মাছে ঘুরল ভাগ্যের চাকা

মাছে ঘুরল ভাগ্যের চাকা

মাছ চাষ

দেশজুড়ে মাছ চাষিদের বেশির ভাগই রুই, কাতলা, পাঙ্গাশ অথবা তেলাপিয়া চাষ করছেন। দ্রুত বর্ধনশীল এসব মাছ থেকে স্বল্প সময়ে মুনাফাও পাওয়া যায়। কিন্তু দেশি জাতের বিলুপ্তপ্রায় মাছগুলোর দিকে অনেকেরই নজর নেই। ভিন্ন চিন্তা করেন যশোরের কে এম ফিরোজ মামুন। তিনি চাষ শুরু করেন পাবদা, শিং, মাগুর আর গুলশার। তাঁর সফলতা দেখে অনেকে এসব মাছ চাষে ঝুঁকছেন।

যশোরের শার্শা উপজেলায় মাছ চাষ করে পাঁচ হাজার পরিবারে সুদিন এসেছে। আর এতে কর্মসংস্থান হয়েছে ৫০ হাজার মানুষের। উপজেলার মাছের চাহিদা মেটানোর পর দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে এখানকার মাছ। স্থানীয় উদ্যোগের ফলে তৈরি হয়েছে উপজেলা পর্যায়ে দেশের প্রথম ফরমালিনমুক্ত মাছের বাজার।

শার্শার বড় বসন্তপুর গ্রামের ফিরোজ মামুন ২০০৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ ডিগ্রি অর্জনের পর একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরি নেন। কর্মক্ষেত্র ছিল ময়মনসিংহের ত্রিশাল। সেখানে মাছ চাষ দেখে এ ব্যাপারে হাতে-কলমে শিক্ষা নেন। চাকরি ছেড়ে ২০১০ সাল থেকে নিজ গ্রামে মাছ চাষ শুরু করেন। শুরুতে কিছুটা সমস্যায় পড়লেও বছর শেষে সুফল পেতে শুরু করেন। বর্তমানে ১৫ বিঘা জলকরের চারটি পুকুরে মাছ চাষ করছেন। চারটি পুকুরে মাছ ছাড়া থেকে শুরু করে তাঁর খাদ্য, ওষুধ ও তদারকিতে গত বছর খরচ হয়েছে প্রায় ১২ লাখ টাকা। তবে মাছ বিক্রি করে পেয়েছেন প্রায় ২৩ লাখ টাকা। বছর শেষে মুনাফা আসে প্রায় ১১ লাখ টাকা।

ফিরোজ বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে উপজেলা মৎস্য বিভাগের দেওয়া গুলশা মাছের একটি প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে পাবদা, শিং, মাগুর ও গুলশা মাছের চাষ করছি। বিলুপ্তপ্রায় এসব মাছের চাষ করে আজ আমি সফল।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে খাদ্য ও পুষ্টির জন্য ওষুধের প্রয়োজন। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির কম্পানি ভেজাল খাদ্য ও নিম্নমানের ওষুধ বাজারে ছেড়েছে। আমরা ওই সব ভেজাল জিনিস কিনে প্রতারিত হচ্ছি। সরকার যদি প্রশাসনিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তবে মাছ চাষ বন্ধ হয়ে যাবে।’

শার্শা উপজেলার ১৫টি বাঁওড়, ২৭১টি ঘের, ১০টি বিল ও ছয় হাজার ৬১৯টি পুকুর মিলে ছয় হাজার ২৩৯ হেক্টর জলাশয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে এই মাছ চাষ করা হচ্ছে বলে জানান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল হাসান।

তিনি বলেন, এখানে চাহিদার তিন গুণ বেশি মাছ উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতিবছর মাছের চাহিদা সাত হাজার ৫৭২ মেট্রিক টন। আর উৎপাদিত হয় ২২ হাজার ৪৮৫ মেট্রিক টন। মাছ চাষ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, পরিবহন ও বিপণনে ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে সাড়ে পাঁচ হাজার পরিবার।