চীনফেরত শিক্ষার্থী নিয়ে রংপুর মেডিকেলে তোলপাড়

০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

চীনফেরত এক শিক্ষার্থীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর সেখানে তোলপাড় চলছে। শ্বাসকষ্ট ও বুকব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এই শিক্ষার্থীকে হাসপাতালের নবগঠিত করোনা ইউনিটের আইসোলেশন ওয়ার্ডে নিয়ে রাখা হয়েছে। যদিও তার জ্বর, সর্দি, কাশির মতো ভাইরাসজনিত সাধারণ উপসর্গ নেই, তারপরও মেডিকেল কর্তৃপক্ষ তাকে নিয়ে একের পর এক বৈঠক করছে।

তারা ঢাকায় রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনিস্টিটিউট বা আইইডিসিআরকে খবর দিয়েছেন এবং আইইডিসিআর শনিবারেই রংপুরে প্রতিনিধি পাঠিয়ে ছাত্রটির রক্ত, লালা আর ঘামের নমুনা পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করে ঢাকায় আনিয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল এখনো পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে আইইডিসিআর-এর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা অবশ্য বলেছেন, ছাত্রটির শারিরীক অবস্থা এখন ভালো আছে।

তবে ছাত্রটির করোনাভাইরাস হয়েছে সন্দেহে এরই মধ্যে একধরণের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে রংপুরে। অনেকেই শিক্ষার্থীটির ব্যাপারে খোঁজ নিতে হাসপাতালের আশপাশে এসে ভিড় জমাচ্ছেন। টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে, করোনা ইউনিটের সামনে শহরের সব সাংবাদিকেরা এসে ভিড় জমিয়েছেন।

করোনা ইউনিট:

হাসপাতালটির চিকিৎসকদের দেখা গেছে, জীবানু প্রতিরোধী বিশেষ পোশাক, মুখোশ, চশমা আর দস্তানা পরে কাজ করছেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, ঐ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসায় সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সম্প্রতি রংপুর মেডিকেল কলেজে করোনা ইউনিট খোলা হয়। হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডের দুটি বেডকে আলাদা করে এ ইউনিট বানানো হয়েছে। সেখানে কাজ করার জন্য চার সদস্যের একটি বিশেষ চিকিৎসক দলও গঠন করা হয়েছে। রোববার সকালে ছাত্রটির চিকিৎসায় মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ ১২ সদস্যের বোর্ড গঠন করেছে বলে কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন।

ছাত্রটি সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে:

মেডিকেল বোর্ড প্রধান রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক দেবেন্দ্র নাথ সরকার বলেছেন, রোগীর শরীরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার কোন লক্ষণ নাই, তবে এক ধরণের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে হাসপাতালের রোগী থেকে সবার মধ্যে।

‘যদিও সাবধানতা হিসেবে সব ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, কিন্তু তার শরীরে আমরা এখনো পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার কোন লক্ষণ পাইনি। এরমধ্যে আইইডিসিআর গতকাল (শনিবার) ঢাকা থেকে এসে তার রক্ত, লালা আর ঘামের নমুনা নিয়ে গেছে। তারা আগামী দুইদিনের মধ্যে মানে মঙ্গলবারের মধ্যে রিপোর্ট দেবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এখনো উদ্বেগের কিছু দেখছি না আমরা।’

অধ্যাপক সরকার বলেন, শ্বাসকষ্ট নিয়ে শনিবার দুপুরে হাসপাতালে ভর্তি হন ঐ শিক্ষার্থী। এরপর তাকে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আইসোলেশন ওয়ার্ডে নেয়া হয়।

২৯শে জানুয়ারি চীন থেকে ফেরেন ওই শিক্ষার্থী। চীনে একদফা এবং ঢাকায় বিমানবন্দরে আরেকদফা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় তার। এরপর নীলফামারীতে নিজ বাড়িতে ফেরেন তিনি। চীন থেকে ফেরার আটদিন পর তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। শ্বাসকষ্ট শুরুর তিনদিন পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ছাত্রটির বাবার সঙ্গে কথা হয়েছে বিবিসির, তিনি বলেন, শ্বাসকষ্ট শুরু হবার পরেও তিনি ছেলেকে হাসাপাতালে নেননি, কারণ তার আশঙ্কা ছিল এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে পারে অন্যদের মধ্যে।

‘একপর্যায়ে ছেলে বলে, আমি মারা যাওয়ার পরে হাসপাতালে নেবে আমাকে? তখন নীলফামারির সিভিল সার্জনের সাথে পরামর্শ করে তাকে রংপুর মেডিকেলে নিয়ে ভর্তি করি।’

এদিকে বিভিন্নভাবে ছাত্রটির পরিচয় প্রকাশ হয়ে পড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি করোনাভাইরাস নিয়ে প্রতিদিনের সংবাদ সম্মেলনে রোগীর ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন,‘সন্দেহজনক বা পরীক্ষাধীন এমন ব্যক্তির গোপনীয়তা বজায় রাখা প্রয়োজন। তা নাহলে ভবিষ্যতে রোগী সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হতে পারেন।’

তিনি আরো বলেন,‘আমরা তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি, তার ফলাফল এলে আমরা জানিয়ে দেব।’ সূত্র : বিবিসি।