১লা মে দিবসকে 'আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।

মেহনতি মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় রক্তাক্ত সংগ্রামের গৌরবোজ্জল ইতিহাস সৃষ্টির দিন। এটি শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলন- সংগ্রামের অনুপ্রেরণার উৎস। রয়েছে শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্ত হয়ে সমাজতন্ত্র গড়ে তোলার দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস। শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলনের স্পষ্ট চিত্র রয়েছে ইতিহাসের পাতায়। ন্যায্য অধিকার আদায়ে খুবই কঠিন এ পথটি বেছে নিয়েছিল সে সময়ের শ্রমজীবীরা। 

১৮৮১ সালের নভেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠিত হয় "আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার"।  ১৮৮৪ সালের ৭ অক্টোবরে এর  চতুর্থ সম্মেলনে এটি এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। গৃহীত পদক্ষেপে বলা হয়, ১৮৮৬ সালের ১মে থেকে সব শ্রমজীবী মানুষ দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কোনভাবেই কাজ করবে না। এরই প্রেক্ষিতে ১৮৮৬ সালের ১লা মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমের উপযুক্ত পারিশ্রমিক এবং আট ঘন্টা কাজের দাবিতে প্রায় পাঁচ লক্ষ শ্রমিক প্রত্যক্ষভাবে ধর্মঘট ও আন্দোলনে জমায়েত হন। শ্রমিকদের এই বিশাল বিক্ষোভসমুদ্র দেখে ভীত হয়ে পড়ে শাসকদল।

৩ মে ম্যাককর্মিক হার্ভাস্টার কারখানায় পুলিশের আক্রমণে রক্তে রঞ্জিত হয় ৬ নিরীহ শ্রমিক। ইতিহাসের পাতায় চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে শ্রমিকদের সেই আত্মত্যাগের ঘটনা। ৪ মে হে মার্কেট স্কোয়্যারে আবারও বিক্ষোভ সমাবেশ ও আন্দোলনের ডাক দেয় শ্রমিকরা। তাদেরকে ঘিরে থাকা পুলিশের প্রতি এক অজ্ঞাতনামা বোমা আসলে পুলিশ শ্রমিকদের ওপর বৃষ্টির মত গুলিবর্ষণে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এতে প্রায় ১০-১২ জন শ্রমিক শহিদ হন। শুরু হয়ে যায় শ্রমিকদের প্রতি পুলিশের চরম নির্যাতন। গ্রেফতার করা হয় চার শ্রমিক নেতাকে। বিচারের নামে শুরু করে প্রহসন, জারি হয় ফাঁসির আদেশ।

শ্রমিকদের এই আত্মত্যাগের ঘটনা পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিক-জনতার বিশাল ঐক্য গড়ে ওঠে।  তীব্র তোপের মুখে পড়ে বাধ্য হয়ে আট ঘণ্টা কাজের দাবি মেনে নেয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। পরবর্তীতে শ্রমিকদের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে ১লা মে 'মে দিবস' হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হয়ে সেই থেকে প্রতিবছর পালিত হয়ে আসছে।
 
বিশ্ব আজ নিস্তব্ধ মহামারী করোনার কবলে পড়ে। প্রাণনাশকারী এই করোনা যেন দিন দিন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষকে ঘরবন্দি করেছে অদৃশ্য এ ভাইরাস। আর্থিক দুরবস্থায় পতিত হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষ। সাধারণ ও খেটে খাওয়া মানুষ পেটের ক্ষুধা নিবারণের দুশ্চিন্তায় বিভোর। জীবন এগিয়ে যাচ্ছে যেন কোন এক অন্ধকারের দিকে। 

প্রতিবছর বাংলাদেশ সহ বিশ্বের প্রায় ৮০ টি দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালিত হয়ে আসলেও পরিস্থিতি ভিন্নতা এনে দিয়েছে। করোনা ভাইরাস মহামারীর ফলে শেষ দু'বছর "মে দিবস" সংকটাপন্ন এবং বন্দি। মে দিবসে যেখানে শ্রমজীবী মানুষের কাজ না করে পারিশ্রমিক পাওয়ার কথা, কিন্তু নিয়তির খেলায় শ্রমজীবী সহ সকল মানুষ অদেখা ভাইরাসের নিকট আজ জিম্মি।

লেখক: শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।