হজে নারীদের চুল কাটার বিধান

হজে নারীদের চুল কাটার বিধান

প্রতীকি ছবি

হজ ও ওমরার বিধানাবলির মধ্যে মাথার চুল মুণ্ডন বা কর্তন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। এটি ওয়াজিব। কারণ মাথার চুল মুণ্ডন বা কর্তন ছাড়া ইহরামের নিষেধাজ্ঞাসমূহ শেষ হয় না। ওমরায় মাথা মুণ্ডন করতে হয় সায়ি করার পর মারওয়ায়, আর হজে কোরবানির পর মিনায়। হজ ও ওমরায় মাথা মুণ্ডন বা ছাঁটান উভয়টি জায়েজ আছে। এই ইবাদত বাদ দিলে হজ বা ওমরা অনাদায়ী থেকে যাবে। 

পুরুষের জন্য মাথা মুণ্ডন বা ছাঁটান উভয়টি জায়েজ, আর নারীর ক্ষেত্রে শুধু ছাঁটান জায়েজ। আর যার মাথায় চুল নেই সে শুধু ব্লেড বা চুল কাটার মেশিন পুরো মাথায় ঘুরিয়ে নেওয়াই যথেষ্ট এবং তা ওয়াজিব। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ১/১৪৯)

নবী কারিম (স.) হজ বা ওমরা পালনাবস্থায় নারীদের জন্য মাথার চুল মুণ্ডনকে নিষেধ করেছেন। তাই নারী হাজীরা শুধু মাথার চুল কর্তন করে ইহরাম খুলে ফেলবেন। এ প্রসঙ্গে রাসুল (স.) বলেন, ‘স্ত্রীলোকের প্রতি মাথা মুণ্ডন নেই। স্ত্রীলোকের প্রতি রয়েছে মাথা ছাঁটান।’ (আবু দাউদ: ১৯৮৬)

মহিলাদের জন্য পুরো মাথা থেকে এক কর পরিমাণ (আঙুলের উপর থেকে এক গিরা) চুল ছোট করা উত্তম। তবে চার ভাগের এক ভাগ থেকে এক কর পরিমাণ চুল কাটলেও ইহরাম-মুক্ত হয়ে যাবে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- تَجْمَعُ الْمُحْرِمَةُ شَعْرَهَا ، ثُمّ تَأْخُذُ مِنْهُ قَدْرَ أُنْمُلَةٍ ‘ইহরামকারী নারী তার চুলকে একত্রিত করে সেখান থেকে এক কর পরিমাণ কাটবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা: ১৩০৬৫)

তবে কেউ যদি কেবলমাত্র মাথার এক চতুর্থাংশ পরিমাণ থেকে চুল ছোট করে, তাহলে সেক্ষেত্রে ফুকাহায়ে কেরাম এক করের চেয়ে কিছুটা বেশি ধরে কাটতে বলেছেন। যাতে ওই অংশের যে চুলগুলো তুলনামূলক ছোট, সেটাও এক কর পরিমাণ কাটা হয়ে যায়। মহিলারা চুল ঘরে বা নিজ হোটেলে এসে নিজের চুল নিজেই কেটে নিতে পারে। এতে কোনো সমস্যা নেই।

(আলমাবসুত, সারাখসি: ৪/৭০; বাদায়েউস সানায়ে: ২/৩৩০; আলবাহরুল আমিক: ৩/১৭৯৭; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/২৩৫; আদ্দুররুল মুখতার: ২/৫১৫; মানাসিক, মোল্লা আলি কারি, পৃ-২২৯)

উল্লেখ্য, পুরুষের জন্য হজ ও ওমরায় মাথা মুণ্ডন উত্তম। এমনকি মাথা মুণ্ডনকারীর জন্য বিশেষভাবে দোয়া করেছেন নবীজি (স.)। দোয়ার সময় তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি অনুগ্রহ করো যারা মাথা মুণ্ডন করেছে তাদের প্রতি। সাহাবাগণ বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! যারা মাথা ছাঁটিয়েছে তাদের প্রতিও? রাসুল বললেন, হে আল্লাহ! তুমি অনুগ্রহ কর যারা মাথা মুণ্ডন করেছে তাদের প্রতি। সাহাবাগণ বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! যারা মাথা ছাঁটিয়েছে তাদের প্রতিও? তৃতীয়বার রাসুল (স.) বললেন, যারা মাথা ছাঁটিয়েছে তাদের প্রতিও।’ (সহিহ বুখারি: ১৭৫৪; সহিহ মুসলিম: ৩২০৫)

অন্য হাদিসে আছে, ইয়াহইয়া ইবনে হুসাইন (রা.) তার দাদি থেকে বর্ণনা করেন যে, তার দাদি বলেন, ‘বিদায় হজে আমি নবী কারিম (স.)-কে মাথা মুণ্ডনকারীদের জন্য তিনবার দোয়া করতে শুনেছি, আর যারা ছাঁটিয়েছে তাদের জন্য শুধু একবার দোয়া করলেন।’ (সহিহ মুসলিম: ৩২১০)

ডান দিক থেকে মাথা মুণ্ডানো সুন্নত। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে দেখা যায়, নবীজি (স.) নাপিত ডেকে মাথার ডান দিক থেকে চুল মুণ্ডানো শুরু করলেন। (সহিহ মুসলিম: ৩২১৫)

মাথার চুল মুণ্ডন বা কর্তন—এর যেকোনো একটির মাধ্যমে ইহরামের নিষেধাজ্ঞাসমূহ শেষ হয়ে যায়। নবী কারিম (স.) কখনও মাথার চুল কর্তন করার মাধ্যমেও হালাল হয়েছেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমাকে আমিরে মুয়াবিয়া (রা.) বলেছেন, আমি কাঁচি দ্বারা নবী কারিম (স.)-এর মাথা ছাঁটিয়ে ছিলাম মারওয়ার নিকটে। (সহিহ মুসলিম: ৩০৮১)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হজ ওমরার নানা বিধি-বিধানসহ শরিয়তের সকল বিধান সুন্নত অনুযায়ী পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।