পাবনায় একদিনে আরো ৪ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ২৯১

পাবনায় একদিনে আরো ৪ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ২৯১

পাবনায় একদিনে আরো ৪ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ২৯১

পাবনায় গত ২৪ ঘন্টায়(মঙ্গলবার-বুধবার) আরো ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা হলো ২৯। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে এ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদীন বুধবার জানান। তবে পাবনা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সেই ২৫ জনের মৃত্যুর খবরই জারি রেখেছে। একই সময়ে  জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৯১ জন।  মহামারি করোনা ভাইরাস পাবনায় ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ব্যাপকহারে যেমন সংক্রমিত হচ্ছে; তেমনই একের পর এক মারা যাচ্ছেন করোনা আক্রান্ত রোগী। উপসর্গ নিয়ে মৃতের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে হরদম।

স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে বাস্তবে মৃতের সংখ্যায় মিলছে না। হাসপাতাল ও বাড়িতে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। পরীক্ষায় নেগেটিভ হলেও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মৃত্যু সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ নিয়ে করোনা মাহামারির মধ্যে সোমবার ও মঙ্গলবার মৃতের সংখ্যা ১৩ জন। অবশ্য এর মধ্যে শনাক্তকৃত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫ জন। হাসপাতাল ও নিজ নিজ বাড়িতে উপসর্গ নিয়ে ৮ জন। এদের হাসপাতালে যেমন আনা হয়নি, তেমনই পরীক্ষাও করানো হয়নি।

পাবনায় গত এক সপ্তাহ ধরে নুমুনা পরীক্ষা অনুপাতে ২২ দশমিক ৩০ শতাংশ। হাসপাতালে উপচেপড়া রোগীর ভিড় বাড়ছে। যেমন হলুদ জোনে, তেমনই রেডজোনে রোগী নিয়ে চিকিৎসকদের হিমশীম খেতে হচ্ছে। গত ৭ দিনে ৬,৯৯০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১,২০৩ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার ৮৩৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৮৬ জনের করোনা ভাইরাস পজিটিভ হয়।রোববার থেকে  সোমবার (২৪ ঘন্টায়) পাবনা ২৫০ বেড হাসপাতালে করোনা ইউনিটে মারা গেছেন ৪ জন। 

তবে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক ডা. সালেহ মোহাম্মদ আলী তিন জনের কথা স্বীকার করেছেন।   (রোববার ৪ জুলাই দুপুর ১২ টা থেকে সোমবার ৫ জুলাই দুপুর ১২ টার মধ্যে)  হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা প্রাণ হারান।

মৃতরা হলেন- পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নের মৃত আলহাজ¦ দায়েন বিশ্বাসের স্ত্রী রাশিদা বেগম (৭০), ঈশ্বরদীর চরকুরুলিয়া গ্রামের মৃত কোরবান সরকারের স্ত্রী রোকেয়া খাতুন(৭০), পাবনার শহর এলাকার নূরে আলম (৬৭) এবং নাজমুল ইসলাম (৭২)।

কিন্তু একই সময়ে আরো তিনজন মারা গেছেন করোনা উপসর্গ নিয়ে ঈশ্বরদীতে। তথ্য অনুযায়ী, মারা গেছেন সলিমপুর ইউনিয়ের চরমিরকামারী মাথালপাড়া গ্রামে জয়েন উদ্দিন খানের ছেলে আমিরুল ইসলাম খান (৬৬), সদরের শৈলপাড়া এলাকার রফিকুল ইসলাম শাহিনের স্ত্রী রিমা খাতুন (৪৫) ও মুলাডুলি ইউনিয়নের চকনারিচা বাগাবাড়িয়া গ্রামের রিজু প্রামাণিক (৬০)। এ হিসেব কিন্তু জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে নেই।এছাড়া সোমবার থেকে মঙ্গলবার গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সদরের ২ জন এবং ঈশ্বরদী উপজেলার ১ জন রয়েছেন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃত্যুর বিষয়টি এড়িয়ে যান।

সোমবার (০৫ জুলাই) দুপুর থেকে মঙ্গলবার (০৬ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত পাবনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা যান এই ২ জন। আর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরেকজন।

২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৮৬ জনের করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। এদিকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হলেও অজ্ঞাত কারণে তথ্য নিয়ে লুকোচুরি করছে হাসপাতাল প্রশাসন।হাসপাতালের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র করোনায় ২ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করলেও ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার মৃত্যুর বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, পাবনা সদর উপজেলার তারাবাড়িয়ার দায়েন উদ্দিনের স্ত্রী রাশিদা খাতুন (৬০) ও সদর পৌর এলাকার নিজাম উদ্দিনের ছেলে আরজু (৪৫) করোনা ইউনিটে মারা গেছেন।

আরেকজন রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত ব্যক্তির বাড়ি ঈশ্বরদীতে হলেও তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি। সূত্রটি জানায়, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুইজনের করোনা পজিটিভ না হলেও উপসর্গ ছিল।করোনা সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত পাবনা জেনারেল হাসপাতালের পরিসংখ্যানবিদ সোহেল রানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মৃত্যু হয়েছে। তবে তথ্য দেয়া নিষেধ আছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার এসএম জাহিদুল ইসলাম বলেন, করোনায় হাসপাতালে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। তিনি করোনা ইউনিটের দায়িত্বরত চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপ করে জানান, করোনায় কোনো মৃত্যু সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়নি।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি পাবনা জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক ডা. সালেহ মোহাম্মদ আলী। তবে বিকল্পভাবে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মৃত্যুর বিষয়টি এড়িয়ে যান।

হাসপাতালের প্রধান সহকারী রহুল আমিন বলেন,‘সাংবাদিকদের তথ্য দিতে নিষেধ করেছেন সহকারী পরিচালক। কোনো তথ্য জানার প্রয়োজন হলে সহকারী পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে হবে’।

 জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় সোমবার দুপুর ১২টা থেকে মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৬৩৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এদের মধ্যে ১৮৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ জন মারা যান।

এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৫২৭ জন। মারা গেছেন মোট ২৭ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৬৯০ জন।

মঙ্গলবার ( ০৬ জুলাই ) জেলার চাটমোহর উপজেলায় করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন এক চাউল ব্যবসায়ী।

মঙ্গলবার ভোরে মারা যান চাটমোহরের এই চাউল ব্যবসায়ী মহাদেব কুমার দাস (৩২)। তিনি বিলচলন ইউনিয়নের বোঁথর গ্রামের দুলাল চন্দ্র দাসের ছেলে। কয়েকদিন ধরে মহাদেব জ¦র,কাশি ও শ^াসকষ্টে ভুগছিলেন। মঙ্গলবার ভোরে শ^াসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় দ্রুত তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এই মৃত্যুর রেকর্ডও কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগে নেই। এইভাবে প্রতিদিন জেলায় বহু লোক মারা গেলেও এই সমস্ত তথ্য জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে নেই। ইচ্ছাই হোক আর অনিচ্ছা করেই হোক এ তথ্য স্বাস্থ্য বিভাগ রাখছে না। 

পরীক্ষা করে করোনা নেগেটিভ হলেও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা যাওয়া মানুষের ভারটা বেশি বলে সর্ব মহলে উচ্চারিত হচ্ছে। তাছাড়া জেলার প্রায় সব বাসা, বসত বাড়িতে  সর্দি কাশি জ্বরে আক্রান্ত রোগী থাকলেও তাদের অনেকেই নমুনা দিয়ে করোনা পরীক্ষা করাতে আগ্রহী হচ্ছে না। এদের কেও কেও বাড়িতেই মারা যাচ্ছেন, কারো করো হাসপাতালে নেয়া হলেও উপসর্গ নিয়েই ঝরে যেতে হচ্ছে।

পাবনায় ছড়ানো করোনা ভাইরাস ভারতীয় ধরণ। ডেল্টা নামের এ ধরণ ভয়াবহ সংক্রামক। যেমন সংক্রামক, তেমনই ফুসফুসকে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্থ করে প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে অনেকের।

পাবনা সিভিল সার্জন সূত্র থেকে তথ্য জানা গেলেও বাস্তবে জেলার করোনা ভাইরাসের চিত্র অনেকটা ভিন্ন। জেলায় একের পর এক মানুষ উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেও তাদের অনেকেরই হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে না। এ কারণে বাস্তবের সাথে স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া তথ্য বহুলাংশেই মিলছে না।

করোনা শুরু থেকে বুধবার (০৭ জুলাই ) পর্যন্ত ১, লাখ ৬ হাজার ৫৮ টি স্যাম্পল পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ১ লাখ ৫ হাজার ৬৪৮ টি প্রাপ্ত ফলাফলের মধ্যে ৫,৮১৮ জনের দেহে সক্রমণ পাওয়া গেছে। গত ২৪ ঘন্টায় (মঙ্গলবার-বুধবার) পর্যন্ত সংক্রমণের হার ২০.৪৪%, এবং সুস্থ্যতার হার ১২.৩৭%।