ভূমিকম্প দিয়ে আল্লাহ ধ্বংস করেছিলেন যে জাতিকে

ভূমিকম্প দিয়ে আল্লাহ ধ্বংস করেছিলেন যে জাতিকে

প্রতিকী ছবি

বর্তমান পৃথিবীতে একের পর এক বিপর্যয় ঘটেই চলেছে। কখনো ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, আবার কখনো ভূমিকম্প। এসব কিছু ঈমানদারদের জন্য আল্লাহ তায়ালার পরীক্ষা হতে পারে অথবা রবের অবাধ্যতায় লিপ্ত মানুষের জন্য সতর্কতা বার্তাও হতে পারে। 

কোরআনে বলা হয়েছে, কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ) তোমাদের ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। তুমি ধৈর্যশীলদের শুভ সংবাদ দাও, যারা তাদের ওপর বিপদ আপতিত হলে বলে, ‘আমরা তো আল্লাহরই জন্য এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৫-১৫৬)

যুগে যুগে আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন জাতিকে সতর্কবার্তা দিয়েছেন, পরীক্ষা করেছেন। সতর্কবার্তা না শুনে যারা আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে ফেরেনি তাদের কঠিন শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করেছেন তিনি। কোরআনে বিভিন্ন নবীর যুগের মানুষের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। 

ভয়ংকর ভূমিকম্পে ধ্বংস করা এক জাতির ঘটনাও বর্ণিত হয়েছে পবিত্র এই ঐশী গ্রন্থে। তার হলেন হজরত লূত আলাইহিস সালামের জাতি। এই জাতি সমকামীতার মতো বিকৃত পাপাচারে লিপ্ত ছিল, তারাই এই বিকৃত পাপের সূচনা করে। এর আগে কোনও জাতির কল্পনাতেও ছিল না এই পাপাচার।

আল্লাহ তায়ালা এই জাতিকে দিয়েছিলেন উর্বর ও শস্যে ভরপুর ভূমি। বিভিন্ন ধরণের প্রাচুর্য  ছিল তাদের মাঝে।  প্রাচুর্যময় জীবনযাত্রার সঙ্গে বেপরোয়া হয়ে ওঠে লুত (আ.)-এর জাতি।  

তারা আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত ছিল, এবং আল্লাহর নবীকে সবসময় কষ্ট দিতো। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি লূত (আ.)-কে প্রেরণ করেছিলাম। যখন তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, তোমরা চরম অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতার কাজ করছো যা তোমাদের পূর্বে সারা বিশ্বে কেউ কখনো করেনি। তোমরা কামপ্রবৃত্তি পূরণ করার জন্য মেয়েদের কাছে না গিয়ে পুরুষদের কাছে যাচ্ছ। প্রকৃতপক্ষে তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী জাতি।’ ( সূরা আ’রাফ, আয়াত, ৮০-৮১)

আল্লাহর নবী লূত আলাইহিস সালাম তাদের বারবার এই পাপাচার থেকে দূরে সরে আসতে বলেছেন, কিন্তু তারা নবীর কথা না শুনে উল্টো তাকে কষ্ট দিয়েছে। আল্লাহর নবীর বিরোধিতা করে তাদের পাপাচারে সহযোগিতা করতেন স্বয়ং লূত আ.-এর স্ত্রী। এর ফলে আল্লাহ তায়ালা একদিন প্রভাতে ভোর বেলা তাদের শক্তিশালী ভূমিকম্প দিয়ে ধ্বংস করে দেন। ভূমিকম্প এতো শক্তিশালী ছিল যে তাদের পুরো নগরটি সম্পূর্ণ উল্টে যায়। 

তাফসিরে পাওয়া যায়, হযরত জিব্রাইল (আ.), ইস্রাফিল (আ.) ও মিকাইল (আ.) সুদর্শন পুরুষের রূপ ধরে হযরত লূত (আ.) এর এলাকায় উপস্থিত হন, এবং মেহমান হন। লূত(আ.) গোপনে তাদেরকে আশ্রয় দেন, কিন্তু লূত (আঃ.) এর এক স্ত্রী এই খবর পাপাচারী সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছে দেয়।

পাপাচারী সম্প্রদায় তাদের বিকৃত রুচি চরিতার্থ করার জন্য লূত (আ.) এর বাসস্থান আক্রমণ করে। শেষ পর্যায়ে লূত (আ.) আল্লাহর কাছে দোয়া করেন তাঁর মেহমানদের সম্ভ্রম রক্ষার জন্য। তখন ফেরেশতাগণ বলে উঠেন- কোরআনের ভাষায়,

‘হে লূত (আ.)! আমরা তোমার পালনকর্তার পক্ষ হতে প্রেরিত ফেরেশতা। এরা কখনো তোমার দিকে পৌঁছাতে পারবে না। ব্যস তুমি কিছুটা রাত থাকতে থাকতে নিজের লোকজন নিয়ে বাইরে চলে যাও। আর তোমাদের কেউ যেন পিছনে ফিরে না তাকায়। কিন্তু নিশ্চয় তোমার স্ত্রীর উপরও তা আপতিত হবে, যা ওদের উপর আপতিত হবে। ভোর বেলাই তাদের প্রতিশ্রুতির সময়, ভোর কি খুব নিকটে নয়?’ ([সূরা হুদ, আয়াত, ১১)

মুফাসসিরগণ বলেন- এরপর প্রথম জিব্রাইল (আ.) তাদের সামনে আসেন এবং তাঁর ডানা দ্বারা হালকা আঘাত করেন। এতেই সকল পাপাচারী অন্ধ হয়ে যায়। এরপর জিব্রাইল (আ.) লূত(আ.) এর নিরাপদে সরে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।

এরপর ডানা দিয়ে সমগ্র সাদ্দূম নগরীকেই গোড়াসহ তুলে ফেলেন, এত উঁচুতে নিয়ে যান যে প্রথম আসমানের রক্ষী ফেরেশতারাও সাদ্দূম নগরীর কুকুর আর মোরগের ডাক শুনতে পাচ্ছিলো। ঘুমন্ত মানুষের ওপর তাদের ঘরবাড়ি আছড়ে পড়ে। পাশাপাশি আকাশ থেকে বৃষ্টির মতো কঙ্কর নিক্ষিপ্ত হতে থাকে। 

এবার পুরো জনপদকে উল্টো করে সজোরে জমিনে ধ্বসিয়ে দেওয়া হয়। এবার আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রত্যেক পাপীর নাম লেখা পাথর বর্ষণ করা হয়, এমনকি যেসব পাপী বাসিন্দা কোনো কাজে সেই নগরীর বাইরে ছিল তাদের উপরও প্রস্তর খণ্ড এসে পড়ে। এরপর আল্লাহ সে স্থানে দূষিত পানির জলাধারা প্রবাহিত করে দেন।

কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘অবশেষে আমার (আল্লাহর) আদেশ চলে আসলো, তখন আমি উক্ত জনপদকে ধ্বংস করে দিলাম এবং তাদের উপর স্তরে স্তরে পাথর বর্ষণ করলাম।’ (সূরা হুদ, আয়াত, ৮২)

ওই মহাপ্রলয়ের হাত থেকে কেউ রেহাই পায়নি। ওই জনপদের ধ্বংসাবশেষ এখনো বিদ্যমান।

লুত (আ.)-এর জাতির ধ্বংসস্থলটি বর্তমানে ‘বাহরে মাইয়েত’ বা ‘বাহরে লুত’ নামে খ্যাত। এটি ডেড সি বা মৃত সাগর নামেও পরিচিত। ফিলিস্তিন ও জর্দান নদীর মধ্যবর্তী স্থানে বিশাল অঞ্চলজুড়ে নদীর রূপ ধারণ করে আছে এটি। জায়গাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ নিচু। এর পানিতে তেলজাতীয় পদার্থ বেশি। এতে কোনো মাছ, ব্যাঙ, এমনকি কোনো জলজ প্রাণীও বেঁচে থাকতে পারে না। এ কারণেই একে ‘মৃত সাগর’ বলা হয়।