পাবনায় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নৌকার প্রার্থীর সংবাদ সম্মেলন

পাবনায় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নৌকার প্রার্থীর সংবাদ সম্মেলন

পাবনায় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নৌকার প্রার্থীর সংবাদ সম্মেলন

পাবনার সুজানগর উপজেলার ১০ ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের ১০ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করার পর নাজিরগঞ্জ ইউনিয়ন প্রার্থীর নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এলাকার সুযোগ্য, আওয়ামীলীগের নিবেদিত প্রাণ ও দক্ষতার সাথে ও সুচারুভাবে ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনা করাসহ বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে নাজিরগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস সাত্তার প্রামাণিকের পরিবর্তে ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মোঃ মশিউর রহমান খানকে দলীয় চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

একে কেন্দ্র করে সেখানে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে কিছুটা দিধাদ্বন্দ্ব দেখা দেয়ায়,  চেয়ারম্যানকে রাজাকার পুত্র বলা এবং মরহুম পিতার নামে মিথ্যা অপবাদ দেয়ায় পরিবারের পক্ষে সোমবার (১৮ অক্টোবর ) চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ মসিউর রহমান সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি খোলাসা করেন। সুজানগর উপজেলা আওয়ামীলীগ অফিসে দুপুর ১২টার দিকে চেয়ারম্যান প্রার্থী মসিউর রহমানের পরিবারের পক্ষ থেকে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মলনে চেয়ারম্যান মোঃ মশিউর রহমান বলেন, সম্প্রতি সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রথম ধাপের নির্বাচনের জন্য সময় নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কর্মকর্তারা। এই নির্বাচনে দলের মনোনায়ন প্রত্যাশী অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করে দলের মনোনায় পাওয়ার জন্য আবেদ করেন। অপ্রত্যাশীতভাবে হলেও দল এবারের নির্বাচনে আরেকজনকে প্রথম পর্যায়ে প্রার্থী ঘোষণা করেন। এই প্রার্থীতা ঘোষণার পরে আমি দলের কাছে আবেদন করেছিলান। আমি এই ইউনিয়নের দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। আমার প্রার্থীতা কেন বাতিল করা হলো সেটি জানতে চেয়েছিলাম।

দলের নীতি নির্ধারকেরা পূণরায় বিষয়টি বিবেচনা করে আমাকেই আবার নৌকা প্রতিক দিয়েছেন এবারের নির্বাচনের জন্য। একটি চক্র দলের অভ্যান্তরে থেকে কৌশল করে আমার ও আমার পারিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তারা গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন আমার পিতা শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। আর এই ষড়যন্ত্রের মূল কলকাঠি নাড়ছে কামরুজ্জান উজ¦লসহ তার গংরেরা। তিনি ছাড়া তার পরিবারের লোকজন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোক না।

আর তারাই আজ আমার ও আমার মরহুম পিতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমার পিতা ১৯৭২ সালে সংশ্লিষ্ঠ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্য তার পিতা প্রয়াত সংসদ সদস্য আহম্মেদ তফিজ উদ্দিনের সাথে নির্বাচন করেছেন। আমার পিতার নামে যে অভিযোগ করা হয়েছে আমরা পরিবারে পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। একই সাথে এই ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমি আবেদন করছি। যদি দলীয়ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয় তবে আমি আইনগত ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো বলে জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির, সুজানগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান শহিদুজ্জামান শাহিন, পৌর মেয়র রেজাউল ইসলাম রেজা, বীর মুক্তিযোদ্ধা সামসুল আলমসহ সংশ্লিষ্ঠ ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দসহ উপজেলা আওয়ামীলীগের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী এসময় উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ করা যেতে পারে, শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) রাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের নৌকার নতুন প্রার্থী হিসেবে মশিউর রহমান খানকে দলীয় মনোনয়নের চিঠি দেয়া হয়। সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ওহাব ও সাধারণ সম্পাদক শাহীনুজ্জামান বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে দ্বিতীয় ধাপে আগামী ১১ নভেম্বর সুজানগর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ৭ অক্টোবর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নে আবদুস সাত্তারসহ অন্যান্য ইউনিয়নে নৌকা মনোনীত প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রার্থী পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে নাজিরগঞ্জ ইউনিয়ন লেভেল থেকে গড়িয়ে  উপজেলায় এর প্রভাব ফেলেছে। এ নিয়ে মসিউর রহমানের ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক ও রাজনৈতিক জীবন বৃত্তান্ত নিয়ে দলের মধ্যে চলছে আলোচনা-সমালোচনা, বিক্ষোভ। কিন্তু মসিউর রহমান সংবাদ সম্মেলন করে তার সদুত্তর দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, নৌকার নতুন প্রার্থী মশিউর রহমান খান ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে একটি কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন কয়েক বছর। পরে জনগণের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করতে চাকরি ছেড়ে  দেন।

মশিউর রহমান খানের আপন ছোট ভগিনীপতি এসএম গোর্কি  দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার প্রধান ফটো সাংবাদিক হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন গত বছরের ২২ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর জ্যেষ্ঠ ফটোগ্রাফার হিসেবে নিয়োগ পেয়ে বর্তমানে সেখানেই কর্মরত রয়েছেন। তার আপন দু’বোনের মধ্যে জেসমিন আরা মৌসুমী ছিলেন ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য।

অপর বোন জিন্নাত আরা রোজী বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্টার ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুব মহিলা লীগের সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বড় ভাই আমিনুল ইসলাম খান ছিলেন অগ্রণী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বর্তমানে পাবনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সিনসা পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।আর ছোট ভাই আশিকুর রহমান সবুজ বর্তমানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপ কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এছাড়া বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নে ২৩ বছরেরর বিএনপি সমর্থিত এক চেয়ারম্যানকে নির্বাচনে পরাজিত করে মশিউর রহমান চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার পাশাপাশি বর্তমানে ইউনিয়নে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফাতেমা খাতুন জানান, নির্বাচনে মনোনয়ন দাখিলের শেষ তারিখ ১৭ অক্টোবর, ২০ অক্টোবর রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক মনোনয়নপত্র বাছাই, প্রার্থিতা প্রত্যাহার ২৬ অক্টোবর এবং নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১১ নভেম্বর।