২৩ অক্টোবর, ২০২৫
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) এক ছাত্রের বিরুদ্ধে গোসলরত অবস্থায় আরেক ছাত্রের ভিডিও ধারণের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত শিক্ষার্থী চুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কৌশল বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৌম্য দাস।
জানা যায়, গত ১৪ অক্টোবর (মঙ্গলবার) চুয়েটের মুক্তিযুদ্ধা হলের এস ব্লকের ৫ম তলার গোসলখানায় ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থীর গোসলরত অবস্থায় ভিডিও ধারণ করে সৌম্য। সেসময় গোসলরত শিক্ষার্থী ওপরের দিকে তাকালে সৌম্যের মোবাইল দেখতে পান ও তাকে হাতেনাতে পাকড়াও করেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি যখন তাকে ভিডিও করতে দেখি, তখন ও পাশের বাথরুমে ছিল। আমি সঙ্গে সঙ্গে বের হয়ে তার দরজা ধাক্কাতে থাকি। তার দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। একটু পর সে দরজা খুললে আমি তার ফোন কেড়ে নিই ও তাকে ধরে আমার রুমের সামনে নিয়ে যাই।
সেখান থেকে আমরা হলের বড় ভাইদের বিষয়টি অবহিত করি।’
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সৌম্যকে তৎক্ষণাৎ জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে ঘটনা অস্বীকার করে। কিন্তু উপস্থিত শিক্ষার্থীরা তার মোবাইল তদন্ত করলে তার মোবাইলের গুগল ড্রাইভে ভিডিওটির ১০টি কপি পাওয়া যায়। সেসময় মুক্তিযোদ্ধা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. বিপুল চন্দ্র মণ্ডলের কাছে সৌম্যকে নিয়ে যাওয়া হয়।
জানা যায়, সৌম্যর টেলিগ্রাম অ্যাপে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অসামাজিক, অশালীন ও সমকামী গ্রুপের অ্যাডমিন হিসেবে তাকে দেখতে পান এবং শয়তান উপাসনার গ্রুপের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় বলে তারা জানান।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে একজন, চুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী মাহাদি রাব্বানি বলেন, আমরা তার মোবাইল অনুসন্ধান করলে দেখতে পাই, সে সমকামিতা সংক্রান্ত গ্রুপের সঙ্গে জড়িত এবং অনেক গ্রুপের এডমিন সে নিজেই। পাশাপাশি সে শয়তান উপাসনার গ্রুপেও যুক্ত ছিল।
এ ঘটনার পর চুয়েটের মুক্তিযোদ্ধা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. বিপুল চন্দ্র মণ্ডল সৌম্যকে শহীদ তারেক হুদা (তার নিজ হল) হলের তৎকালীন প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. নিপু কুমার দাসের কাছে সোপর্দ করেন। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তার মোবাইল জব্দ করে তাকে তার বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে জানা যায়।
এমন একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার ৮ দিন পরেও কেন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চুয়েটের ছাত্রকল্যাণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোক্তার হোসাইন বলেন, বিষয়টি প্রাথমিকভাবে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ তারেক হুদা হলের প্রভোস্টদেরই দেখার কথা ছিল। কিন্তু তারা আমাদেরকে আজ লিখিতভাবে জানিয়েছেন। আমরা শিগগিরই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
মুক্তিযোদ্ধা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. বিপুল চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘আমরা আজকে ছাত্রকল্যাণ অধিদপ্তরের পরিচালক বরাবর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন দিয়েছি। আমরা তার দোষ প্রমাণিত বলেই উল্লেখ করেছি ও তার শাস্তির দাবি রেখেছি।’
অধ্যাপক ড. নিপু কুমার দাস ঘটনা সম্পর্কে বলেন, ঘটনাটি ঘটার পর আমি ওই শিক্ষার্থীকে নিয়ে আসি। জানতে পারি, সে আমার হলে সংযুক্ত অবস্থায় ছিল। তার বাসা চট্টগ্রাম শহরে। তাকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ও তার মোবাইল জব্দ করা হয়। আমি এ ঘটনা সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থী সৌম্যের সঙ্গে কালের কণ্ঠ প্রতিনিধি কথা বললে সে তার ওপর প্রদত্ত সব অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে এবং বলে, ‘আমি মোবাইলটা ওপরে রেখেছিলাম এবং হয়তো পানি বা ঘাম লেগে ভিডিও অন হয়ে গেছে। আমি ইচ্ছাকৃত করিনি।’ তার মোবাইলে প্রাপ্ত প্রমাণাদির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে সে উত্তর না দিয়েই ফোন কেটে দেয় ও মোবাইল বন্ধ করে ফেলে।
উল্লেখিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার (২২ অক্টোবর) দিনগত রাত ১২টায় সৌম্যের বিচারের ৩ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন চুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের ৩ দফা দাবি হচ্ছে, সৌম্যের মোবাইলের ফরেনসিক টেস্ট করতে হবে, তার ছাত্রত্ব বাতিল করে আজীবন বহিষ্কার করতে হবে ও চুয়েট প্রশাসনকে বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। শিক্ষার্থীরা এ দাবিগুলো বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রশাসনকে ১ দিনের আলটিমেটাম দেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা সৌম্যকে চুয়েট ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।