জার্মানিতে গির্জা ত্যাগের হিড়িক, নেপথ্যে কী?

জার্মানিতে গির্জা ত্যাগের হিড়িক, নেপথ্যে কী?

জার্মানিতে গির্জা ত্যাগের হিড়িক, নেপথ্যে কী?

সমাজকর্মী ডরিস বাউয়ের। ৫৩ বছর বয়সি ডরিস দীর্ঘ বছর ধরে কোলনের একটি ক্যাথলিক চার্চের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। কিন্তু তিনি বলেছেন, ‘অনেক চিন্তা-ভাবনার পর আমি গির্জার সদস্যপদ ত্যাগ করেছি। আমার জন্য বিষয়টি অনেক বেশি স্বস্তিদায়ক ছিল।’

শুধু ডরিসই নন, জার্মানিতে গত বছর দুই লাখ ২১ হাজার ৩৯০ জন চার্চের সদস্যপদ ত্যাগ করেছেন। এর আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৪১ হাজার। অর্থাৎ দু’বছরেই গির্জার সদস্য ত্যাগের সংখ্যা প্রায় পৌনে সাত লাখ। গত বছর সদস্যপদ ত্যাগের সংখ্যা কম হলেও তা আগের কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি।সদস্যপদ ত্যাগের অপেক্ষায় আছেন আরো অনেকে। কোলন শহরে অপেক্ষমানদের এ তালিকা বেশ লম্বা। আর পাশের বন শহরের আদালত সদস্যপদ ত্যাগের আবেদন সামাল দিতে অতিরিক্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে।

চার্চ ট্যাক্স
চার্চের সদস্যপদ ত্যাগের বিষয়ে জার্মান সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। চার্চ ত্যাগ করতে চাইলে অবশ্যই ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে তা জানাতে হবে। কারণ চার্চের এমন সদস্যপদের সাথে ট্যাক্স লেনদেনের বিষয় যুক্ত। সকল সদস্যকেই চার্চের জন্য আলাদা কর দিতে হয়। তবে সদস্যপদ ত্যাগ করলে ওই কর আর দিতে হয় না।

প্রতিবছর যখন সদস্যপদ ত্যাগের সংখ্যা প্রকাশ করা হয় তখন চার্চ কর্তৃপক্ষকে এ বিষেয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা যায়। চলতি বছরের সদস্যপদ ত্যাগের বিষয়ে জানাতে গিয়ে জার্মান বিশপ কনফারেন্সের চেয়ারম্যান জর্জ বেটসিংগ বলেন, ‘চার্চের প্রতি অনেকেই আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। বুঝাতে চাইছেন যে এখানে সংস্কার প্রয়োজন। চার্চগুলোকে সমালোচনা সহ্য করতে হবে।’

যৌন নির্যাতনের ঘটনায় সদস্যপদ ত্যাগ
২০১৮ সালের এক অনুসন্ধানে চার্চে শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা বেরিয়ে এসেছে। গির্জার পাদ্রিরা যেভাবে এসব ঘটনাকে সামাল দিয়েছিল তাই মূলত ব্যাপক হারে সদস্যপদ ত্যাগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডোরিস বাউয়েরের সদস্যপদ ত্যাগের কারণও এটিই।

‘অনুসন্ধানে যৌন নির্যাতনের খবর উঠে আসার পরও এ বিষয়ে দায়িত্বশীলতা দেখায়নি গির্জা কর্তৃপক্ষ,’ বলেন তিনি। তার অভিযোগ, ‘গির্জা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো পরিবর্তন আনার আগ্রহও প্রকাশ করেনি। আর লিঙ্গসমতাও নিশ্চিত করতে চায় না তারা।’তার মতে, যে নীতিমালায় গির্জাগুলো চলছে তা অনেক সেকেলে। নৈতিক কর্তৃত্বের জায়গায় দাঁড়িয়েও তারা সেই মূল্যবোধ ধারণ করে না।

রাগ ও ক্ষোভের প্রতিক্রিয়া
কোলনের একটি ক্যাথলিক চার্চের সদস্য আন্ড্রেয়াস নিজেন। আগামী বুধবার আদালতে তার একটি সাক্ষাৎকারের তারিখ ধার্য রয়েছে। কারণ চার্চের সদস্যপদ ত্যাগ করতে চান তিনি।শিক্ষক আন্ড্রেয়াস তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে নিজের ইচ্ছায়ই চার্চের সদস্য হয়েছিলেন। নিজের ক্ষোভের কথা প্রকাশ করে আন্ড্রেয়াস বলেন, সদস্যপদ ত্যাগের যে সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন এ বিষয়ে তার সন্তুষ্টি আছে।তিনি বলেন, ‘খ্রিস্ট ধর্মের মূল্যবোধ ও গির্জা কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমের মধ্যে বিস্তর ফারাক।’

ওল্ড ক্যাথলিক চার্চে
সদস্যপদ ত্যাগ করে অনেকেই আবার অন্য চার্চের সদস্য হন। চার্চ ত্যাগ করতে যাওয়া এমন একজন জানান, তিনি ওল্ড ক্যাথলিক চার্চে যোগ দিতে চান। ওল্ড ক্যাথলিক চার্চ হলো ক্যাথলিকদের একটি ধর্মীয় সংগঠন, যারা ভ্যাটিকানের আওতাধীন নন।

ওল্ড ক্যাথলিকের বিশপ মাথিয়াস রিং জানান, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ১৮০ জন নতুন সদস্য যুক্ত হয়েছে। জার্মানির ওল্ড ক্যাথলিক চার্চে বর্তমানে ১৫ হাজার সদস্য রয়েছে।নিজেদের গির্জার বিষয়ে বলতে গিয়ে বিশপ জানান, ‘রোমান ক্যাথলিক চার্চের সক্রিয় সদস্য ছিলেন এমন লোকেরা এখন আমাদের এখানে যুক্ত হচ্ছে।

সূত্র : ডয়েচে ভেলে