পাপদৃষ্টি যেভাবে অন্তরকে কলুষিত করে

পাপদৃষ্টি যেভাবে অন্তরকে কলুষিত করে

প্রতীকি ছবি

সুফিধারার আলেমরা বলেন, দৃষ্টি হলো অন্তরের জানালাস্বরূপ। এর মাধ্যমে বান্দা যেমন তার হৃদয় আলোকিত করতে পারে, তেমনি পারে অন্তর কলুষিত করতে। কোনো মুমিন যখন তার দৃষ্টি সংযত রাখে, তা দিয়ে আল্লাহর সৃষ্টি ও নিদর্শন দেখে, কোরআন তিলাওয়াতের মতো ইবাদত করে, তখন তার হৃদয় আলোকিত হয়। আর যখন সে দৃষ্টির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং পাপদৃষ্টিতে আসক্ত হয়, তখন তার হৃদয় পাপ-পঙ্কিলতায় ভরে যায়।

ঠিক যেভাবে কোনো ঘরের জানালায় পাল্লা না থাকলে ধুলা-বালিতে ঘর ধীরে ধীরে নোংরা হয়ে যায়। বিশেষত যখন আবহাওয়া বিরূপ হয়, ঝোড়ো হাওয়া ছাড়ে, তখন সে ঘর বসবাসের অযোগ্য হয়ে যায়। মুমিনেরও যদি নিজের দৃষ্টির ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকে, তবে পাপের প্রবল স্রোতে সে ঈমানহারা হওয়ার উপক্রম হয়।
কোরআনের তাৎপর্যময় নিদের্শনা : দৃষ্টিসংযত রাখার ব্যাপারে পবিত্র কোরআনের নির্দেশনা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আপনি মুমিনদের বলে দিন, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এতে আছে তাদের জন্য পবিত্রতা। তারা যা করে মহান আল্লাহ তা সম্পর্কে সম্যক অবগত। ’ (সুরা নুর, আয়াত : ৩০)

উল্লিখিত আয়াতে কয়েকটি লক্ষণীয় দিক হলো :

১. দৃষ্টি অবনত রাখা : আল্লাহ মুমিনদের দৃষ্টি অবনত রাখতে বলেছেন, বন্ধ রাখতে বলেননি। সুতরাং অবনত রাখার উদ্দেশ্য হলো দৃষ্টির সংযত ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং নিজের দৃষ্টির ওপর সংযম প্রতিষ্ঠা করা। আর সংযমের প্রশ্ন তখনই আসে যখন প্রলোভন থাকে, লিপ্সা থাকে। অর্থাৎ মুমিন প্রতিকূল পরিবেশ, নিজের কুপ্রবৃত্তি ও শয়তানের প্ররোচনা উপেক্ষা করে দৃষ্টি সংযত রাখবে—এটাই তার বৈশিষ্ট্য।

২. লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করা : দৃষ্টি সংযত রাখার সঙ্গে লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করার নিদের্শনা দ্বারা বোঝা যায় উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক আছে। আল্লাহপ্রেমিকরা বলেন, পাপদৃষ্টি হলো ব্যভিচারের প্রথম স্তর ও তার পথপ্রদর্শক এবং তার সর্বশেষ পর্যায় হলো অন্যায় শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়া। অসংযত দৃষ্টিই মানুষকে ধীরে ধীরে ব্যভিচারের চূড়ান্ত স্তরের দিকে নিয়ে যায়।

৩. অন্তরের পবিত্রতা : সংযত দৃষ্টি অন্তরের পবিত্রতা নিশ্চিত করে। কেননা দৃষ্টি সংযত থাকলে বান্দার অন্তর বহুবিধ পাপচিন্তা ও স্পৃহা থেকে রক্ষা পায়। আর অন্তরের পবিত্রতাই তাকে পাপমুক্ত জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করে।

৪. আল্লাহ সব দেখেন : সুফি আলেমরা বলেন, ‘আল্লাহ সব দেখেন’ এই বিশ্বাসই তাকওয়া তথা আল্লাহভীতির মূলকথা। কোনো বান্দা যদি সত্যিই এই কথা বিশ্বাস করে যে আল্লাহ তার সব কিছু দেখছেন, তবে তার পক্ষে পাপে লিপ্ত হওয়া সম্ভব নয়। তারা আরো বলেন, দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশনার সঙ্গে ‘আল্লাহ সব কিছু দেখেন’ বাক্য যুক্ত করার তাৎপর্য হলো আল্লাহর কাছ থেকে পাপদৃষ্টি আড়াল করা সম্ভব নয়। যদিও কখনো কখনো অন্য মানুষের কাছ থেকে তা আড়াল করা যায়। অন্য আয়াতে আল্লাহ আরো স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘আল্লাহ চোখগুলোর অসততা এবং অন্তর যা গোপন করে তা জানেন। ’ (সুরা গাফির, আয়াত : ১৯)