পাটখড়ির বহুমুখী ব্যবহারেই মেহেরপুরে বাড়ছে পাটচাষ

পাটখড়ির বহুমুখী ব্যবহারেই মেহেরপুরে বাড়ছে পাটচাষ

ফাইল ছবি

একসময় জ্বালানীর বিকল্প হিসেবে পাটখড়ি ব্যবহার হতো। এখন বহুমুখী ব্যবহারে পাটকাঠি বা পাটখড়ির চাহিদা বেড়েছে। বর্তমানে একবিঘা জমিতে যেদামে পাট বিক্রি হয় তার দ্বিগুণ দামে পাটখড়ি বিক্রি হচ্ছে। পাটচাষে লোকসান হারিয়ে যাওয়ায় মেহেরপুর অঞ্চলে পাটচাষ  বাড়ছে। পাটখড়ি সংরক্ষণের আগে রাস্তার পাশে কিম্বা মাঠে অথবা উন্মুক্ত যেকোন স্থানে পাটখড়ি শুকিয়ে নেয়া হয়। কারণ পাটের চেয়ে পাটখড়ি বিক্রি হবে বেশী দামে। এজন্য এখন পাটখড়িও সংরক্ষণ করা হচ্ছে ভালো বাজার পাবার অপেক্ষায়।    

পাটখড়ির বহুমুখী ব্যবহারের কারণে মেহেরপুর জেলায় পাটের বাজার ভালো না হলেও এ অঞ্চলের মানুষ প্রতিবছর পাটচাষ করেন। জ্বালানি ছাড়াও কাগজ উৎপাদন, পাটখড়ির বেড়া, পানের বরজে বাঁশের শলার বিকল্প হিসেবে পাটখড়ি, খড়ের বিকল্প হিসেবে পাটখড়ি দিয়ে ঘরের ছাউনি, জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধির জন্য পাটচাষ, সর্বোপরি জ্বালানির চাহিদা মেটাতে সাহায্য করছে। এক বিঘা জমির পাটের পাশাপাশি পাটখড়ি বিক্রি হয়ে থাকে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায়।

পাটখড়ির বহুমুখী ব্যবহারের কারণেই এবার মেহেরপুর জেলায় এক হাজার ৫০০ হেক্টরের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে দুই হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পাটচাষ হয়। এ পাটের পাশাপাশি মেহেরপুরের দুই হাজার ৫০০ হেক্টর জমি থেকে প্রতি হেক্টরে ১০ হাজার টাকার পাটখড়ি বিক্রি হবে হিসেবে প্রায় ১৮ কোটি টাকায় পাটখড়ি পাওয়া যাবে।  

 মেহেরপুর এলাকার সোনালি আঁশ দিয়ে তৈরী হস্তশিল্পের ব্যাগ, পাপস, টেবিল ক্লথ, পর্দা ইত্যাদিরও চাহিদা আছে। সরকারিভাবে ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে তুলতে পারলে পাটের পাশাপাশি পাটখড়ির চাহিদা আরো বৃদ্ধি পাবে।  

সদর উপজেলার আমদহ গ্রামের পাটচাষি আবু হোসেন জানান, পাটখড়ি বাড়ির বেড়া হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও জমিতে বেড়া দেওয়া এবং জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয়। আরেক ব্যবসায়ী আজমত আলী জানান, পাটখড়ির বহুমুখী ব্যবহারের কারণে চাহিদা থাকায় পাটখড়ির ব্যবসা করছেন গত পাঁচ বছর ধরে। এক বিঘা জমির পাটখড়ি তিনি মানভেদে ১০ থেকে ১৫  হাজার টাকা পর্যন্ত দামে কেনেন। ফেরি করে বিক্রি করে সংসারের ব্যয়ভার মেটান। 

 মেহেরপুরের কৃষকরা পাট বিক্রি করে লাভবান না হলেও পাটখড়ি বিক্রি করে পুষিয়ে নিচ্ছেন লোকসান। কৃষকরা এক বিঘা জমির পাট বিক্রি করে যে টাকা পাচ্ছেন তার চেয়ে অনেক বেশি পাচ্ছেন পাটখড়ি বিক্রি করে।
গাংনী উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের মানিক হোসেন বলেন, চলতি বছর আমার ১০ কাঠা জমিতে পাটের আবাদ ছিল। ফলন মোটামুটি ভালোই হয়েছে। বাজারে পাটের দাম এ বছর ভালো। তবে পাটকাঠির চাহিদা থাকায় ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে।

পাট, পাটখড়ি বিক্রি করে গত কয়েক বছরের লোকসান পুষিয়ে নেয়া যাচ্ছে। বহুমুখী ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে পাটকাঠির চাহিদা। ইদানীং পাটখড়ির কদর বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা কাউকে এক আঁটি পাট দিতে চাইলেও পাটখড়ি দিতে চাচ্ছে না। পাটখড়ি আগে শুধু জ¦ালানি হিসেবে ব্যবহার হতো। তাও মূল জ্বালানি হিসাবে নয়, জ্বালানির সহযোগী হিসেবে।

পাটচাষি ফজলুল হক জানান- পাটকাঠি শুকানো হয় রোদে। এতকাল এ কাঠি ব্যবহার হতো কুঁড়েঘরের বেড়া দিতে। গ্রামীণ জীবনে আঙিনায় স্থাপিত মাটির চুলায় রান্নায় জ্বালানি খড়ির সঙ্গে এ কাঠিও থাকত। পাটকাঠি পুড়ে ছাই হওয়ার পর তা থালাবাসন মাজা, কখনও দাঁতের মাজনেও ব্যবহার হতো। পাটকাঠির এ ছাই এখন বহু মূল্যবান।

 জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন- পাটখড়ি বিক্রি করে উৎপাদন খরচের বেশী উঠে আসে। এ জন্য এই অঞ্চলের কৃষকরা আবার পাটচাষে ফিরে এসেছেন। পাট উৎপাদনের পর জলাশয়ে জাগ দিয়ে আঁশ ছাড়িয়ে নেয়ার পর সাদা রঙের যে কাঠি তা পাটখড়ি।

সূত্র: বাসস