কাউকে ধরে বেঁধে নির্বাচনে আনব না : সিইসি

০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, প্রতিটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থাকলে ভোট সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হবে। কাউকে আমরা ধরে বেঁধে ভোটে আনব না। সেই দায়িত্বও আমাদের না।সোমবার নির্বাচন ভবনে নিজ দফতরে তিনি এসব কথা বলেন।

হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। সক্রিয় অংশগ্রহণমূলক চাই। ঢিমেতালে নয়। সক্রিয় প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হলে ভারসাম্য সৃষ্টি হয়। পার্টিরাই সারাবিশ্বে এই ভারসাম্য সৃষ্টি করে। সকলের প্রতি আন্তরিকভাবে উদাত্ত আহ্বান থাকবে আপনারা আসেন, সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখেন ও সহায়তা করেন।

সিইসি বলেন, বিএনপি অন্যতম প্রধান দল। তারা যদি অংশগ্রহণ করে তাহলে নির্বাচনটা অধিক অংশগ্রহণমূলক হবে। এখন বিএনপির যে রাজনৈতিক কৌশল, আমরা কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের কৌশলের ওপর হস্তক্ষেপ করবো না, করতে পারি না, সে এখতিয়ার আমাদের নেই। এখন বিএনপি যেটা চাচ্ছে, সে ব্যাপারে আমাদের কোনো রকম বাধা নেই। কিন্তু আমাদের ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত রয়েছে, সে দায়িত্বের পথে আমরা এগিয়ে যাব। কালকে যদি আমাকে উচ্ছেদ করে দেন, সেটার জন্য আমি তো মর্মাহত হবো না।

তিনি বলেন, আজকে দুটি দলের সাথে সংলাপ হলো। এই অর্থে সংলাপ শেষ হলো। সিদ্ধান্ত গ্রহণে যাতে সহায়ক হয় সেজন্যই সংলাপ করেছি। সংলাপ করে আমরা লিখিত আকারে সিদ্ধান্ত জানিয়েছি তাদের। ইভিএম নিয়েও বৈঠক করেছি। ইভিএম নিয়েও একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। আমরা আমাদের নিজস্ব বিবেচনায় দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে ৩০০, ১০০, ১০ বা ২০টা নয়, আমরা একটা যৌক্তিকভাবে ব্যালট পেপারে ১৫০ আসন ও দেড় শ’ আসনে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাদের লিখিত বক্তব্য আছে। সেগুলোও পর্যালোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনেকে বিশ্বাস করেন, অনেকে করেন না এই মেশিন নিয়ে। তবে আমাদের সিদ্ধান্ত আদৌ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে কিনা; সেটা নির্ভর করবে এটা পাওয়া যাবে কিনা, তার ওপর। কারণ, এটার বেশিরভাগ পার্টস আসবে বিদেশ থেকে।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা শুধু দলকে নয়, সরকারকেও সংলাপ থেকে আসা মতামত জানিয়েছি। কেননা, দলগুলো কী বলছে তা সরকারেরও জানা উচিত। সরকার কিন্তু কোনো দলের নয়। সেই বিভাজনটাকে মাথায় রেখে আমরা সরকারকে জানিয়েছি।

অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় বিরোধী দলগুলো। সেটি রাজনৈতিক দলগুলোকে জানিয়েছে ইসি। ভোটার তালিকা আগামী বছর মার্চ মাসে চূড়ান্তভাবে প্রকাশ করা হবে। রোডম্যাপ সপ্তাহ দুই সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্তভাবে অবহিত করতে পারবে নির্বাচন কমিশন।

ইভিএম নিয়েও ইসি খুঁটিনাটি কাজ করছে। ইভিএমের মধ্যে ওই ধরণের কারচুপি, কার্ডের মাধ্যমে ভোট সম্ভব কিনা খতিয়ে দেখছে কমিশন। কারচুপির বিষয় কিন্তু পাওয়া যায়নি। ব্যক্তি শনাক্তকরণের পর আঙ্গুলের ছাপ দিলেই ছবি ভেসে আসবে। এরপর ব্যালট ওপেন হবে। ৪০ সেকেন্ড থাকবে। এর মধ্যেই ভোট দিতে হবে বলে জানান সিইসি।

তিনি বলেন, ইভিএমে ভোট নেয়ার ক্ষেত্রে একটা অসুবিধা কেউ কেউ লক্ষ্য করেছেন, যে একজন লোক বুথে যদি দাঁড়িয়ে থাকে। তিনি যদি ভোটারকে বলেন- আপনি যান, ভোটটা আমি দিয়ে দেব। সেই সঙ্কটের বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে। এজন্য আমরা সিসিটিভি ক্যামেরা দেব। আমরা কঠিন দায়িত্ব অর্পণ করবো প্রিজাইডিং কর্মকর্তার ওপর। কেউ যদি বৈধ বা অবৈধভাবে ভোট বাধাগ্রস্ত করে তবে তাৎক্ষণিক ভোট বন্ধ করে ওই লোককে বের করে দেবেন। তিনি না পারলে পুলিশ ডেকে বের করে দেবেন। তিনিও পারলেন না, পুলিশও পারলেন না, তাহলে ভোট বন্ধ করে দেবেন। এছাড়া প্রিজাইডিং কর্মকর্তা যদি মাস্তানকে যদি অ্যালাউ করেন; তবে শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছি।

এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, নতুন প্রকল্পে ইভিএম সংরক্ষণের ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে। এটা আমাদের প্ল্যান। প্রকল্প যদি অনুমোদন হয়, বাস্তবায়ন যদি করতে না পারি তবে ব্যালটে নির্বাচন করবো।

দলগুলোর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ইসি একা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারবে না। দলগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। ইসির ওপর ছেড়ে দিলে একারপক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে, যদিও আমরা চেষ্টা করবো।