২০ হাজার কোটি টাকা সাদা হয়েছে বিদায়ী অর্থবছরে

২০ হাজার কোটি টাকা সাদা হয়েছে বিদায়ী অর্থবছরে

২০ হাজার কোটি টাকা সাদা হয়েছে বিদায়ী অর্থবছরে

বিদায়ী অর্থবছরে ২০ হাজার কোটি কালো টাকা সাদা করা হয়েছে। প্রায় ১২ হাজার করদাতা এই সুযোগ গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে নগদ টাকা সাদা হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের পর টাকা সাদা করার এটাই সর্বোচ্চ রেকর্ড।

এরমধ্যে ব্যাংক বা নগদে রাখা এই বিপুল পরিমাণ টাকা সাদা করেছেন প্রায় সাত হাজার করদাতা। বাকি টাকা জমি-ফ্ল্যাট, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাময়িক হিসাবে এই তথ্য জানা গেছে। শিগগিরই চূড়ান্ত হিসাব পাওয়া যাবে।

অন্যদিকে ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পর বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদে একাধিকবার কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হলেও তা তেমন একটা কাজে লাগেনি। ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ৩২ হাজার ৫৫৮ জন করদাতা কালোটাকা সাদা করার সুযোগ নিয়েছিলেন। তখন অবশ্য সাড়ে তিন হাজারের বেশি কালোটাকা সাদা হয়েছিল।

বিদায়ী অর্থবছরের মতো এত ঢালাওভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ খুব একটা দেওয়া হয়নি। মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে শেয়ারবাজার, নগদ টাকা, ব্যাংকে রাখা টাকা, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া এলাকা ও আয়তনভেদে নির্ধারিত কর দিয়ে জমি-ফ্ল্যাটেও টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, জুন মাস শেষে প্রাথমিক হিসাবে করদাতা ১১ হাজার ৮৫৯ জন। তাঁদের প্রায় ৬০ শতাংশই নগদ টাকা সাদা করেছেন। শেয়ারবাজারে গত মে মাস পর্যন্ত ৩৮৯ জন টাকা সাদা করেছেন। জুন মাসে যাঁরা কালোটাকা বিনিয়োগ করেছেন, তাঁরা বিনিয়োগের এক মাসের মধ্যে জানানোর শর্ত থাকায় এখনো চূড়ান্ত হিসাব হয়নি। সাড়ে চার হাজারের বেশি করদাতা জমি ও ফ্ল্যাট কিনে টাকা সাদা করেছেন।

তবে বিদায়ী অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে তুলনামূলক কম ব্যক্তি এই সুযোগ নিয়েছেন। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, গত ১ জুলাই থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৭ হাজার ৬৫০ জন কালোটাকা সাদা করেছেন। সব মিলিয়ে ১০ হাজার ২২০ কোটি টাকা সাদা হয়েছে। তাঁরা সবাই এনবিআরে জমা দেওয়া বার্ষিক রিটার্নে এই ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে পরের ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) মাত্র ৪ হাজার ২০৯ জন এই সুযোগ নিয়েছেন। তখন সাদা হয়েছে ১০ হাজার ৩০০ কোটি টাকার মতো। অর্থাৎ শেষের দিকে তুলনামূলক ধনীরা বেশি কালোটাকা সাদা করেছেন। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ব্যবসায়ীসহ সব পেশাজীবী মানুষই কালোটাকা সাদা করেছেন।

কালোটাকা সাদা করার সুযোগ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘ঢালাও এবং কম কর হারে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ সৎ করদাতাদের কর দেওয়ায় নিরুৎসাহিত করে। কালোটাকা সাদা করার সুযোগ নৈতিকভাবে ঠিক নয়। তার মতে, করোনার কারণে দেশ থেকে টাকা বিদেশে নেওয়ার সুযোগ সীমিত হয়েছে। তাই হয়তো এবার বেশি সুযোগ নিয়েছেন।

প্রায় সরকারের আমলেই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়। ১৯৭৫ সালে প্রথমবারের মতো এ দেশের করদাতাদের সামনে এই ধরনের সুযোগ আসে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত অন্তত ১৫ বারের বেশি এ ধরনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তেমন একটা সাড়া মেলেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ভয়ভীতির কারণে বেশি করদাতা সুযোগ নিয়েছেন। এবার ঢালাও এবং কম কর হারে সুযোগ দেয়ায় কালোটাকার মালিকেরা উৎসাহিত হন। এ ছাড়া করোনার কারণে সব যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় বিদেশে টাকা পাচারের সুযোগ সীমিত হয়েছে। সে কারণেও অনেকে অবৈধভাবে উপার্জিত টাকা সাদা করে ফেলেছেন।