দেড় বছর পরেও যেসব স্কুল ১২ই সেপ্টেম্বরে খুলছে না

দেড় বছর পরেও যেসব স্কুল ১২ই সেপ্টেম্বরে খুলছে না

দেড় বছর পরেও যেসব স্কুল ১২ই সেপ্টেম্বরে খুলছে না

বাংলাদেশে ১২ই সেপ্টেম্বর থেকে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত হলেও এক হাজারের মত কিন্ডারগার্টেন ও স্কুল খুলছে না।

স্কুলের শিক্ষকরা বলছেন, মূলত আর্থিক অস্বচ্ছলতা, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী সংকটের কারণেই স্কুলগুলো বন্ধ রাখতে তারা বাধ্য হচ্ছেন।সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন ব্যক্তিমালিকানাধীন এসব স্কুল নিয়ে এখনও তাদের কোন পরিকল্পনা নেই।বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার পর গত বছরের মার্চের শেষ দিকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়।সরকারের নির্দেশনা মেনে আগামীকাল (১২ই সেপ্টেম্বর) রোববার থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার কথা থাকলেও যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে না তার একটি চট্টগ্রামের ভিশন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল।

স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেন বলছেন, ২১জন শিক্ষক এবং সাড়ে চারশো শিক্ষার্থী নিয়ে তাদের স্কুল চলছিল। তবে চরম প্রতিকূল অবস্থায় পড়ে তাকে বাধ্য হতে হয়েছে স্কুলটি বন্ধ করে দিতে।

"গত বছর রোজার পর আমরা সরকারের নির্দেশ মতো অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের কাছ থেকে কোন সাড়া পায়নি। ঘর ভাড়া, গ্যাস ও কারেন্ট বিল, শিক্ষক, কর্মচারীদের বেতন- এসব কুলিয়ে উঠতে না পাড়ার কারণে ২০২১ সালে এসে আমরা স্কুলটা বন্ধ করতে বাধ্য হলাম," বলেন মি. হোসেন।বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল এবং কলেজ ঐক্য পরিষদ দাবি করছে সারা দেশে প্রায় ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুল ছিল। সেখানে প্রায় ১০ লক্ষ শিক্ষক প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থীকে পাঠদান করে আসছিল।

কিন্তু এই করোনাভাইরাসের প্রকোপে স্কুল যেমন বন্ধ হয়েছে তেমনি নতুন করে স্কুল খুলতে শিক্ষকদের মোকাবেলা করতে হচ্ছে নানা চ্যালেঞ্জ।ঢাকার পপুলার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষক আমেনা বেগম তামান্না বলছেন, স্বল্প সংখ্যাক শিক্ষক নিয়ে শুরু করলেও এখন স্কুলে শিশুদের ফিরিয়ে আনা বড় চ্যালেঞ্জ।

"আমার স্কুলের ৫০ থেকে ৬০ ভাগ স্টুডেন্ট বিভিন্ন কাজে নিজেদের নিয়োজিত করেছে। আমি নিজে ৩০টা পরিবারে গিয়েছি স্কুলে আসার জন্য তাদের অভিভাবকদের রাজি করাতে। কিন্তু তারা নিম্নবিত্ত পরিবারের। ফলে কাজ থেকে তারা আর স্কুলে ফিরবে না। এখন স্টুডেন্ট যদি না আসে তাহলে আমি স্কুল চালাবো কীভাবে!" বলেন মিজ তামান্না।

বাংলাদেশে সব কিন্ডারগার্টেন ব্যক্তিমালিকানাধীন। তাদের খরচ চলে মূলত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি দিয়ে। দীর্ঘদিন বেতন না পাওয়ায় এখন অনেক স্কুলের শিক্ষক অন্য পেশা গ্রহণ করেছেন।ঢাকার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক তকবির আহমেদ বলছেন তার স্কুলে পাঠদান করানোর মত শিক্ষক এখন আর নেই।বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল এবং কলেজ ঐক্য পরিষদ দাবি করছে ১০ হাজারের মত স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে।সংগঠনটির চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন রোববারে বোঝা যাবে কয়টা স্কুলের পাঠদান শুরু হয়।

তিনি বলেন, "যেসব স্কুল এখনো চালু আছে তাদের ঘুরে দাঁড়াতে হলে সরকারি সহযোগিতা দরকার। কিন্তু আমরা সরকারের বিভিন্ন স্তরে ঘুরে কোন আশ্বাস পাইনি। আগামীকালই বোঝা যাবে কয়টা স্কুলের তালা খোলে আরা কয়টা স্কুলের তালা বন্ধ থাকে।"ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা এবং গবেষণা ইন্সটিউটের অধ্যাপক কাজী আফরোজ জাহান আরা বলছেন এই মুর্হুতে শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফিরিয়ে আনা ছাড়া বিকল্প কোন উপায় নেই।

"অভিভাবকদের এমনভাবে বোঝাতে হবে যে, তাদের শিশুরা কাজ করে সাময়িকভাবে হয়তো টাকা পাচ্ছে। কিন্তু সেটা ভবিষ্যতে তাদের পরিবার এবং সমাজের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। ঝরে পড়া এসব শিশুরা স্কুলে ফিরে আসলে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোকে চালানো যাবে।সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে বলেছেন এখন এসব কিন্ডারগার্টেন স্কুল নিয়ে সরকারের কোন পরিকল্পনা নেই।

সূত্র  : বিবিসি