ফাইনালে মাশরাফীর সিলেট

ফাইনালে মাশরাফীর সিলেট

সংগৃহীত

ফাইনালে মাশরাফীর সিলেট, সম্ভাবনা জাগিয়েও বিদায় রংপুরের। শেষ ৩ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৩৩ রান আর হাতে ৭ উইকেট। তবে এই সমীকরণও আর মেলানো হয়নি। শেষ ৩ ওভারে মাত্র ১৩ রানেই ৫ উইকেট হারায় রংপুর। ১৮৩ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ১৬৩ রানেই থামে তাদের ইনিংস। ১৯ রানের জয় নিয়ে ফাইনালে পা রাখলো সিলেট স্ট্রাইকার্স। ১৬ ফেব্রুয়ারি বিপিএলের জমজমাট ফাইনালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মুখোমুখি হবে সিলেট স্ট্রাইকার্স।

মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর শের-ই বাংলায় দ্বিতীয় এলিমিনেটরের হাই-ভোল্টেজ ম্যাচে রংপুরকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিপিএলের ফাইনালে সিলেট।

ফাইনালের পথ সুগম করতে আগের রাতেই স্যাম বিলিংসকে উড়িয়ে আনে রংপুর রাইডার্স। তবে জ্বলে উঠতে পারেননি এই তারকা ব্যাটার, দিতে পারেননি ভরসার প্রতিদান। ওপেনিংয়ে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই ৪ বলে ১ রানে ফিরেন বিলিংস। তবে আরেক ওপেনার রনি তালুকদার ঠিকই জ্বলে উঠেন, ধারাবাহিকতা ধরে রেখে তুলে নেন এই বিপিএলে নিজের তৃতীয় ফিফটি।

এইদিন ওয়ানডাউনে আসেন শামিম পাটোয়ারী। তবে তার ইনিংসটা বড় হয়নি, ১১ বলে ১৪ রানে ফিরেন তিনি। তবে এরপরই মাঠে নেমেই খেলা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন নিকোলাস পুরান। রনির সাথে ৩৪ রানের ঝড়ো জুটি করে দলকে লড়াইয়ে রাখেন তিনি। তবে ইনিংসটা বাঁধা পড়ে জর্জে লিন্ডের অসাধারণ ক্যাচে, ১৪ বলে ৩০ রান করে আউট হন এই ক্যারিবিয়ান।

একপ্রান্ত আগলে রেখে নিজের মতো খেলতে থাকেন রনি, তাকে এই বেশ ভালো সঙ্গ দেন রাইডার্স কাপ্তান নুরুল হাসান সোহান। বলা যায় দু'জনে মিলে তিলে তিলে ম্যাচটাকে নিয়ে আসেন হাতের মুঠিতে। যখন মনে হচ্ছিল এই জুটিতেই ফাইনালে পা রাখবে রংপুর, তখনই ২৪ বলে ৩৩ রান করে ফিরেন সোহান। সেই সাথে ভাঙে রনির সাথে তার ৫৩ বলে ৮২ রানের জুটি।

খেলা ঘুরে যায় সেখানেই। সোহান প্রথম বলে ফেরার পর একই ওভারে ফেরেন রনি তালুকদারও, রান আউটের ফাঁদে পড়ে ৭ চার ২ ছক্কায় ৫২ বলে ৬৬ রানেই থামে রনির ইনিংস। তানজিম সাকিবের সেই ওভার থেকে আসে মোটে ২ রান। ফলে জয়ের জন্য শেষ ২ ওভারে রংপুরের প্রয়োজন দেখা দেয় ৩১ রান। তবে সেই সমীকরণ আরো কঠিন হয়ে উঠে লুক উডের ১৯তম ওভারে, মাত্র ৩ রান দিয়ে পর পর ২ বলে ফেরান শেখ মেহেদী ও ব্রাভোকে।

সেখানেই ম্যাচ ছিটকে যায় রংপুর, শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ২৮ রান। প্রথম ২ বলে ২ চার হাঁকিয়েও রুবেল হোসেনের পরের চারবলে আসেনি একটা রানও, বরং দাসুন শানাকাও আউট হন শেষ বলে। ৮ উইকেটে ১৬৩ রানে থামে রংপুরের ইনিংস। তিনটা উইকেট নেন উড, দুটি করে উইকেট পান তানজিম সাকিব ও রুবেল হোসেন।

এর আগে টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেটে ১৮২ রানের বড় সংগ্রহ পায় সিলেট। বড় কোনো ইনিংস না থাকলেও সম্মিলিত চেষ্টায় এই সংগ্রহ পায় তারা। সর্বোচ্চ ৪০ রান আসে নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটে।

এইদিন ব্যাট হাতে দারুণ শুরু পায় সিলেট স্ট্রাইকার্স। বড় সংগ্রহের ভিত্তি গড়ে দেয় দুই ওপেনার। নাজমুল হোসেন শান্ত ও তৌহিদ হৃদয়ের ব্যাট বিনা উইকেটে ৪৪ রান আসে পাওয়ার প্লেতে।৷ দু'জনের জুটি ভাঙে নবম ওভারে ৩০ বলে ৪০ রান করে শান্ত আউট হলে৷ অবশ্য আউট হবার আগ পর্যন্ত দারুণ ব্যাট করছিলেন তিনি। সেই সাথে ভাঙে দু'জনের ৫৩ বলে ৬৫ রানের জুটি।

রানের গতি বাড়াতে ওয়ানডাউনে নেমে আসেন মাশরাফী বিন মর্তুজা, তবে তৌহিদ হৃদয়ের সঙ্গ পাননি তিনি। পরের ওভারেই ব্রাভোকে ক্যাচ অনুশীলন করিয়ে ২৫ বলে ২৫ রান করে ফিরেন হৃদয়। আউট হবার আগে ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত একটা ক্লাবে নাম লেখান এই ব্যাটার, বিপিএল ইতিহাসের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে এক আসরে চার শতাধিক রান তার। প্রথম নামটা তারই সতীর্থ, নাজমুল হোসেন শান্ত।

এদিকে দ্রুত ব্যাট চালাতে থাকেন মাশরাফী, বাড়াতে থাকেন রানের গতি। তবে কাউকে পাননি সহকারী। ১৩ বলে ১৬ করে জাকির হাসান ও ৬ বলে ঝড়ো ১৫ রান করে আউট হন রায়ান বার্ল। ১৫.১ ওভারে দলীয় ১৩৪ রানে মাশরাফীকে ফেরান ব্রাভো, আউট হবার আগে ১৬ বলে ২৮ রানের ইনিংস খেলেন সিলেট কাপ্তান। তবে সাত নাম্বারে নেমে ইনিংস বড় করতে পারেননি মুশফিক, ফিরেন ৫ বলে মাত্র ৬ রান করে।

এরপর দলের হাল ধরেন জর্জে লিন্ডে ও থিসারা পেরেরা। দু'জনে মিলে পাল্লা দিয়ে বাড়াতে থাকেন দলীয় সংগ্রহ। তাদের দু‘জনের ২২ বলে ৩২ রানের জুটি ভাঙে থিসারা পেরেরা শেষ ওভারে ১৫ বলে ২১ করে রান আউটের ফাঁদে পড়লে। তবে লিন্ডের ২ ছক্কা আর ১ চারে ১৭ রান আসে শেষ ওভারে৷ ১০ বলে ২১ রানে অপরাজিত থাকেন এই প্রোটিয়া অলরাউন্ডার।

রংপুরের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন হাসান মাহমুদ ও দাসুন শানাকা। ১টি করে উইকেট নেন শেখ মেহেদী ও ডিজে ব্রাভো।