মায়ের তুলনা কেবল মা'ই

মায়ের তুলনা কেবল মা'ই

মায়ের তুলনা কেবল মা'ই

গল্প টা পড়ে খুব ভালো লাগলো তাই সকলের সঙ্গে শেয়ার করলাম।আমার মায়ের কোনো ব্যাংক এ্যাকাউন্ট ছিল না। তোষকের নিচে টাকা রাখতো। ওটাই ছিল ব্যাংক। কোন তালা ছিল না। পাহারাদার নেই। তারপরও সব কিছু ঠিকঠাক থাকত। কেউ চুরি করতো না। না ভাইবোন, না কাজের লোক।

বাদামওয়ালা, ঝালমুড়িওয়ালা, আইসক্রিমওয়ালা এলে আমরা ছুটে যেতাম মায়ের কাছে। মা টাকা দিত। মায়ের মন ভাল থাকলে তোষকটা তুলতো। মন খারাপ হলে তুলতো না। তোষক তোলার স্পর্ধা ছিল না আমাদের। মা যেদিন তোষক তুলতো না, আমরা অনাথ ছেলেমেয়ের মত তাকিয়ে থাকতাম তোষকটার দিকে। খুব রাগ হতো। ইচ্ছে হতো তোষকটা জ্বালিয়ে দিতে। কিন্তু মায়ের রক্তচক্ষুর কাছে, আমরা অসহায়। শব্দহীন। শক্তিহীন।

তারপর আস্তে আস্তে বড় হলাম। লেখাপড়া শেষ করলাম। রোজগার শুরু হলো। মা তখনও তোষকের নিচে টাকা রাখে। একদিন অফিস থেকে বাড়ি ফিরলাম। মাকে বললাম, বাজারে যাবো। কী কী লাগবে? মা লম্বা ফর্দ লিখলো। মা জানে আমার পকেটে এখন অনেক টাকা। মাকে আর তোষক তুলতে হবে না। আমি লম্বা ফর্দ নিয়ে বাজারে যাবো, অমনি মা আমাকে থামিয়ে কাছে ডাকল। তোষকটা তুললো। ময়লা একটা ১০ টাকার নোট বের করল। আমি অবাক। মা কি আইসক্রিমের পয়সা দেবে? আমি বালক? মা হাসল, তোর কাছে তো সব ৫০০ টাকার নোট। রিক্সাওয়ালা ভাঙ্গানি দিতে পারবে না। এটা নে।

আমার কি যে আনন্দ। মা তোষক তুলেছে। টাকা দিয়েছে আমায়। আমি মাকে বললাম, তুমি এখনও তোষকের নিচে টাকা রাখ? মা তার গৌরবময় হৃদয়টা মেলে দিয়ে হাসল। বাবা, এইটাই আমার নিরাপদ ব্যাংক। আমার জীবনের বড় সার্থকতা কি জানিস? আমার কোন সন্তান চোর নয়। মা সম্পদ, খ্যাতি, আভিজাত্য কিছুই চায়নি। চেয়েছিল, তোষকের টাকাটা যাতে ঠিক থাকে। এইটুকু-ই।

পৃথিবীর সকল মা-ই ভাল থেকো। ভগবান যেন তোমাদেরকে, আরামের তোষকে শান্তিময় ঘুম দেন। এইপারে, ওইপারেও। সংগৃহীত

 

সৌজন্যেঃতনু গাঙ্গুলী