০৬ নভেম্বর, ২০২১
মফস্বল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন নিয়ে শহরের কোন কোচিং-এ পড়তে আসে একজন শিক্ষার্থী যখন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পেয়ে হতাশায় দিগ্বিদিক। কেবল তখনি তার জীবন একটা ট্রাজেডিতে পরিনত হয়।
যেসকল মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বুকভরা আশা নিয়ে একটু বেশি পড়াশোনার উদ্দেশ্যে শহরে একটি ভালো কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়। এবং নানা প্রতিকূলতার ফাঁদে পড়ে কোথাও ভর্তি হতে পারে না। তাদের কোচিং পরবর্তী জীবন নিয়ে কোন লেখক যদি লিখত তাহলে শতশত উপন্যাস লিখতে পারত।
ভর্তিচ্ছু এসকল শিক্ষার্থীরা যখন কোন কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয় অপার সম্ভাবনার কথা ভেবে, মূলত তখনই তাদের মধ্যে নেমে আসে সবথেকে বেশি হতাশা। সবসময় তাদের মাথায় ঘুরতে থাকা বাবার ঘাম ঝরানো টাকা। মনে হতে থাকে যদি চান্স না হয় কোথায় যাব? অনেক সময় ছোট ভাই-বোনেরা ফোন দিয়ে বলে- 'ভাইয়া! তোমার চান্স পাওয়ার পর তোমার ক্যাম্পাসে ঘুরতে নিয়ে যাবা'। কিন্তু যখনি কোন ভালো বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অন্তত একটা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ হয় না, বাস্তবতার সমীপে তখন সেই ছোট্ট ছোট্ট স্বপ্নসমূহ এক এক করে ভাঙা কাঁচের টুকরো হয়ে উঠে।
একরাশ স্বপ্ন নিয়ে কোচিং করতে আসা শিক্ষার্থী নিজেই নিজের ভিতরে পুড়তে থাকে চুপচাপ। না পারে কাউকে বলতে, না পারে সইতে। দীর্ঘ সময় পড়াশোনার পর দিনশেষে চেপে বসে চরম হতাশা। চোখের সামনে ভাসতে থাকে মা-বাবা, ছোট ভাই-বোনদের চেহারা। কখনো কখনো নিজেকে বুঝানোই দায় হয়ে পড়ে।
একজন মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত খুব কমই স্বপ্ন দেখে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। কারণ তার পরিবারের পক্ষে তাকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর সক্ষমতা থাকে না। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়'ই তার একমাত্র স্বপ্ন এবং এর পেছনে তার শ্রম, মেধা ব্যয় করে।
সম্প্রতি শেষ হয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। যারা সুযোগ পেয়েছে তাদের অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি যারা কোথাও ভর্তির সুযোগ পায়নি তাদের পাশেও দাঁড়ান। একজন শিক্ষার্থী যে দীর্ঘ পড়াশোনার পরও চান্স পায়নি, সে তার ভিতরে শেষ হয়ে যায়। ভয় পায় বাড়িতে মা-বাবার মুখোমুখি হতে। ভয় পায় সমাজকে, ভয়ে এবং লজ্জায় আশেপাশের সবার সামনে মুখোমুখি হতে চায় না। এসময় নিজেদের কথা এবং হতাশা শেয়ার করতে পারে এমন মানুষ খুব কমই থাকে। তাই যারা চান্স পায়নি তারা ঝড়ে পড়ার আগেই তাদের পাশে দাড়ান।
রুদ্র ইকবাল
শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়