এক চাপেই ৪২ রিপোর্ট: চিকিৎসার নামে অভিনব প্রতারণা মালিক গ্রেপ্তার

২৩ অক্টোবর, ২০২০

চিকিৎসার নামে প্রতারণাচক্রের হোতাকে পুলিশ আটক করেছে। এক পরীক্ষায় সব রোগ নির্ণয়কারী প্রতিষ্ঠানটির মালিক ও চেয়ারম্যান এম এ আকবর দীর্ঘদিন ধরে ইউনি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান খুলে অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে আসছিলেন। মেশিন ছুঁলেই অর্থাৎ মেশিনে হাত রাখা মাত্রই শরীরের বিভিন্ন রোগের অর্থাৎ কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ ৪২ স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট দেয়া হয়। এভাবে ধোকা দিয়ে নিরীহ মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক এম এ আকবর। রিপোর্টের সাথে সাথেই চিকিৎসাপত্র হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে লোক বুঝে পাঁচ হাজার থেকে দশ/বার হাজার টাকার ওষুধ।
 
তবে এ ধরণের পরীক্ষার ব্যাপারে পাবনা সিভিল সার্জন ডাঃ মেহেদী ইকবালের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এ ধরণের পরীক্ষার ব্যাপারে আমার কোন ধ্যান ধারণা নেই। ইউনি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস নামে কোন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কে জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ অবগত নয়। আইন বহির্ভূত কর্মকান্ডের বিষয়ে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক ডাঃ সালেহ মোহম্মাদ আলী জানান, একবারের স্পর্ষের দ্বারা ৪২টি পরীক্ষার এমন কোন মেশিন আছে বলে আমার জানা নেই, বিষয়টি অবাস্তব। ল্যাবরেটরি পরীক্ষা ছাড়া রক্ত ও মন্তিষ্কের পরীক্ষা করা কী সম্ভব!

পরিবার পরিকল্পনার সাবেক উপ পরিচালক ডাঃ রাম দুলাল ভৌমিক বলেন, এক ছুঁয়াতোই ৪২ স্বাস্থ্য রিপোর্ট। কত বড় ছলচাতুরি, এর কোন বাস্তবতা নেই, এটা সম্পূর্ণভুয়াগিরী।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, পাবনা মেডিকেল কলেজের একজন অধ্যাপক জানান , ইউনিওয়ার্ল্ড সার্ভিস লিমিটেডের পরিক্ষার রিপট আমি দেখেছি। পৃথিবীর কোনো দেশেই এখনও পর্যন্ত এ ধরণের ম্যাসিন ব্যবহার হয় নি । এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও প্রতারণা। পরীক্ষা সম্পর্কে আমার জানা নেই।

দীর্ঘদিনের অভিঙ্গতাসম্পূর্ণ রেডিওগ্রাফার  মোঃ নাজিম উদ্দিন বললেন,“ এক চাপেই বা এক ছুঁয়াতেই ৪২ স্বাস্থ্য রিপোর্ট এই প্রথম শুনলাম। কী আজব কাহিনী!” ইউনি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস লিমিটেড’ নামের অনুমোদনহীন এ প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ দিন যাবৎ মানুষের সাথে ধাপ্পাবাজি প্রতারণা করে একদিকে যেমন বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন অপরদিকে পরীক্ষার নামে মানুষকে আরো অসুস্থ্য করে  দিয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে,  পাবনা পৌরসভাধীন আকবর হোসেন কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে পাবনা সদর থানার পাশে  একটি আটতলা ভবনের চারতলার তিনটি ফ্লাট ভাড়া নিয়ে ইউনি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস লিমিটেড নামে এই প্রতারণার ফাঁদ পাতেন। স্থানীয় একটি দাখিল মাদ্রাসা থেকে এসএসসি সমমান পরীক্ষায় পাশ করে নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে ইউনানী ও অ্যালোপেথিক পদ্ধতির চিকিৎসাও দেন আকবর। আকর্ষণীয় বেতনের লোভ দেখিয়ে বহু নারী পুরুষের কাছ থেকে জামানত নিয়ে নিয়োগ দেয় এ প্রতিষ্ঠানটি।

ইউনি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের একজন মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কর্তৃপক্ষের উপর বিশ্বাস যে কয়জনকে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে এসেছিলাম; তারা কেওই সুস্থ্য হননি। অথচ ওই রোগীদের কাছ থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত পরীক্ষার নামে নেয়া হয়েছে। এখন আমি তাদের নানা প্রশ্নের সম্মুখীন।

অনেক স্বাস্থ্যকর্মীর সন্দেহ হওয়ায় চাকরি ছাড়ার সিন্ধান্তও নেন বলে তারা জানান। তারা অভিযোগ করেন, বকেয়া বেতন চাইলে কর্তৃপক্ষ নানা টালবাহানা শুরু করে। বিষয়টি জানাজানি হলে পুলিশ ইউনি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস লিমিটেডের মালিক ও চেয়ারম্যান এম এ আকবরকে আটক করে। 

পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা নাসিম আহমেদ আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গণমাধ্যমকর্মী ও ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে আমরা বুধবার রাতে ইউনি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের অফিসে অভিযান চালাই। সে সময় প্রতিষ্ঠানের মালিক এম এ আকবর স্বাস্থ্যসেবা প্রদান কিংবা পরীক্ষার কোন অনুমোদনপত্র দেখাতে ব্যর্থ হন। তিনি মাদ্রাসা থেকে এসএসসি সমমান পরীক্ষায় পাশ করে কিভাবে নামের আগে ডাক্তার লিখে চিকিৎসা দিচ্ছেন তারও সদুত্তর দিতে পারেননি। প্রাথমিক ভাবে আমাদের কাছে প্রতিষ্ঠানটি ভুয়া ও প্রতারক চক্রের কাজ বলে মনে হয়েছে। বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের পর আমরা প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেব।

এদিকে, বৃহস্পতিবার বিকেলে এ ঘটনায় সদর থানার এস আই জহরুল ইসলাম বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ও স্বাস্থ্যকর্মী জাকির হোসেন বাদী হয়ে সদর থানায় প্রতারণা মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলায় এম এ আকবরকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত এম এ আকবরকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। 

এখন প্রশ্ন হলো-কী করে স্বাস্থ্য বিভাগের চোখকে ফাঁকি দিয়ে খোদ জেলা শহরে তাও আবার থানার পাশেই কোন অনুমোদন ছাড়ায় চিকিৎসার নামে দীর্ঘদিন ধরে অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে আসছিল ইউনি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস লিমিটেড নামের এ প্রতিষ্ঠানটি?