মরিশাসে কাজে গিয়ে ধর্ষণের শিকার, ন্যায়বিচার চান নারী

মরিশাসে কাজে গিয়ে ধর্ষণের শিকার, ন্যায়বিচার চান নারী

মরিশাসে কাজে গিয়ে ধর্ষণের শিকার, ন্যায়বিচার চান নারী-

পূর্ব আফ্রিকার দেশ মরিশাসে কাজের জন্য গিয়ে মালিকের ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক বাংলাদেশি নারী। এই ঘটনায় শনিবার বিকালে তিনি রামপুরা থানায় মানবপাচার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের পৃথক ধারায় একটা মামলা করেছেন। 

এর আগে তিনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে সাহায্য চেয়েছে। মন্ত্রণালয় তাকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। তবে ওই নারীর অভিযোগ, আসামিরা তাকে নানাভাবে চাপ দিচ্ছে। তিনি ন্যায়বিচার চান। 

মামলা সূত্রে এবং ওই নারীর অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মরিশাস পৌঁছানোর পর কোম্পানির গাড়িতে করে বিমানবন্দর থেকে তাকে ফায়ার মাউন্ট কোম্পানিতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ফায়ার মাউন্ট টেক্সটাইল কোম্পানিতে হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। তবে ঠিকমত বেতন দেয়া হতো না। 

মরিশাসে অবস্থানরত ওই ফায়ার মাউন্ট টেক্সটাইলের কর্মীদের ক্যান্টিন পরিচালনা করেন বাংলাদেশি মোহাম্মদ শাহ আলম (৪৩) যার বাড়ি ফেনী। এই শাহ আলম এবং তার সহযোগী ফুরকান, সিদ্দিক ও আসলাম একদিন তাকে বলেন, কোম্পানির মালিক তোমাকে পছন্দ করে। তুমি যদি তার সাথে থাকতে পারো তাহলে তোমার অনেক ভালো হবে। আসলামের এমন প্রস্তাবে তিনি রাজি হন নি। এরপর শাহ আলম বিভিন্ন সময় তাকে আবার ভয়ভীতিও দেখায়। একদিন শাহ আলম বলেন, কোম্পানির মালিক তোমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে তাই তোমাকে মালিকের কাছে যেতে হবে। এই বলে তাকে ফায়ার মাউন্ট টেক্সটাইলের মালিক অনিল কলির বাসায় নিয়ে যায়। এরপর মালিকের রুমে তাকে রেখে বাইরে চলে যান। আর সেইদিনই ফায়ার মাউন্ট টেক্সটাইলের মালিক অনিল কলি তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। 

ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, এরপর ভিডিও ধারণ করা আছে এবং তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিখিয়ে শাহ আলম ও কোম্পানির মালিক অনিল কলি প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করতেন তাকে। একদিন শাহ আলম প্রস্তাব দেন মালিকের বন্ধুর সাথে রাত কাটাতে। এই প্রস্তাবে রাজি না হলে আবার নির্যাতন করেন। 

তার অভিযোগ, এক পর্যায়ে তিনি অন্তঃসত্বা হয়ে পড়লে মরিশাসের একটি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে বাচ্চা নষ্ট করে ফেলেন। এরপর তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর শর্ত দিয়ে বলেন, মেয়েটির বাবাকে মরিশাসে আনা হবে। 

এই নারী জানান, এর আগে তার বাবাই বিদেশে কাজের জন্য রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স গোলাম রাব্বি ইন্টারন্যাশনালে (আর.এল-১০৭৮) গেলে ওই রিক্রুটিং এজেন্সির লোকজন বলে বয়স বেশির কারণে আপনি বিদেশ যেতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে আপনার মেয়েকে মরিশাস পাঠান। এরপর বেতন ২৮ হাজার টাকার কথা বলে আরেকটি রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স এম আক্তার এন্ড সন্স এর মাধ্যমে তাকে মরিশাসে আনা হয়। এখন তিনি কোন অভিযোগ করবেন না এমন শর্তে ফের গতবছরের নভেম্বরে তার বাবাকে ওই কোম্পানিতে আনা হয় এবং তাকে দেশে পাঠানোর কথা বলা হয়। তার বাবা সেখানে পৌঁছানোর পর বাবাকে তাদের হেফাজতে নিয়ে মোহাম্মদ শাহ আলম তাকে বিমানবন্দরে নিয়ে গিয়ে গত ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ সালে অসুস্থ অবস্থায় দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেন। এখন দেশে অভিযোগ করার পর তার বাবাকেও নজরদারি করাসহ ও মানসিকভাবে নানান নির্যাতন করা হচ্ছে।

ওই নারী জানান, দেশে ফেরার ঠিক তিন দিনের মাথার রাতের আধারে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার বোন দেখে সেটি ঠেকান। এরপর বড় বোনকে সব বিস্তারিত জানান। এরপর তারা ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে তাকে চিকিৎসাসহ কাউসেলিং সহায়তা করা হয়। 

ওই নারীর দাবি, ওই কোম্পানিতে ৬০০ এরও বেশি বাংলাদেশি নারী কাজ করেন। এদের মধ্যে পছন্দের নারীদের টার্গেট করে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করেন মোহাম্মদ শাহ আলম, ফুরকান, সিদ্দিক ও আসলাম। ফায়ার মাউন্ট টেক্সটাইলের মালিক অনিল কোহলি প্রায়ই নারীদের নিপীড়ন করেন। 

বাংলাদেশের বেসরকারি একটি টেলিভিশনে এই খবর প্রকাশের পর মরিশাসের কয়কেটি গণমাধ্যমও সংবাদটি প্রকাশ করে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি উঠে। এরপর অভিযুক্তরা নানাভাবে সমঝোতার প্রস্তাব দিচ্ছে ভুক্তভগী নারীকে।

ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ভুক্তভোগী এই নারী যে বর্ণনা দিয়েছেন সেটি ভয়াবহ। বিদেশে কাজের কথা বলে কাউকে যৌন নিপীড়ন করা বা পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করোনো মানবপাচারের মধ্যে পড়ে। মরিশাস এবং বাংলাদেশ সরকারের উচিত যৌথভাবে এই ঘটনার তদন্ত করা। আরও কোন বাংলদেশি নারী এমন নিপীড়নের শিকার কি না সেটিও খুঁজে বের করে বিচার করা উচিত। আশা করছি মন্ত্রণালয় ও দূতাবাস এ ব্যাপারে উদ্যোগী হবে। আর বাংলাদেশেও যেহেতু মানবপাচার আইনে মামলা হয়েছে সেটিরও যথাযথ তদন্ত ও বিচার হবে বলে আশা করি। -ইউএনবি