চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতলো চেলসি

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতলো চেলসি

ছবি : সংগৃহীত

কেই হাভার্টজের একমাত্র গোলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটিকে ১-০ ব্যবধানে পরাজিত করে শিরোপা জিতেছে চেলসি। পোর্তোর এস্তাদিও ডো ড্রাগাওর মাঠে অনুষ্ঠিত ফাইনালে বিরতির তিন মিনিট আগে জয়সূচক গোলটি করেন জার্মান তারকা হাভার্টজ।
পুরো ম্যাচেই টাচলাইনে চেলসি বস থমাস টাচেলকে বেশ উজ্জীবিত দেখা গেছে। ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার সাথে সাথে ডাগ আউট থেকে চেলসির খেলোয়াড়দের সাথে টাচেলও দৌঁড়ে গিয়ে শিষ্যদের সাথে শিরোপা জয় উদযাপন করেছেন। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে অধিনায়ক কেভিন ডি ব্রুইনার ইনজুরি কিছুটা হলেও সিটি বস পেপ গার্দিওলাকে দু:শ্চিন্তায় ফেলেছে।
লন্ডনের ক্লাবটি প্রিমিয়ার লিগে টেবিলের চতুর্থ স্থানে থেকে মৌসুম শেষ করেছে। শিরোপা জয়ী সিটিজেনদের থেকে ১৯ পয়েন্টের সুস্পষ্ট ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে লিগ শেষ কওে চেলসি । তবে গত ছয় সপ্তাহে গার্দিওলার দলের বিপক্ষে চেলসির এটি ষষ্ঠ জয়। এপ্রিলে এফএ কাপের সেমিফাইনালে জয়ী হয়ে ব্লুজরা সিটির ঘরোয়া ট্রেবল জয়ের স্বপ্ন গুড়িযে দিয়েছিল। একইসাথে ম্যানচেস্টারে লিগ ম্যাচে জয়ী হয়ে সিটির শিরোপা জয়ের উৎসবকে বিলম্বিত করেছিল। আর এবার ১৪ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে দীর্ঘদিন পরে উৎসবমূখর পরিবেশে সিটিকে প্রথমবারের মত ফাইনালে খেলার স্মৃতি স্মরণীয় করতে দিলনা টাচেল বাহিনী।
ম্যাচ শেষে বিটি স্পোর্টসকে টাচেল বলেছেন, ‘এটা একটি দুর্দান্ত ফাইনালের লড়াই ছিল। আজ আমরা জয়ের ব্যপারে বদ্ধপরিকর ছিলাম। আরো একবার আমরা তাদের থামিয়ে দিতে চেয়েছি। এতে খেলোয়াড়দের অবদান অসাধারন। আমরা বেশ কিছু কঠিন সময় পার করে আজকের শিরোপা জিতেছি।’
আবু ধাবীর শেখ মানসুর সিটির মালিকানা পাবার পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে খেলার জন্য দীর্ঘ ১৩ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। এনিয়ে অষ্টম ক্লাব হিসেবে প্রথমবারের মত ফাইনালে খেলতে এসে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পেল সিটি। গত বছর কাতারী মালিকানাধীন পিএসজি ও ২০১৯ সালে অল-ইংলিশ ফাইনালে টটেহ্যাম হটস্পারও প্রথমবারের ফাইনালে জয়ী হতে পারেনি।
গার্দিওলা বলেন, ‘এই প্রথমবার আমরা এখানে আসতে এসেছি, এখান থেকে কিছু শিক্ষা নিয়ে আবারো ফিরে যাচ্ছি। খেলোয়াড়রা সাধ্যের সবকিছুই করেছে। তারা ভাল খেলতে চেয়েছে, এই প্রতিযোগিতার শিরোপা জিততে চেয়েছে। কখনো কখনো কেউ ভাল খেলবে আবার কখনো পারবে না।’
২০০৮ সালে মস্কোতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে প্রথমবার ফাইনালে খেলতে গিয়ে পেনাল্টিতে চেলসিও পরাজিত হয়েছিল। ২০১২ সালে বায়ার্ন মিউনিখকে অবশ্য পেনাল্টি শ্যুট-আউটে হারিয়ে প্রথমবারের শিরোপা স্বাদ পেয়েছিল ব্লুজরা। দ্বিতীয়বারের মত শিরোপা জয় করে চেলসি জুভেন্টাস, বেনফিকা, পোর্তো ও আরেক ইংলিশ ক্লাব নটিংহ্যাম ফরেস্টকে স্পর্শ করলো।
পর্তুগালের মাঠে কাল ফাইনাল উপভোগের জন্য উপস্থিত ছিলেন চেলসির রাশিয়ান মালিক রোমান আব্রামোভিচ। এবারের মৌসুমে স্ট্যামফোর্ড ব্রীজের দলটির হয়ে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ইংলিশ তরুন মিডফিল্ডার ম্যাসন মাউন্ট বলেছেন, ‘এটা আমাদের জন্য একটি বিশেষ মুহূর্ত। এই মুহূর্তে আমরাই বিশ্বের সেরা দল। কোন দলই আমাদের থেকে এই কৃতিত্ব কেড়ে নিতে পারবে না।’
জানুয়ারিতে ফ্রাংক ল্যাম্পার্ডের স্থানে টাচেলকে নিয়োগ দেবার পর থেকেই বদলে যেতে শুরু করে চেলসি। কিন্তু তারপরেও চার মৌসুমে তৃতীয়বারের মত প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জয় করা সিটিই ছিল কালকের ফাইনালে ফেবারিট। স্টেডিয়ামের ধারণ ক্ষমতার এক তৃতীয়াংশ সমর্থক কাল ম্যাচটি উপভোগের সুযোগ পেয়েছিল। প্রত্যেককেই প্রবেশের পূর্বে কোভিড-নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখাতে হয়েছে। গত বছর দর্শকশুন্য স্টেডিয়ামে যে ধরনের ম্যাচ খেলেছির বায়ার্ন ও পিএসজি কাল পুরো স্টেডিয়াম জুড়ে ছিল একেবারেই ভিন্ন চিত্র। দুই দলই দারুন আক্রমনাত্মক ম্যাচ উপহার দিয়েছে। প্রথম থেকেই সিটি চড়াও হয়ে খেললেও চেলসির গোলবারে এডুয়ার্ড মেন্ডি ছিলেন অটল। অপরদিকে চেলসির মুর্হুমুর্হু আক্রমনে এডারসনকে কিছুটা হলে বিচলিত হতে দেখা গেছে। ১৪ মিনিটে টিমো ওয়ার্নারের শট আটকাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল সিটির ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষককে। ৩৯ মিনিটে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করায় থিয়াগো সিলভাকে মাঠ ছাড়তে হয়, তার পরিবর্তে আন্দ্রেস ক্রিস্টেনসেনকে রক্ষনভাগের হাল ধরতে হয়েছে। ৪২ মিনিটে অবশ্য সফল হয়েছে চেলসি। মধ্যমাঠ থেকে মাউন্টের একটি দুর্দান্ত পাসে গত গ্রীষ্মে ৭১ মিলিয়ন পাউন্ডে লন্ডনে আসা হাভার্টজ সিটির রক্ষনভাগকে কাটিয়ে এডারসনকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়ালে এগিয়ে যায় চেলসি। টাচেলের অধীনে প্রতিদিনই একটু একটু করে শক্তিশালী হয়ে চেলসির রক্ষনভাগকে ভাঙ্গা আর সম্ভব হয়নি সিটির। ৬০ মিনিটে এন্টোনিও রুডিগারের সাথে ধাক্কা লেগে বেলজিয়ান অধিনায়ক ডি ব্রুইনার মাঠ ত্যাগে সিটির আশা শেষ হয়ে যায়। ম্যাচের শেষ ভাগে বিদায়ী আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড সার্জিও আগুয়েরোকে নামিয়েও সফল হতে পারেননি গার্দিওলা। ইনজুরি টাইমের ষষ্ঠ রিয়াদ মাহারেজের শট অল্পের জন্য পোস্টের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়।
এর মাধ্যমে প্রায় এক দশক আগে ইউরোপীয়ান শিরোপা জেতা গার্দিওলার তৃতীয় শিরোপা আর পাওয়া হলোনা। সে কারনে বব পেইসলি, কার্লো আনচেলত্তি ও জিনেদিন জিদানের কোচ হিসেবে সবচেয়ে বেশীবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জয়ের থেকে একটি শিরোপা পিছিয়েই থাকলেন সিটি বস।

সূত্র: বাসস