টিকা আমদানিতে মধ্যস্বত্বভোগীর ভূমিকা বন্ধের দাবি বিশিষ্টজনদের

টিকা আমদানিতে মধ্যস্বত্বভোগীর ভূমিকা বন্ধের দাবি বিশিষ্টজনদের

টিকা আমদানিতে মধ্যস্বত্বভোগীর ভূমিকা বন্ধের দাবি বিশিষ্টজনদের

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা আমদানির ক্ষেত্রে সরকারের বাইরে কোনো বেসরকারি কোম্পানির ভূমিকা রাখার প্রশ্নটি আবার আলোচনায় এসেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ-সমর্থক বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত ১৮ জন বিশিষ্ট নাগরিক এক যুক্ত বিবৃতিতে টিকা আমদানিতে ‘অন্য কোনো মধ্যস্বত্বভোগীর ভূমিকা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।

অন্য দিকে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ- টিআইবিও এক বিবৃতিতে বলেছে, কথিত মধ্যস্বত্বভোগীর কারণে এখন টিকা নিয়ে সঙ্কট তৈরি হয়েছে।

তবে স্বাস্থ্য বিভাগ বলেছে, ভারত থেকে টিকা আনার ক্ষেত্রে সরকারের বাইরের কোম্পানির ভুমিকা থাকলেও- সেই অভিজ্ঞতার পর এখন চীন বা রাশিয়া থেকে টিকা আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সরকার নিজেই সরাসরি আলোচনা চালাচ্ছে।

দেশে করোনাভাইরাসের টিকা বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি মহল সক্রিয় হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে ১৮ জন নাগরিকের বিবৃতিতে। তারা এ ব্যাপারে সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ চেয়েছেন। তাদের মূল বক্তব্য হচ্ছে, টিকা আমদানির ক্ষেত্রে সরকারের বাইরে বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের ভূমিকার বিরুদ্ধে। তারা সেটাকে মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

যারা এই বিবৃতি দিয়েছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হচ্ছেন আবদুল গাফফার চৌধুরী, হাসান আজিজুল হক, রামেন্দু মজুমদার, শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, মফিদুল হক, কামরুল হাসান খান ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ।

এখন কেন এই বক্তব্য তুলে ধরার প্রয়োজন হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেছেন, সরকারের সাথে সরাসরি চুক্তি না হওয়ায় ভারত থেকে সঙ্কটের সময় চাহিদা অনুযায়ী টিকা পাওয়া যায়নি। এজন্য এখন অন্য দেশ থেকে টিকা আমদানিতে সরকার যেন সতর্ক থাকে, এটাই তারা বলতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা এই যে নিকট অতীতে ভারতে মহামারী ভয়াবহ আকার ধারণ করার কারণে আমদানির টিকা পেলাম না। যেহেতু পাচ্ছি না, সেহেতু সেখানে মধ্যস্বত্বভোগী (বেসরকারি কোম্পানি) কোনোরকম ভূমিকা পালন করতে কিন্তু ব্যর্থ হয়। এটা মানবিকতার ঊর্ধ্বে গিয়ে কিন্তু ব্যবসায়িক স্বার্থ সবার থাকে। আমাদের কথা হচ্ছে, এটা এতই মানবিক একটা বিপর্যয় যে এখানে যেন মধ্যস্বত্বভোগী কেউ না থাকে।

নাসির উদ্দীন ইউসুফ উল্লেখ করেন যে তারা দেশে টিকা উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দিতে চান। তার ভাষায়, আমরা বলছি, মানবিক কারণে টিকার ফর্মূলাটা সারাবিশ্বে সবার কল্যাণে যেন হয়, সেটা আমরা চাই। এমন প্রেক্ষাপটে এই টিকা দেশে উৎপাদন করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টাকে আমরা সমর্থন করি।

সরকার, বেসরকারি কোম্পানি বেক্সিমকো ও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের মধ্যে অ্যাস্ট্রজেনেকার টিকা আনার ব্যাপারে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করেছিল। তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার সেই চুক্তি অনুযায়ী, বেক্সিমকোর মাধ্যমে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা আসার কথা ছিল। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী টিকা এসেছিল ৭০ লাখ ডোজ। এর সাথে ভারত থেকে উপহারের টিকার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছিল। কিন্তু একপর্যায়ে ভারত টিকা রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় বাংলাদেশ আর টিকা পায়নি। তখন টিকা নিয়ে সংকটের দায় কার- এই প্রশ্নে বেক্সিমকো ও সরকার থেকে একে অপরকে দোষারোপ করতে দেখা গেছে।

দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, টিকা আমদানিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সেই সুযোগ দেয়ার বিষয়টিই নিয়ম অনুযায়ী হয়নি বলে তারা মনে করেন। তার ভাষায়, আইন অমান্য করে ও অস্বচ্ছ্বভাবে তৃতীয়পক্ষকে এখানে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। তাদের লাভবান করে দেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। জনগণকে তার বোঝা বইতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এমন একটি পক্ষ ছিল টিকা আনার কাজে, যেখানে একাধিক কর্ণধার রয়েছেন জনপ্রতিনিধি। কিন্তু জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক থাকার কথা নয়।’

বেক্সিমকোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কোম্পানিটির একজন কর্মকর্তা শুধু এটুকু বলেছেন যে টিকা আমদানিতে নিয়ম বা আইনের বাইরে কিছুই হয়নি।
সূত্র : বিবিসি