অণু-পরমাণু সম্পর্কেও আল্লাহ অবগত

অণু-পরমাণু সম্পর্কেও আল্লাহ অবগত

অণু-পরমাণু সম্পর্কেও আল্লাহ অবগত

মহান আল্লাহ আসমান-জমিন ও গ্রহ-নক্ষত্র সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। এ সব কিছুর নিয়ন্ত্রকও একমাত্র তিনিই। সৃষ্টিজগতে যা কিছু আছে সব কিছু তাঁর নজরদারির অধীনে রয়েছে। তাঁর নির্দেশেই সব কিছু সৃষ্টি হয়, আবার তাঁর নির্দেশেই সব কিছু নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। তিনি যা চান, তাই হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি আসমান আর জমিনকে সত্যিকারভাবে সৃষ্টি করেছেন (খেল-তামাশার জন্য নয়)। আর যখনই তিনি বলবেন, (কিয়ামত) ‘হও’, তখনই তা হয়ে যাবে। তাঁর কথাই প্রকৃত সত্য। যেদিন শিঙায় ফুৎকার দেওয়া হবে সেদিন কর্তৃত্ব থাকবে তাঁরই হাতে। অদৃশ্য ও দৃশ্য সম্পর্কে অবগত, তিনি প্রজ্ঞাময়, সব কিছুর ব্যাপারে তিনি সবিশেষ জ্ঞাত।  (সুরা : আন আম, আয়াত : ৭৩)

উল্লিখিত আয়াতের শেষাংশে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বার্তা দিয়েছেন। ‘অদৃশ্য ও দৃশ্য সম্বন্ধে অবগত, তিনি প্রজ্ঞাময়, সব কিছুর ব্যাপারে তিনি সবিশেষ জ্ঞাত।’ সৃষ্টিজগতে যা কিছু দেখা যায়, বা যা কিছু দেখা যায় না, সব কিছু সার্বক্ষণিক মহান আল্লাহর তদারকিতেই থাকে। তিনি সব সময় সব বিষয়েই জ্ঞাত। সব কিছুর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ একমাত্র আল্লাহরই কাছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তিনিই আপন বান্দাদের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণকারী, আর তিনি প্রজ্ঞাময়, সম্যক অবহিত। (সুরা : আন আম, আয়াত : ১৮)

অর্থাৎ পৃথিবীর সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্ম, ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র জিনিসও তাঁর দৃষ্টির আওতায় রয়েছে। সৃষ্টিকূলের প্রতিটি জিনিসের গতিবিধিই তিনি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘দৃষ্টিসমূহ তাঁকে আয়ত্ত করতে পারে না, অথচ তিনি সব দৃষ্টিকে আয়ত্ত করেন এবং তিনি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবহিত। (সুরা : আন আম, আয়াত : ১০৩)

অর্থাৎ মানুষ, জিন, ফেরেশতা ও যাবতীয় জীব-জন্তুর দৃষ্টি একত্র হয়েও আল্লাহর সত্তাকে বেষ্টন করে দেখতে পারে না। পক্ষান্তরে আল্লাহ তাআলা সমগ্র সৃষ্টজীবের দৃষ্টিকে পূর্ণরূপে দেখেন এবং সবাইকে বেষ্টন করে দেখেন। এই সংক্ষিপ্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলার দুটি বিশেষ গুণ বর্ণিত হয়েছে। (এক) সমগ্র সৃষ্টিজগতে কারো দৃষ্টি; বরং সবার দৃষ্টি একত্র হয়েও তাঁর সত্তাকে বেষ্টন করতে পারে না। (দুই) তাঁর দৃষ্টি সমগ্র সৃষ্টিজগেক পরিবেষ্টনকারী জগতের অণু-কণা পরিমাণ বস্তুও তাঁর দৃষ্টির অন্তরালে নয়। সর্বাবস্থায় এই জ্ঞান এবং জ্ঞানগত পরিবেষ্টনও আল্লাহ তাআলারই বৈশিষ্ট। তাঁকে ছাড়া কোনো সৃষ্ট বস্তুর পক্ষে সমগ্র সৃষ্টজগত ও তার অণু-পরমাণুর এরূপ জ্ঞান লাভ কখনো হয়নি এবং হতে পারেও না। কেননা এটা আল্লাহ তাআলার বিশেষ গুণ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আসমান ও জমিনের অণু পরিমাণও আপনার রবের দৃষ্টির বাইরে নয় এবং তার চেয়ে ক্ষুদ্রতর বা বৃহত্তর কিছুই নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৬১)

অর্থাৎ তিনি তাঁর সৃষ্টির ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতম নড়াচড়ার খবরও রাখেন। উদাহরণস্বরূপ মানুষের একটিমাত্র চুল কার্বন পরমাণুর তুলনায় পাঁচ লাখ গুণ বড়। মহান আল্লাহ সেই কার্বন পরমাণু পরিমাণ মাখলুকেরও সব খোঁজ-খবর রাখেন। সুবহানাল্লাহ!

এমনকি তিনি প্রতিটি মানুষের অন্তরের খবরও রাখেন, যা কেউ জানতে পারে না। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ আসমানসমূহ ও জমিনের গায়েবি বিষয়ে অবগত। নিশ্চয় অন্তরে যা রয়েছে সে সম্বন্ধে তিনি সম্যক জ্ঞাত। (সুরা : ফাতির, আয়াত : ৩৮)

উল্লিখিত আলোচনা দ্বারা বোঝা যায়, মহান আল্লাহই সর্বশক্তিমান, সবকিছুর মালিক। তিনি ছাড়া আর কেউই উপাস্য হতে পারে না। তিনি ছাড়া আর কোনো আশ্রয়স্থলও হতে পারে না। আমাদের উচিত সব সময় তাঁর কাছেই আশ্রয় চাওয়া ও তাঁর ওপরই ভরসা করা।