আফ্রিকার দেশগুলোতে সামরিক অভ্যুত্থান বাড়ছে?

০২ জুন, ২০২১

স্বাধীনতার পর থেকেই আফ্রিকার দেশগুলোতে নিয়মিতভাবে ক্যু বা সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে আসছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী তার ক্ষমতা ব্যবহার করছে, মালির সাম্প্রতিক অভ্যুত্থান তারই সর্ব-সম্প্রতি উদাহরণ। ওই দেশে এক বছরের মধ্যে দু'বার সেনা অভ্যুত্থান ঘটেছে।

প্রতিবেশী দেশ নাইজারে নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানের আগে একটি ক্যু'র প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়া হয়েছে।

তাহলে প্রশ্ন : আফ্রিকায় সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনা কি বাড়ছে?

ক্যু বা সামরিক অভ্যুত্থান আসলে কী?
এর একটি সংজ্ঞা হচ্ছে, সামরিক বাহিনী (বেসামরিক কর্মকর্তাদের সাহায্যে) অবৈধভাবে ও প্রকাশ্যে কোনো ক্ষমতাসীন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা।

যুক্তরাষ্ট্রের দু'জন গবেষক জনাথান পাওয়েল ও ক্লেটন থাইন দেখতে পেয়েছেন ১৯৫০-এর পর থেকে আফ্রিকার দেশগুলোতে ২০০ বারেরও বেশি ক্যু'র প্রচেষ্টা ঘটেছে।

এদের মধ্যে অর্ধেক সফল হয়েছে, অর্থাৎ এসব প্রচেষ্টা অন্তত সাত দিন স্থায়ী ছিল।

এর মধ্যে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বারকিনা ফাসোতে সবচেয়ে বেশি সফল অভ্যুত্থান ঘটেছে। ওই দেশে সাতটি ক্যু'র মধ্যে মাত্র একটি ব্যর্থ হয়েছে।

কোনো কোনো সময় অভ্যুত্থানকারীরা নিজেরা একে অভ্যুত্থান বলতে রাজি হয় না।

যেমন, জিম্বাবুয়েতে ২০১৭ সালে যে সেনা অভ্যুত্থান ঘটেছিল তার মাধ্যমে রবার্ট মুগাবের ৩৭-বছরের শাসনের অবসান ঘটে।

এই ক্যু'র এক নেতা মেজর জেনারেল সিবুসিসো ময়ো ওই সময় টেলিভিশনে পর্দায় পুরোপুরিভাবে সামরিক অভ্যুত্থানের কথা অস্বীকার করেন।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে চাদ-এর নেতা ইদ্রিস ডেবি'র মৃত্যু হলে সেনাবাহিনী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে তার ছেলেকে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট পদে বসিয়ে দেয়। তার বিরোধীরা একে 'পরিবারতন্ত্রের ক্যু' বলে বর্ণনা করেছে।

'বৈধতা পাওয়ার জন্য অভ্যুত্থানের নেতারা তাদের এসব কাজকে তারা অভ্যুত্থান বলতে নারাজ,' বলছেন জনাথান পাওয়েল।

আফ্রিকায় অভ্যুত্থানের সংখ্যা কী বেড়েছে, না কমেছে?
উনিশশো ষাট থেকে ২০০০ পর্যন্ত চার দশকে আফ্রিকায় অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সংখ্যা আশ্চর্যজনকভাবে একই ছিল - গড়ে প্রতি বছর চারটি করে।

এরপর থেকে এই সংখ্যা কমতে শুরু করে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত দুই দশকে সেনাবাহিনীর ক্যু'র সংখ্যা ছিল প্রতিবছর গড়ে দুটি করে।

স্বাধীনতার পর থেকে আফ্রিকার দেশগুলোতে যে অস্থিতিশীল পরিবেশ ছিল সে কারণে এধরনের অভ্যুত্থান অস্বাভাবিক না বলে জনাথান পাওয়েল বলছেন।

"আফ্রিকার যেসব দেশে অভ্যুত্থান ঘটেছে সেগুলোর অবস্থার মধ্যে মিল রয়েছে - দারিদ্র, দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থা ইত্যাদি। কোনো দেশে যখন একবার সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে, ওই দেশে এটা বার বার ঘটতে থাকে।"

এব্যাপারে সুদান রয়েছে সবার আগে। ওই দেশে মোট ১৫টি সেনা অভ্যুত্থান ঘটেছে - যার মধ্যে পাঁচটি ক্যু ছিল সফল।

সুদানে সর্বশেষ অভ্যুত্থানের ঘটনাটি ঘটেছে ২০১৯ সালে। দীর্ঘ গণআন্দোলনের পর এই অভ্যুত্থানে ওমর আল-বশিরের সরকারের পতন ঘটে।

বশির অবশ্য নিজেও ১৯৮৯ সালে সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়েই ক্ষমতায় এসেছিলেন।

তবে ২০১৫ সালের পর থেকে সারা বিশ্বে যে ক'টি সেনা অভ্যুত্থান ঘটেছে, দুটি বাদে তার সবই ঘটেছে আফ্রিকার দেশগুলিতে। শুধু তুরস্ক (২০১৬ সালে) এবং মিয়ানমারের (২০২১) ক্যু ছিল আফ্রিকার বাইরে।

সার্বিকভাবে যেকোনো মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে আফ্রিকাতে।

এর পরের সারিতে রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো। ওই অঞ্চলে মোট ৯৫টি ক্যু'র প্রচেষ্টা হয়েছে, তার মধ্যে ৪০টি ছিল সফল। -বিবিসি