০১ নভেম্বর, ২০২৫
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (বাকসু) নির্বাচনের দাবিতে ‘বাকসু ডায়ালগ’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) দ্বিতীয় তলায় আলোচনাটি শুরু হয়। চার ঘন্টাব্যাপী আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করে অবিলম্বে বাকসু নির্বাচনের দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে বাকৃবি শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির, বাকৃবি সলিডারিটি সোসাইটি, বাকৃবি সাংবাদিক সমিতি, বাকৃবি দ্বীনি কমিটি ও গ্রীণ ভয়েসসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। তবে 'বাকসু ডায়ালগ' এ অংশ নেয়নি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফন্টসহ আরও একাধিক ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠন।
মুক্ত আলোচনায় বক্তারা শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্ক, প্রশাসনের ভূমিকা, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা, খাবারের মান, এবং নেতৃত্বের শূন্যতা নিয়ে খোলামেলা মতামত প্রকাশ করেন। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে দ্রুত বাকসু নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান তারা। পাশাপাশি বাকসু নির্বাচনের দাবি পূরণে সকল ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
আলোচনার শুরুতে বাকৃবি শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের দপ্তর সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, 'শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি তুলে ধরার এবং প্রশাসনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার একমাত্র প্ল্যাটফর্ম হতে পারে বাকসু। ক্ষমতার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে এবং শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্ক পুনর্গঠনের জন্য দ্রুত বাকসু নির্বাচন দিতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, “বাকসু না দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের পরিপন্থী। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানাক— বাকসুর আইনকে সম্মান জানিয়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হোক। অধিকার কেউ দেয় না, অধিকার আদায় করে নিতে হয়।”
পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থী এহসানুল হিমেল বলেন, “আমাদের সমস্যাগুলো সবাই জানে, কিন্তু সমাধানের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নেই। প্রশাসনের পদক্ষেপগুলোও ধীরগতির। তাই দ্রুত সমস্যা সমাধানের জন্য কার্যকর ছাত্র সংসদ দরকার।”
মেয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জাবিন তাসনীম বলেন, “ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন ব্যর্থ। যৌন হয়রানির ঘটনার বিচার প্রক্রিয়া ধীর এবং অনির্দিষ্ট। যদি বাকসু থাকতো, এসব সমস্যার দ্রুত ও কার্যকর সমাধান সম্ভব হতো।”
দ্বীনি কমিটির প্রতিনিধি মারুফ বিল্লাহ বলেন, “শিক্ষার্থীরা যখন কোনো দাবি নিয়ে শিক্ষকদের কাছে যায়, তখন প্রশ্ন করা হয়— তুমি কে? বাকসু থাকলে শিক্ষার্থীরা প্রতিনিধি হয়ে কথা বলার সুযোগ পেত। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় ছাত্রদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হতো।”
আলোচনার শেষভাগে বাকৃবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি আবু নাছির ত্বোহা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের খাবারের মান নিম্নমানের, অথচ আমরা পুষ্টিবিদ তৈরির প্রতিষ্ঠান। প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণে শিক্ষার্থীরা আজও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। শিক্ষার্থীদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখনই কার্যকর ছাত্র সংসদ গঠন সময়ের দাবি।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের বোনদের রাস্তায় নেমে নিরাপত্তা দাবি করতে হচ্ছে— এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। প্রশাসনের ব্যর্থতা এর স্পষ্ট প্রমাণ।”