০৫ ডিসেম্বর, ২০২০
সাধারণত মেরুদণ্ডের ঠিক শেষ মাথায় (পায়ুপথের ঠিক উপরে) দুইবাটকের এর মাঝখানের কক্সিবোনে প্রদাহ বা আঘাত থেকে যে ব্যথা অনুভূত হয়, তাকে কক্সিডাইনিয়া বা টেলবোন ব্যথা বলে। অনেকক্ষণ বসে থাকলে বা শক্ত জায়গায় (রিক্সায়) বসে থাকার কারণে মেরুদণ্ডের শেষ মাথায় চাপ পড়ে ব্যথার অনুভূত হয়। টেইলবোন বা মেরুদণ্ডের শেষ হাড়ের ব্যথা সাধারণত পুরুষের চেয়ে মহিলাদের ৫ গুণ বেশি হয়।
কারণ : এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে কারণ জানা নেই। তবে আঘাত, বিশেষ করে পেছনের দিকে পড়ে গেলে এমনটা হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে প্রদাহ থাকলেও হতে পারে। প্রসবের সময় আঘাত বা প্রলোং ডেলিভারি হলে, অনেক সময় সার্জারির কারণেও হতে পারে। মিসএলাইনড, শক্ত বা লম্বা ককসিসের কারণেও এমনটা হয়। এছাড়া পেশির সংকোচন, পাইলোনাইডাল সাইনাস, পাইলোনাইডাল সিস্ট, মেনিসকাল সিস্ট, রিপিটেটিভ স্ট্রেইন যেমন দীর্ঘক্ষণ মোটর বা বাইসাইকেল চালানোর ফলেও এ ব্যথা হতে পারে। ইনফেকশন, ক্যালসিয়াম ডিপসিশন এবং টিউমারও এটার কারণ হতে পারে।
লক্ষণ : বসার সময় বা বসার পর ব্যথা অনুভূত হয়। দীর্ঘক্ষণ বসলে ব্যথা বেড়ে যায়। শক্ত জায়গায় বসা যায় না। কখনও বসা থেকে দাঁড়াতে গেলে ব্যথা হয়। আবার কখনও নরম জায়গায় বসলেও ব্যথা হয়। পেছনে হেলান দিয়ে বসলে বেশি ব্যথা হয় কিন্তু সামনে ঝুঁকে বসলে ব্যথা কম হয়। গভীর ব্যথা হয় ককসিসের আশপাশে। রিকশায় বসলে হাতে ভর দিয়ে কোমর আলগা করে রাখতে হয়। মলত্যাগ করার সময় বা আগে ব্যথা হয়। এর কারণে সহবাসের সময়ও ব্যথা হতে পারে।
ব্যথা লাঘবে করণীয়:
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ব্যথা নাশক ঔষধের পাশাপাশি একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন ধরনের স্ট্রেচিং ও বলকারক ব্যয়াম ও কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলার মাধ্যমে খুব অল্পসময়ে কক্সিডাইনিয়ার ব্যথা কমানো সম্ভব।
কিছু ব্যয়াম:
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে পাইরোফরমিস, ইলিওসোয়াস মাংসপেশির স্ট্রেচিং ব্যয়ামের মাধ্যমে কক্সিডাইনিয়া বা টেলবোন ব্যথায় অনেক উপকারে আসে।
সিঙ্গেল লেগ নি হাগ: বিছানায় সোজা হয়ে শুয়ে এক পায়ের হাঁটু ভাজ করে যতটুকু সম্ভব বুক স্পর্শ করতে হবে। প্রয়োজনে এখানে হাতের সাহায্য নিতে হবে। ৩০ সেকেন্ড এভাবে ধরে রাখতে হবে, এরপর আস্তে আস্তে পা ছেড়ে দিতে হবে। এভাবে অন্য পাশ ও করতে হবে। এটি ২-৩ বেলা ৫-১০ বার করে করতে পারেন।
নিলিং সোয়াস স্ট্রেস: মেঝেতে হাঁটু গেড়ে শুরু করুন। এবার এক হাঁটু ভাজ করে সামনের দিকে নিয়ে যান এবং অপর হাঁটুর উপর ভর করে বসুন। এবং আপনার হাত যে হাটু ভাজ করে সামনের দিকে এগিয়েছেন তার উপরে রাখুন। আপনার পিঠটি সোজা করে আপনার কোমরটি সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান। ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ডের জন্য ধরে রাখুন। এবং আবার কোমরটি আগের পজিশনে নিয়ে যান। একইভাবে অন্যপাশ করুন।
হাফ স্কোয়াটিং: প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে তারপরে হাঁটু ভাজ করে ধীরে ধীরে বসার ভঙ্গি করুন, পুরোপুরি বসবেন না, আধা বসা অবস্থায় থাকবেন। ৩০-৬০ সেকেন্ড বিশ্রাম নিন, এরপর আবার দাঁড়ান। এটি দিনে ১০-১৫ বার করে ২ বেলা করতে পারেন।
মেহেরুন নেসা
ফিজিওথেরাপি ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ