আফগানিস্তানে কী ধরনের সরকার আসছে

আফগানিস্তানে কী ধরনের সরকার আসছে

আফগানিস্তানে কী ধরনের সরকার আসছে

তালেবান বলছে আগামী দুই দিনের মধ্যে তারা নতুন সরকার ঘোষণা করতে পারবে।কাতারে তালেবানের রাজনৈতিক দপ্তরে উপ-প্রধান শের আব্বাস স্তানেকযাই বিবিসি পশতু বিভাগকে বলেছেন তাদের নতুন সরকারে বিভিন্ন পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং সেই সরকারে নারীরও ভূমিকা থাকবে।

তবে সরকারে মন্ত্রী পর্যায়ে কোন নারী থাকবেন না বলে তিনি জানিয়েছেন এবং বলেছেন গত বিশ বছরে আমেরিকান সমর্থনপুষ্ট সরকারে কাজ করা কোন নারীকে তালেবান সরকারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।তিনি আরও বলেছেন আগামী দুই দিনের মধ্যে কাবুল বিমানবন্দর খুলে দেয়া হবে।আফগানিস্তানের কান্দাহার শহরে তালেবান নেতারা নতুন সরকার গঠন নিয়ে তাদের তিন দিনের আলোচনা শেষ করার পর মি. স্তানেকযাই এই মন্তব্য করেছেন।

বিবিসির দক্ষিণ এশিয়া সংবাদদাতা রাজিনি ভৈদ্যনাথন বলছেন সমালোচকরা মনে করছেন দেশটির বাস্তব পরিস্থিতির মধ্যে তালেবান রাজনীতিকদের বক্তব্যের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।তারা বলছেন তালেবান তাদের এই বিজয়কে আফগানিস্তানে এক নতুন যুগের সূচনা হিসাবে দেখলেও বাস্তবে ভিন্নমতাবলম্বীরা এখনও হামলার শিকার হচ্ছেন এবং নারী ও কিশোরীদের মৌলিক অধিকারগুলোকে মর্যাদা দেয়া হচ্ছে না।

ভয় ও অনিশ্চয়তা

কাবুল থেকে বিবিসির সংবাদদাতা লিস ডুসেট জনাচ্ছেন কাবুলে খুব ধীরে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরতে শুরু করলেও মানুষের মধ্যে একটা ভয় ও অনিশ্চয়তা কাজ করছে।

নতুন সরকার কেমন হবে, তাদের নতুন শাসনব্যবস্থা ও নিয়মবিধি কী হবে তা জানার জন্য মানুষ অধীর আগ্রহে রয়েছে বলে জানাচ্ছেন মিজ ডুসেট।এরই মধ্যে মানুষকে জীবনধারণের জন্য পথে বের হতে হচ্ছে। রাস্তায় রাস্তায় মানুষকে ব্যাংকের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।ব্যাংকের বেশিরভাগ শাখা বন্ধ রয়েছে। এবং ব্যাংকগুলোর কোষাগার প্রায় শূন্য বলে জানা যাচ্ছে।

রাস্তায় রাস্তায় তালেবান রক্ষীদের টহল দিতে দেখা যাচ্ছে। তালেবান যদিও বলছে নিরাপত্তার স্বার্থে তারা বিভিন্ন এলাকায় টহল দিচ্ছে, কিন্তু এই টহলও মানুষের মনে ভীতি সঞ্চার করছে বলে জানাচ্ছেন লিস ডুসেট।

বিবিসি সংবাদদাতাকে একজন সংসদ সদস্য ফারজানা কোচাই বলেছেন তালেবানের শীর্ষ নেতৃত্ব জনগণকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেও মানুষ আম্বস্ত হতে পারছে না।"শীর্ষ পর্যায়ের কোন নেতার কাছ থেকে ভয়ভীতি বা হুমকি সৃষ্টিকারী কোন মন্তব্য আসছে না ঠিকই। কিন্তু তালেবান যোদ্ধারা ভীতির পরিবেশ তৈরি করছেন...এদের কেউ কেউ এমনকি আমার কাছেও অর্থ দাবি করছেন...গতকালই আমি টেলিফোন কল পেয়েছি একজন কমান্ডারের কাছ থেকে। তিনি আমার কাছে পাঁচ হাজার ডলার দাবি করেছেন।"

'বিশ্বের সাথে সুসম্পর্ক'

লিস ডুসেট জানাচ্ছেন, কাবুল বিমানবন্দরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এখন তালেবানের হাতে।আমেরিকার শেষ সামরিক বিমান কাবুল ছেড়ে যাবার পর বিমানবন্দরের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে তালেবান যোদ্ধারা। এমনকি আমেরিকান ইউনিফর্ম পরে, আমেরিকান বন্দুক নিয়ে তালেবান বিশেষ বাহিনীর সদস্যদের দেখা যাচ্ছে বিমানবন্দরের বিভিন্ন অংশে।তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ সবাইকে আশ্বস্ত করে বিমানবন্দর থেকে বার্তা দিয়েছেন।

"ইসলামিক আমিরাত অফ আফগানিস্তান গোটা বিশ্বের সাথে সুসম্পর্ক রাখতে চায়। আমেরিকাসহ বিশ্বের সব দেশের সাথে আমরা শক্তিশালী কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই।"তালেবান বলেছে আফগান জনগণকে এবং বিশ্বকে খুব শিগগিরি তারা জানাতে যাচ্ছে তাদের নতুন ইসলামিক সরকারের কাঠামো কেমন হবে, কী ধরনের আফগানিস্তান এখন তারা গড়ে তুলতে চাইছে।

অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি

ইতোমধ্যে আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ডের একজন ঊর্ধ্বতন সদস্য আমেরিকার অর্থ মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন তালেবান নেতৃত্বাধীন সরকারকে যেন তারা দেশটির জন্য সঞ্চিত তহবিলের অর্থ ব্যবহারের অনুমতি দেয়। নাহলে আফগানিস্তান অর্থনৈতিক বিপযর্য়ের ঝুঁকিতে পড়বে বলে বোর্ডের ওই কর্মকর্তা রয়টার্স বার্তা সংস্থাকে জানিয়েছেন।

তালেবান বিদ্যুত গতিতে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। কিন্তু আফগানিস্তান ব্যাংকে (ডিএবি) যে প্রায় দশ বিলিয়ন ডলার অর্থ সঞ্চিত রয়েছে, তালেবানকে তা ব্যবহারের অনুমতি এখুনি দেয়া হচ্ছে না। এই অর্থের বেশিরভাগই রয়েছে আফগানিস্তানের বাইরে।আমেরিকায় বাইডেন প্রশাসন ইতোমধ্যেই বলেছে যে, আফগান সরকারের যে পরিমাণ সম্পদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গচ্ছিত রয়েছে তা তালেবানকে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না।আইএমএফ-ও বলেছে ঋণদাতাদের সম্পদ ব্যবহারের অনুমতি তালেবানকে দেয়া হবে না।

মেরিল্যান্ডে মন্টগমারি কলেজের অর্থনীতির অধ্যাপক শাহ মেহরাবি, যিনি ২০০২ সাল থেকে ব্যাংকের একজন বোর্ড সদস্য, তিনি রয়টার্সকে বলেছেন, আফগানিস্তানের আন্তর্জাতিক সম্পদ ফ্রিজ করে দিলে বা আটকে রাখলে "দেশটি অবশ্যম্ভাবী অর্থনৈতিক এবং মানবিক সংকটের মুখে পড়বে।"

সূত্র : বিবিসি