৮৫ শতাংশ দখলের দাবি তালেবানের; মানতে নারাজ আফগান সরকার

৮৫ শতাংশ দখলের দাবি তালেবানের; মানতে নারাজ আফগান সরকার

মস্কোতে বৈঠকের আগে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন তালেবান মুখপাত্র শাহাবুদ্দিন দেলাওয়ার (মাঝে)-

আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের পর থেকেই দেশটিতে একের পর এক জেলা দখল করছে তালেবান। তালেবানের আক্রমনের মুখে সরকারি বাহিনী কোনভাবেই দাড়িতে পারছে না। এনিয়ে তালেবান দাবি করছে দেশটির ৮৫ শতাংশ এলাকা নিজেদের দখলে নিয়েছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার (৯ জুলাই) রাশিয়ার রাজধানীয় মস্কোয় তালেবানের একটি প্রতিনিধি দল দেশটির সরকারের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক সাক্ষাৎকারে সংগঠনটির মুখপাত্র এই দাবি করেন।

বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে তালেবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ ইসলাম মুজাহিদ বলেন, আফগানিস্তানের ৩৯৮টি জেলার ২৫০টি নিয়ন্ত্রণে আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এছাড়া ইরানের সীমান্তবর্তী কোয়ালা শহরও এখন আমাদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। যদিও তালেবানের ৮৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণের দাবিকে মিথ্যা প্রচারণা বলে আখ্যা দিয়েছে আফগান সরকার।

এর আগে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, তালেবানের হাতে হেরাত প্রদেশের ইরান সীমান্তঘেঁষা ইসলাম কোয়ালা ক্রোসিংয়ের পতন ঘটেছে। সেখান থেকে কাস্টমস কর্মকর্তারা পালিয়ে গেছেন। তালেবানের হাত থেকে বাঁচতে আফগান সেনারা ইরান ভূখণ্ডে আশ্রয় নিয়েছেন বলেন তেহরানের আল-আলালাম টেলিভিশন জানিয়েছে।

এই ঘটনাকে আফগান সরকারের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এই খবর অস্বীকার করেছেন আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তারিক আরিয়ান। তিনি বলেন, ওই সীমান্ত ক্রোসিং এখনো সরকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।

এদিকে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিদেশি সেনাদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর দেশটি গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি করে দিয়েছেন ব্রিটিশ সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান নিক কার্টার।

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিদেশি সেনাদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর দেশটি গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি করে দিয়েছেন ব্রিটিশ সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান নিক কার্টার।

অধিকাংশ ব্রিটিশ সেনা আফগানিস্তান ছেড়েছে—ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাহিনীর সহায়তা ছাড়া দেশটির রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।

নিক কার্টার আরও জানান, আফগানিস্তানে ১৯৯০-এর দশকের গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। সেখানে যুদ্ধবাজতন্ত্র নামের একটি সংস্কৃতি আছে। নৃতাত্ত্বিক ও উপজাতীয় ধারায় নিরাপত্তা বাহিনী ভেঙে যেতে পারে।

ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা প্রধান বলেন, যদি এমন কিছু ঘটে, তবে আমার ধারণা, তালেবান দেশটির একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু, অবশ্যই, তারা কখনোই পুরো দেশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।

এদিকে দুই দশকের সংঘাতের পর আফগানিস্তানে ব্রিটিশ সরকারের আনুষ্ঠানিক ভূমিকার ইতি ঘটেছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, আফগানিস্তানের ন্যাটো মিশনে মোতায়েন করা সব ব্রিটিশ সেনা দেশে ফিরে আসছে। এ সময় ব্রিটিশ বাহিনীর সফলতা ও অর্জনের প্রশংসা করেন তিনি। দেশটিতে ব্রিটিশ সেনারা যে বিপদের মুখোমুখি ছিলেন, সেই কথাও স্বীকার করেন তিনি। দেশটিতে এ পর্যন্ত ৪৫৭ ব্রিটিশ সেনা নিহত হয়েছে।