আত্মীয়তা রক্ষায় জীবনে বরকত হয়

আত্মীয়তা রক্ষায় জীবনে বরকত হয়

আত্মীয়তা রক্ষায় জীবনে বরকত হয়

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের জন্য এমন জীবনব্যবস্থা রেখে দিয়েছেন, যা মানুষকে ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির পথ বাতলে দিয়েছে। কিন্তু আমরা কোরআন থেকে বহু দূরে থাকার কারণে তা কখনোই বুঝতে পারি না।

দুনিয়াতে সফলতা অর্জনের একটি গোপন রহস্য হলো, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা। যারা আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজ-খবর রাখে, তাদের জন্য সাধ্যমতো খরচ করে, তাদের অনেকেই বোকা ভাবে। আত্মীয়-স্বজনের জন্য খরচ না করে নিজের ভবিষ্যৎ সাজানোর পরামর্শ দেয়। অথচ মহান আল্লাহ তাদেরই বিবেকবান বলেছেন, যারা আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ-খবর রাখে এবং তাদের জন্য সাধ্যমতো খরচ করে।

পবিত্র কোরআনের সুরা রাদ-এ বিবেকবানদের নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখতে আদেশ দিয়েছেন, যারা তা অক্ষুণ্ন রাখে এবং তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, আর ভয় করে কঠোর হিসাবকে।’ (সুরা : রাদ, আয়াত : ২১)

উল্লিখিত আয়াতে বলা হয়েছে, বিবেকবান ঈমানদাররা আত্মীয়তার সম্পর্কের ব্যাপারে অত্যন্ত যত্নবান হয়। পাশাপাশি তারা সার্বিক বিষয়ে আল্লাহকে ভয় করে। এই ভয় উৎসারিত হয় সম্মান, জ্ঞান, ভক্তি ও ভালোবাসা থেকে। তাদের কাছে প্রতিটি কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই মুখ্য হয়ে থাকে। বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ অনুকূল-প্রতিকূল সব পরিস্থিতিতে পরকালের জবাবদিহির ভয় করে। আল্লাহর ভয় ও পরকালে জবাবদিহির ভয় মানুষকে বিশ্বাস ও বিবেকনির্দেশিত পথে পরিচালিত করে।

এর বিনিময়ে মহান আল্লাহ তাদের দুনিয়া ও আখিরাতে যেমন সম্মানী করেন, তেমনি তাদের হায়াত ও রিজিকেও বরকত দান করেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমি নবী করিম (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তার রিজিক প্রশস্ত ও আয়ু বৃদ্ধি করতে চায়, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯৮৫)

অর্থাৎ আত্মীয়-স্বজনদের জন্য খরচ করলে সম্পদ কমে যায় না; বরং সম্পদে বরকত আনতে হলে আত্মীয়-স্বজনের জন্য খরচ করতে হয়। কিন্তু শয়তান মানুষকে বিপথগামী করতে সব সময় মানুষকে অভাবের ভয় দেখায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, শয়তান তোমাদের দারিদ্র্র্যের ভয় দেখায় এবং জঘন্য কাজে উৎসাহ দেয়, পক্ষান্তরে আল্লাহ তোমাদের তাঁর ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। আল্লাহ বিপুল দাতা, সর্বজ্ঞ। (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৬৮)

অর্থাৎ সৎ পথে সম্পদ ব্যয় করতে চাইলে শয়তান নিঃস্ব ও কাঙাল হয়ে যাওয়ার ভয় দেখায়। আত্মীয়-স্বজনের জন্য খরচ করতে গেলেও শয়তান মানুষকে নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার ভয় দেখায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মানুষ তখনই বিপদে পড়ে, যখন তারা অভাবের ভয়ে আত্মীয়-স্বজনের জন্য খরচ করা বন্ধ করে দেয় এবং আল্লাহ প্রদত্ত বরকত থেকে বঞ্চিত হয়।

কেননা মহান আল্লাহ আমাদের উপার্জনের কিছু অংশে আত্মীয়-স্বজনের হক রেখে দিয়েছেন, যা তাদের দিয়ে দেওয়ার জন্য স্পষ্ট ভাষায় আদেশ করেছেন। পাশাপাশি এই কাজটি সফলতার সূত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব আত্মীয়-স্বজনকে তাদের হক দিয়ে দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরকেও। এটি উত্তম তাদের জন্য, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি চায় এবং তারাই সফলকাম।’ (সুরা : রুম, আয়াত : ৩৮)

অতএব, আমরা যারা জীবনে সফলতা অর্জন করতে চাই, আর্থিক সচ্ছলতা আনতে চাই, তাদের অবশ্যই মহান আল্লাহর এই বিধানকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পালন করতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ-খবর রাখতে হবে। কেউ কষ্টে থাকলে অবশ্যই তার সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে হবে। ইনশাআল্লাহ, এর বিনিময়ে মহান আল্লাহ আমাদের সব অভাব দূর করে দেবেন।