আফগানিস্তানে মার্কিন দখলের অবসান, তালেবানের বিজয় উল্লাস

আফগানিস্তানে মার্কিন দখলের অবসান, তালেবানের বিজয় উল্লাস

আফগানিস্তানে মার্কিন দখলের অবসান, তালেবানের বিজয় উল্লাস

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের অবসান ঘটেছে। এবং সেটা ঘটেছে রাতের আঁধারে।আফগানিস্তানে দু'দশকের যুদ্ধ শেষে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ সি-১৭ সামরিক বিমানটি কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে আকাশে ডানা মেলে সোমবার মধ্য রাতের পর -- ৩১শে অগাস্ট সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই।

তবে সব আমেরিকান আফগানিস্তান চড়ে চলে গেছে তা বলা যাবে না।এখনও সে দেশে ১০০ থেকে ২৫০ আমেরিকান রয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ঐ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার জেনারেল কেনেথ ম্যাকেঞ্জি।এদের অনেকেই নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে কাবুল বিমানবন্দরের দিকে যেতে পারেননি।

কাবুলে মধ্যরাতের উৎসব

যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের মাটি ত্যাগ করার পর রাতের বেলাতেই শুরু হয় তালেবানের আনন্দ উল্লাস।ফাঁকাগুলির শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে কাবুলের আকাশ।

বিবিসির প্রধান আন্তর্জাতিক বিষয়ক প্রধান সংবাদদাতা লিস ডুসেট সে সময় বাড়ির ছাদে দেখছিলেন কী হচ্ছে।যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তানে ত্যাগের পাকা খবর তারা কোন বার্তা সংস্থা থেকে পাননি। পেয়েছিলেন আকাশে গোলাগুলির শব্দ থেকে।"শুধু শুনতে থাকুন আকাশে কীসের শব্দ শোনা যাচ্ছে," বলছিলেন তিনি।

মার্কিন সৈন্যরা কাবুল বিমানবন্দর ছাড়ার সাথে সাথে এগিয়ে আসে তালেবানের সৈন্যরা।তারা কাবুল বিমানবন্দরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অবস্থান নেয়।যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলস টাইমসের সংবাদদাতা নাবিহ্ বুলোস তালেবানের একদল যোদ্ধার সাথে বিমানবন্দরের সামরিক অংশের একটি হ্যাংগারে ঢুকে পড়েন।

তবে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র যেসব সামরিক বিমান এবং অস্ত্রশস্ত্র ফেলে রেখে গেছে তা সবাই বিকল করা হয়েছে। "এসব বিমান আর আকাশে উড়বে না," বলছিলেন জেনারেল ম্যাকেঞ্জি।তিনি জানান, কাবুল ত্যাগের আগে ৭৩টি বিমান, ৭০টি সাজোঁয়া গাড়ি এবং ২৭টি হামভি সামরিক যান নষ্ট করেছেন।তারা একই সাথে অত্যাধুনিক সি-র‍্যাম ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও ধ্বংস করে গেছে। সোমবার ইসলামিক স্টেটের ছোঁড়া পাঁচটি রকেট এটা দিয়েই ধ্বংস করা হয়েছিল।

কাবুল বিমানবন্দর: জয়-পরাজয়ের প্রতীক

রাতের বেলা তালেবান সৈন্যরা কাবুল বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয়ার পর মঙ্গলবার সকালে সেখানে হাজির হন তালেবানের রাজনৈতিক নেতারা।তারা সেখানে মোতায়েন করা তালেবান বাহিনীর প্রতি বক্তব্য রাখেন।বিমানবন্দরের টারম্যাকে দাঁড়িয়ে তালেবানের বিজয় ঘোষণা করেন জাবিউল্লাহ মুজাহিদ।

তালেবানের এই নেতা বলেন, এটা শুধু তালেবানের বিজয় না, এটা আফগান জনগণের বিজয়। ভবিষ্যতে কেউ আফগানিস্তান দখল করার চিন্তা করলে তারও এই হাল হবে বলে তিনি হুঁশিয়ার করে দেন।তালেবানের পক্ষে প্রচার চালায় এমন একটি ওয়েবসাইট পরিচালনা করেন তারিক গাজনিওয়াল।তিনি যে ভিডিও পোস্ট করেছেন তাতে দেখা যাচ্ছে জাবিউল্লাহ মুজাহিদ তালেবান যোদ্ধাদের প্রতি আফগান জনগণের সাথে সদয় আচরণ করার পরামর্শ দিচ্ছেন।

"আপনাদের জনগণের সাথে আচরণের প্রশ্নে আমি আপনাদের সতর্ক হতে বলবো। এই দেশ বহু দু:কষ্ট ভোগ করেছে। আপনাদের ভালবাসা ও সহমর্মিতা তাদের প্রাপ্য। তাই তাদের সাথে কোমল আচরণ করুন। আমরা তাদের সেবক। তাদের ওপর আমরা নিজেদের চাপিয়ে দিতে পারি না।"

কোটি কোটি আফগানের অনিশ্চিত জীবন

আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিদায় পর্বের প্রসঙ্গে বিবিসি সংবাদদাতা লিস ডুসেট লিখছেন, ৪০ বছর ধরে যুদ্ধ চলার পরও আফগান জনগণ আজকের মতো এতটা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েননি। তাদের জীবনে এতটা অন্ধকারে ঢেকে যায়নি।ভবিষ্যতে তাদের জীবনে কী ঘটবে তা বলা খুবই কঠিন।

যেসব আফগান দেশ ত্যাগ করতে পেরেছেন, তারা ভাবছেন আবার কোন দিন কী তারা ফিরতে পারবেন?আর দেশে রয়ে গেছেন যে তিন কোটি ৮০ লাখ আফগান, আগামী দিনগুলিতে তালেবান শাসনের কী রূপ তারা দেখতে পাবেন তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।গতবারের মত তালেবান কী আবার এক নির্মম শাসন শুরু করবে? লিখছেন লিস ডুসেট।

সূ্ত্র : বিবিসি