অস্ট্রিয়ায় মার্কিন কূটনীতিকরা রহস্যজনক রোগে আক্রান্ত

অস্ট্রিয়ায় মার্কিন কূটনীতিকরা রহস্যজনক রোগে আক্রান্ত

অস্ট্রিয়ায় মার্কিন কূটনীতিকরা রহস্যজনক রোগে আক্রান্ত

অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় আমেরিকান কূটনীতিক ও দূতাবাসের অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মচারীরা পরপর বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার শিকার হওয়ার ঘটনা তদন্ত করে দেখছে মার্কিন সরকার। ২০ জনের বেশি কর্মকর্তা যেসব উপসর্গের কথা বলেছেন, তার সাথে হাভানা সিনড্রম বা হাভানা উপসর্গ নামে পরিচিত অসুস্থতার মিল রয়েছে। রহস্যজনক এসব উপসর্গ মূলত মস্তিষ্কের সাথে সংশ্লিষ্ট।প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানুয়ারি মাসে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে দূতাবাসের কর্মীরা এই রহস্যজনক রোগে আক্রান্ত হতে শুরু করেছেন।

এসব উপসর্গ কেন হচ্ছে তার কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে আমেরিকান বিজ্ঞানীরা বলছেন, খুব সম্ভবত সরাসরি মাইক্রোওয়েভ বিকিরণের কারণে এসব উপসর্গ তৈরি হচ্ছে। মাইক্রোওয়েভ হলো অতি ক্ষুদ্র কম্পাঙ্কের তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ। এই হাভানা উপসর্গ প্রথম দেখা গিয়েছিল কিউবায় ২০১৬-১৭ সালে।ওই সময় হাভানায় আমেরিকান ও ক্যানাডার দূতাবাসের কর্মীরা বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতার অভিযোগ করেছিলেন। এর মধ্যে ছিল মাথা ঘোরা, ভারসাম্য হারানো, কানে শুনতে না পাওয়া ও ‌একরকম উৎকণ্ঠা, যেটাকে তারা ব্যাখ্যা করেন ‘বোধশক্তি ঘোলাটে’ হয়ে যাওয়া।

যুক্তরাষ্ট্র ওই সময় অভিযোগ করেছিল, কিউবা ‘শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে হামলা’ চালিয়েছে। কিউবা এ অভিযোগ জোরের সাথে অস্বীকার করেছিল। ওই ঘটনার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা খুবই বৃদ্ধি পেয়েছিল।যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৯ সালে চালানো একটি গবেষণায় দেখা যায়, কিউবায় অসুস্থ হয়ে পড়া কূটনীতিকদের ‘মস্তিষ্কে অস্বাভাবিকতা’ দেখা দিয়েছে। কিন্তু কিউবা ওই গবেষণা প্রতিবেদন নাকচ করে দেয়।

ভিয়েনায় দূতাবাস কর্মী ও কূটনীতিকদের রহস্যজনকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর প্রথম প্রকাশিত হয় শুক্রবার নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিনে। এরপর মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এই খবর নিশ্চিত করে জানায়, তারা বিষয়টি নিয়ে '‘খুবই জোরেশোরে তদন্ত চালাচ্ছে’।বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, অস্ট্রিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে বলছে, তারা বিষয়টির মূলে যাওয়ার চেষ্টায়। এ নিয়ে তারা মার্কিন কর্তৃপক্ষের সাথে যৌথভাবে কাজ করছে।

দীর্ঘকাল ধরেই ভিয়েনা বিভিন্ন ধরনের কূটনীতির একটা মূল কেন্দ্র। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের গুপ্তচরবৃত্তির কেন্দ্র হিসেবে ভিয়েনার নামডাক আছে। বিশেষ করে শীতল যুদ্ধের সময় ভিয়েনায় বিভিন্ন ধরনের গুপ্তচর কর্মকাণ্ড হয়েছিল। ভিয়েনায় বিশাল কূটনৈতিক উপস্থিতি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ২০১৫-এর চুক্তিটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় ভিয়েনায় ইরান আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পরোক্ষ কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব চলছে।

পৃথিবীর অন্য কয়েকটি দেশ থেকেও একই ধরনের রহস্যজনক উপসর্গে মার্কিনীদের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, কিউবার ঘটনার পর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মার্কিন এখন আক্রান্ত হলেন ভিয়েনায়।জুন মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এই রহস্যজনক রোগের কারণ নির্ধারণ করতে ব্যাপক পর্যালোচনা কার্যক্রম চালানোর ঘোষণা দেন।

সূত্র : বিবিসি