গভীর সমুদ্রে ধাতু উত্তোলন জীবজগতের জন্য হুমকি

১২ মে, ২০২২

গভীর সমুদ্রের জন্য কে আইনকানুন স্থির করে? আন্তর্জাতিক সমুদ্রতল কর্তৃপক্ষ নামের জাতিসংঘের এক সংগঠন সেই দায়িত্ব পালন করে৷ ১৯৯৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ১৬৭টি দেশ গভীর সমুদ্রে খনন নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল৷এখনো পর্যন্ত সেই কর্তৃপক্ষ খনন নয়, শুধু পলিমেটালিক নডিউল নিয়ে গবেষণার অনুমতি দিয়েছে৷

এক জার্মান গবেষণা প্রকল্পের আওতায় বেশ কয়েক বছর ধরে ডিপ সি মাইনিং-এর প্রভাব জানার চেষ্টা চলছে৷ জিওমার রিসার্চ সেন্টার ও মাক্স প্লাংক ইনস্টিউট ফর মেরিন মাইক্রোবায়োলজি সেই প্রকল্পে অংশ নিয়েছে৷

বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, যে সমুদ্রতলের জীবজগতের জন্য নডিউলগুলি অনেক প্রাণীর আবাস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ গবেষক হিসেবে তানিয়া স্ট্রাটমান বলেন, ‘‘আমরা দেখেছি, যে এই ম্যাংগানিজ নডিউলের সঙ্গে অনেক জীব যুক্ত থাকে৷ যেমন অনেকটা টিউলিপ ফুলের মতো দেখতে গ্লাস স্পঞ্জ৷ লম্বা শুঁড় ও মূল শরীর এমন নডিউলের গায়ে গা লাগিয়ে বড় হয়৷ নডিউলে নানা প্রজাতি আশ্রয় নেয়৷’’

এই গবেষণা প্রকল্পে সমুদ্রতলে কয়েক বর্গ মিটার জুড়ে খননের প্রভাব সিমুলেশন করা হয়েছে৷ বড় আকারে বাণিজ্যিক খননের মাত্রা অবশ্য একেবারেই ভিন্ন হবে৷ ‘মাইনিং ইমপ্যাক্ট' প্রকল্পের মাটিয়াস হেকেল বলেন, ‘‘প্রতি বছর কয়েক হাজার বর্গ কিলোমিটার ধ্বংস হতে পারে৷ সমুদ্রতল থেকে পাঁচ থেকে ১০ সেন্টিমিটার উপরের সক্রিয় প্রাণী ও উদ্ভিদ জগত সম্পূর্ণ মুছে যাবে ও ধ্বংস হয়ে যাবে৷ সেখানেই মূল প্রভাব ঘটবে৷ সেই এলাকায় যে কোনো ধরনের পুনর্গঠন বা উদ্ধারের জন্য হাজার হাজার বছর সময় লাগবে৷''

যন্ত্র কাজে লাগালে গভীর সমুদ্রের অনেক মাইক্রো অরগ্যানিজম ও প্রাণী নষ্ট বা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে৷ এমনকি ছোট আকারের গবেষণা প্রকল্পের কারণেও সেখানকার পরিবেশ বদলে গেছে৷ তানিয়া স্ট্রাটমান বলেন, ‘‘আমরা দেখলাম, যে এমনকি ২৫ বছরেরও বেশি সময়ে আমাদের বিশ্লেষণ করা বেশিরভাগ ক্ষেত্র পুরোপুরি ধাক্কা সামলে উঠতে পারে নি৷ ফলে নডিউল উধাও হবার পর এমনকি যে সব অংশ সামলে উঠতে পারবে, সেগুলির কয়েক দশক বা কয়েক শতাব্দী সময় লাগতে পারে, আদৌ যদি তা সম্ভব হয়৷''মাইনিং শুরু হলে এমনকি মহাসাগরের জটিল খাদ্য শৃঙ্খলায়ও বিঘ্ন ঘটতে পারে৷

তাহলে কি ডিপ সি মাইনিং টেকসই করে তোলার কোনো উপায় রয়েছে? মাটিয়াস হেকেল মনে করেন, ‘‘নতুন করে গড়ে ওঠে না বলে টেকসই নয়৷ বিষয়টি এতই সহজ৷ আমার মতে, সমাজ হিসেবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যে সেটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য কি না৷''

সত্যি এক উভয় সংকট বটে৷ গভীর সমুদ্রের নডিউল যদি নাগালের বাইরে থাকে, তাহলে আরও নির্মল জ্বালানি উৎপাদন করার জন্য ধাতু কোথা থেকে আসবে?

প্রথমত, হাতে যা আছে সেগুলির পুনর্ব্যবহার একটা পথ৷ ব্যাটারি ও অন্যান্য ডিভাইস থেকে দামী ধাতু বার করে নিতে হবে৷ বেশ কয়েকটি কোম্পানি সেই রিসাইক্লিং প্রক্রিয়া আরও উন্নত করার উদ্যোগ নিচ্ছে৷ সেইসঙ্গে আমরা ভোগ কমিয়ে দামী ধাতুভরা ডিভাইসগুলি আরও দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করতে পারি৷

সূত্র : ডয়চে ভেলে